Tara

টিচার দেবযানীও, বন্দুক ছেড়ে মাধ্যমিকে পাঁচ-পাঁচটি লেটার মাওবাদী নেত্রীর

জুন মাসে রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় বসেন মাওবাদী নেত্রী। বৃহস্পতিবার পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। আর সেখানে সাতটি বিষয়ের মধ্যে পাঁচটিতে লেটার নিয়ে ৫৭৯ নম্বর পেয়েছেন জেল সুপারের ‘মেয়ে’ বলে পরিচিত তারা।

Advertisement

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:০৯
Share:

তারার তারা প্রাপ্তি! মাধ্যমিকে ৮৩ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন ঠাকুরমণি মুর্মু ওরফে তারা।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরের সাঁকরাইলের ওসি অপহরণ, শিলদার ইএফআর ক্যাম্পে হামলা-সহ একাধিক মামলায় অভিযুক্ত ঠাকুরমণি ওরফে তারা। একদা মাওবাদী স্কোয়াড নেত্রী।

বছর দেড়েক আগে দমদম জেলে আসেন তারা। আর সেই সময় থেকে ছোটখাটো নানা বিষয় প্রায়শই অভিযোগ করতেন তিনি। তাঁর অভিযোগে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে জেল কর্তৃপক্ষকে। এই পরিস্থিতিতে তারার মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। একদা বিভিন্ন আগেয়াস্ত্র ধরা হাতেই তুলি তুলে নেন তারা। এ বিষয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সাহায্য করেছিল।

Advertisement

কয়েক দিনের মধ্যেই পরিবর্তন আসে একদা শালবনি স্কোয়াডের মাওবাদী নেত্রীর মধ্যে। সেখান থেকে গানের দলে নাম লেখানোর জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবদার করেন বিনপুরের দহিজুড়ির কুসুমডাঙার বাসিন্দা তারা। সাঁওতালি ভাষার গানও শুরু করেন তিনি। ছবি আঁকা-গানের পাশাপাশি নাচেও আগ্রহ প্রকাশ করেন মাওবাদীদের মিলিটারি কমিশনের রাজ্য সম্পাদক মনসারাম হেমব্রম ওরফে বিকাশের স্ত্রী। পুলিশের খাতায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ দম্পতি হিসাবে পরিচিত ছিলেন বিকাশ-তারা।

একদা যিনি সারাক্ষণ অভিযোগ করতেন জেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে, তিনি আচমকাই বোমা-বন্দুক-গুলিকে অতীত করে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করেন। তাঁকে নিয়মিত পড়াতে শুরু করেন জেলের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ লিলি পোদ্দার। পাশাপাশি, সারদা-কাণ্ডের অভিযুক্ত দেবযানী মুখোপাধ্যায়, মধুবৃতা, রিনার মতো বন্দিরাও তারাকে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনায় সাহায্য করেন। আর সে ক্ষেত্রে বাধ্য ছাত্রীর মতো হোমওয়ার্ক করতে থাকেন তারা। এমনকি, মধ্যরাতেও তারার সেলে আলো জ্বলত। কারণ, সেই সময়ে পড়াশোনা করতেন তিনি।

জুন মাসে রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় বসেন মাওবাদী নেত্রী। বৃহস্পতিবার পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। আর সেখানে সাতটি বিষয়ের মধ্যে পাঁচটিতে লেটার নিয়ে ৫৭৯ নম্বর পেয়েছেন জেল সুপারের ‘মেয়ে’ বলে পরিচিত তারা। জেলের অন্দরে সুপার দেবাশিস চক্রবর্তীকে তারা বাবা বলে ডাকেন বলে কারা দফতর সূত্রে খবর। সে প্রসঙ্গে দেবাশিস বলেন, ‘‘মানুষের ভিতরে খিদে থাকে। আমার মেয়ে ঠাকুরমণি তার খিদেটা সুন্দর ভাবে প্রস্ফুটিত করেছে।’’ আর কয়েক দিনের মধ্যেই উচ্চ মাধ্যমিকের প্রস্তুতিও শুরু করবেন তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন