মাওবাদী পোস্টারে আক্রমণ মমতাকেও

আবার সেই সাদা কাগজে লাল কালির লিখন। ফের মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার মিলল জঙ্গলমহলে। সোমবার পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির কয়েকটি তল্লাটে দেওয়া ওই সব পোস্টারে আক্রমণ করা হয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঘমুণ্ডি শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৫
Share:

বাঘমুণ্ডিতে উদ্ধার হওয়া মাওবাদী পোস্টার। — নিজস্ব চিত্র।

আবার সেই সাদা কাগজে লাল কালির লিখন। ফের মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার মিলল জঙ্গলমহলে। সোমবার পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির কয়েকটি তল্লাটে দেওয়া ওই সব পোস্টারে আক্রমণ করা হয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে জঙ্গলমহলের কোনও এক জায়গায় একসঙ্গে এত পোস্টার আগে কখনও দেখা যায়নি বলে পুলিশ সূত্রের দাবি।

Advertisement

আজ, মঙ্গলবার থেকে মাওবাদীরা ‘শহিদ সপ্তাহ’ পালনের ডাক দিয়েছে। তার আগে এই পোস্টার মেলায় উদ্বিগ্ন পুলিশ ও যৌথ বাহিনী। পোস্টার দেখে গোয়েন্দাদের ধারণা, মাওবাদীরা যেমন নতুন নতুন এলাকায় পোস্টার দিয়ে সংগঠনের বিস্তারের কথা জনতাকে জানাতে চাইছে, তেমনই তারা প্রচারে রাজনৈতিক ঝাঁঝও বাড়াচ্ছে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘কারা পোস্টারগুলো দিয়েছে তা জানতে তদন্ত করছি।’’

এ দিনের পোস্টারগুলির মধ্যে একটির বক্তব্য, ‘ক্ষমতার নাটক চলবে না, জঙ্গলমহল মানবে না’। কোনওটিতে লেখা ছিল— ‘মমতাদিদি কাদের সহযোগিতায় মুখ্যমন্ত্রী হলেন? জবাব চাই, জবাব দাও’। কোনওটায় লেখা, ‘ছত্রধর মাহাতোকে সাজা দিলেন কেন, মুখ্যমন্ত্রী জবাব দাও’। এমনকী, একটি পোস্টারে লেখা, ‘এই অন্যায়ের তোমায় জবাব দিতেই হবে, না হলে মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়তে হবে’।

Advertisement

অথচ, ২০১১-র গোড়ায় বিবৃতি দিয়ে মাওবাদী শীর্ষ নেতা কিষেণজিই জানিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখতে চান। পুরুলিয়ার মাওবাদী নেতা বিক্রমও একাধিক বিবৃতিতে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-লালগড় আন্দোলনে তৃণমূলের সঙ্গে মাওবাদীরা সহযোগিতা করেছিল বলে দাবি করেন। সে সময়ে বামেরা তৃণমূল-মাওবাদী আঁতাঁতের অভিযোগে সরব হন। কিন্তু কিষেণজির মৃত্যুর পরে এবং তৃণমূল সরকার জঙ্গলমহলে একাধিক উন্নয়ন-প্রকল্প চালু করার দৌলতে সে প্রসঙ্গ ধামাচাপা পড়ে যায়।

রাজ্যের মন্ত্রী তথা পুরুলিয়ার জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে জঙ্গমহলে যে ধারাবাহিক উন্নয়ন চলছে, সেটা কেউ কেউ ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তা হতে দেব না।’’

রবিবারই বাঁকুড়ার বারিকুল থানার অদূরে কয়েকটি মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার মেলে। তার আগে এই দফায় মাওবাদী-পোস্টার প্রথম পাওয়া যায় পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়িতে। গত ১৭ জুলাই বেলপাহাড়িরই এক সভায় তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, মাওবাদী শীর্ষ নেতা কিষেণজিকে হত্যা করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তার পর থেকে এই নিয়ে জঙ্গলমহলের তিন জেলার তিনটি এলাকায় মাওবাদী পোস্টার মিলল।

বাঘমুণ্ডি-বলরামপুর রাস্তার ধারে এ দিন ভুচুংডি মোড়, টাইগার মোড়, মাঠা ও ধনুডি মোড় থেকে বহু পোস্টার মেলে। বাড়ি বা গ্যারাজের দেওয়ালে, দোকানের গায়ে, এমনকী, মাটিতে পাথর চাপা অবস্থায় কিছু পোস্টার ছিল। কয়েকটিতে আবার ‘যৌথবাহিনী হঠাও, জঙ্গলমহল বাঁচাও’, ‘পুলিশের দালালি বন্ধ না করলে শাস্তি পেতে হবে’—এই মর্মে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। বলরামপুর-বাঘমুণ্ডি রাস্তার দিগারডি মোড়ের পুলিশ ক্যাম্প নিয়ে আপত্তিও করা হয়েছে।

বলরামপুর থেকে বাঘমুণ্ডি পর্যন্ত জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যাওয়া রাস্তার এক দিকে অযোধ্যা পাহাড়, অন্য দিকে কিছুটা এগোলেই ঝাড়খণ্ড। গত বছর চারেক ধরে জঙ্গলমহলে মাওবাদী কার্যকলাপ এক রকম বন্ধ থাকলেও ঝাড়খণ্ড থেকে অযোধ্যা পাহাড় পর্যন্ত মাওবাদীদের নিয়মিত আনাগোনা যে বন্ধ করা যায়নি, সে কথা পুলিশ ও গোয়েন্দা অফিসাররা এবং শাসক দলের নেতাদের একাংশ ঘনিষ্ঠ মহলে খোলাখুলি স্বীকার করেছেন।

তা ছাড়া, জঙ্গলমহলের উত্তপ্ত সময়ে বাঘমুণ্ডি বরাবরই মাওবাদী-নাশকতার নিরিখে প্রথম সারিতে থাকা নাম। এ দিন যে সব তল্লাটে পোস্টার মিলেছে, সেখানে এক সময়ে মাওবাদীদের ঘাঁটি ছিল। মাঠাবুরু বনবাংলো মাওবাদীরা আগুন লাগিয়ে পুড়িয়েও দিয়েছিল।

পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের সাম্প্রতিক গতিবিধির কথাও অজানা নয় পুলিশ বা গোয়েন্দাদের। মাঠা থেকে জঙ্গলের রাস্তায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে, বাঘমুণ্ডিরই পারডি-চিরুগোড়া গ্রামের বাসিন্দারা সম্প্রতি শাঁখা ও বাঁকা নদীর উপরে নিজেরাই চাঁদা তুলে বাঁশের সাঁকো বেঁধেছেন। গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, সাধারণ মানুষকে সামনে রেখে ওই উদ্যোগের পিছনে মাওবাদীদের মদত আছে। তার কিছু দিন আগে বলরামপুরের উরমা স্টেশনের কেবিনম্যান জঙ্গলের দিক থেকে বিস্ফোরণের মতো শব্দ শুনেছিলেন। জঙ্গলে মাওবাদীরা সেই বিস্ফোরণ ঘটায় বলে পুলিশের একাংশের দাবি। তা ছাড়া, কিছু দিন আগে ছত্রধর মাহাতোকে আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার অব্যবহিত পরে পুরুলিয়ার আড়শার কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে কয়েকটি মাওবাদী পোস্টার মেলে, যেখানে জঙ্গলমহলে বন্‌ধ ডাকা হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন