মার্কশিট ভুলে ভরা, বলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত রিপোর্ট

বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৪-র পার্ট ১ ও ২’র ফল দেরিতে প্রকাশ, মার্কশিটে ভুল-সহ বিভিন্ন অভিযোগে পড়ুয়ারা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। ফল প্রকাশে গোলমাল নিয়ে মুখ খুলতে গিয়ে অশান্তি পাকানোর অভিযোগে গ্রেফতারও হয়েছিলেন ছ’জন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হোক কলরব’-এর আদলে ‘হোক প্রতিবাদ’ নাম দিয়ে আন্দোলনে নামেন বর্ধমানের বিভিন্ন কলেজের পড়ুয়ারা।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:৪১
Share:

বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৪-র পার্ট ১ ও ২’র ফল দেরিতে প্রকাশ, মার্কশিটে ভুল-সহ বিভিন্ন অভিযোগে পড়ুয়ারা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। ফল প্রকাশে গোলমাল নিয়ে মুখ খুলতে গিয়ে অশান্তি পাকানোর অভিযোগে গ্রেফতারও হয়েছিলেন ছ’জন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হোক কলরব’-এর আদলে ‘হোক প্রতিবাদ’ নাম দিয়ে আন্দোলনে নামেন বর্ধমানের বিভিন্ন কলেজের পড়ুয়ারা। আন্দোলনের জেরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে গঠন করা হয় বিশেষ তদন্ত কমিটি। সম্প্রতি সেই কমিটির প্রকাশ করা তদন্ত রিপোর্টে পড়ুয়াদের অভিযোগের সারবত্তার প্রমাণ মিলল।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ফলপ্রকাশে গোলমাল খতিয়ে দেখতে ২০১৫-র মার্চে বৈঠকে বসে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল। সেখানেই তৈরি হয় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি। কমিটির সম্পাদক হন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজসমূহের পরিদর্শক তথা ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ামক সুজিতকুমার চৌধুরী। কমিটিতে আরও ছিলেন, স্নাতকোত্তর কলা বিভাগের ডিন সমীরকুমার দাস, পশ্চিমবঙ্গ কলেজ সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন সদস্য সিদ্ধার্থ মজুমদার, এক্সিকিউটিভের কাউন্সিলের সদস্য তথা গুসকরা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ স্বপনকুমার পান। জানা গিয়েছে, তদন্তে পরীক্ষা নিয়ামকের দফতরের বিভিন্ন নথিপত্র, বেশ কয়েকটি মার্কশিট, উত্তরপত্র-সহ প্রায় ৫১টি নথি খতিয়ে দেখা হয়েছে। তৎকালীন পরীক্ষা নিয়ামক দীপককুমার সোম-ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন কর্তা-ব্যক্তিদের সঙ্গে কথাও বলেন কমিটির সদস্যরা।

মার্কশিটের বেশ কয়েকটি ভুল রিপোর্টে চিহ্নিত করা হয়েছে। দেখা গিয়েছে, মোট নম্বরের জায়গায় ভুল লেখা রয়েছে। প্রায় ১ লক্ষ মার্কশিটে ‘এক্সামিনেশন’ বানানে ভুল রয়েছে। এ ছাড়াও পরীক্ষার্থীর নাম, বিষয় ও প্রাপ্ত নম্বর— সবকিছুর মধ্যেই অসঙ্গতি ধরা পড়েছে কমিটির সদস্যদের রিপোর্টে। শুধু তাই নয়, বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের পরিপন্থী মার্কশিটও এসেছে। যেমন, যে সব বিষয়ে ব্যবহারিক (প্র্যাকটিক্যাল) ও লিখিত পরীক্ষা রয়েছে, সে ক্ষেত্রে দু’টি বিষয়েই পাস নম্বর পেতে হয়। কিন্তু বেশ কয়েকটি মার্কশিটে মোট নম্বরের উপর ভিত্তি করে কৃতকার্য লেখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, রিপোর্টে বলা হয়েছে, পাস নম্বর পাওয়া কিছু পরীক্ষার্থীর মার্কশিটে ‘ফেল’ লেখা রয়েছে। আবার উল্টোটাও হয়েছে। যদিও গোটা বিষয়টি প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তৎকালীন পরীক্ষা নিয়ামক দীপকবাবু বলেন, ‘‘আমি এখন আর ওই দায়িত্বে নেই। তাই কোনও মন্তব্য করব না।’’

Advertisement

ফল প্রকাশে অনিয়মেরও উল্লেখ রয়েছে রিপোর্টে। সেখানে দেখা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক কমিটির কাছে দাবি করেছেন, নিয়ামকের দফতর থেকে মার্কশিট প্রস্তুতকারী সংস্থার কাছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার পরীক্ষার্থীর ‘নম্বর বাড়ানোর’ জন্য আবেদন যায়। মার্কশিট দেওয়া হলের দেখা যায়, বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে প্রাপ্ত নম্বরের জায়গায় বর্ধিত নম্বর রয়েছে।

রিপোর্টে ফলপ্রকাশে গোলমালের দায় মার্কশিট তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপরেই চাপানো হয়েছে। ফলপ্রকাশের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি বলেও রিপোর্টে জানানো হয়েছে। প্রযুক্তিগত সমস্যাও ফলপ্রকাশে গোলমালের অন্যতম কারণ বলে রিপোর্টে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ফল প্রকাশে বিলম্বের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পরীক্ষকদের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা যায়নি। উত্তরপত্র বিতরণের ক্ষেত্রেও সমস্যা ছিল। পার্ট ২ পরীক্ষার ক্ষেত্রে অ্যাডমিট কার্ড নিয়েও সমস্যায় পড়েন পড়ুয়ারা।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে মঙ্গলবার জানানো হয়, ফল প্রকাশে গোলমাল এড়াতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ করা হয়েছে। উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার বলেন, ‘‘তদন্ত-রিপোর্ট পেয়েছি। সেখানে প্রস্তাবিত বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ কার্যকরও করা হয়েছে।’’ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, কমিটির প্রস্তাব মতো অ্যাডমিট কার্ডের আবেদন এ বার থেকে অনলাইনে হবে। রেজিস্ট্রেশনও অনলাইনে হবে। প্রয়োজনে, পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্রের ফটোকপিও দেখানো হবে। ২০১৪-র মার্কশিট প্রস্তুতকারী সংস্থাকেও ইতিমধ্যে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর। তা ছাড়া বর্তমান সংস্থার কাজকর্মের তত্ত্বাবধানের জন্য নিয়োগ করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রযুক্তিবিদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দফতর ও মার্কশিট প্রস্তুতকারী সংস্থার মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপও করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন