অনাদরে মরবে কেন, দম্পতি উদ্যোগী ওদের নির্বীজকরণে

এত জটিলতা তৈরিই হত না, যদি ঠিক পদ্ধতিতে কুকুরের নির্বীজকরণ করা যেত। কলকাতায় সরকারি ভাবে তেমন ব্যবস্থা নেই।

Advertisement

ঊর্মি নাথ

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৫৫
Share:

কুকুরের নির্বীজকরণ করছেন পশুচিকিৎসক। —নিজস্ব চিত্র।

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৬টি কুকুরছানার মৃত্যু নিয়ে চর্চা চলছে সব স্তরে। কিন্তু এত জটিলতা তৈরিই হত না, যদি ঠিক পদ্ধতিতে কুকুরের নির্বীজকরণ করা যেত। কলকাতায় সরকারি ভাবে তেমন ব্যবস্থা নেই।

Advertisement

কুকুরের সংখ্যা বাড়লে তাদের অনাদরে মরতে হয়। যা মানতে কষ্ট হয় শান্তিনিকেতনের সারমেয়প্রেমী এক দম্পতির। পোষ্য বেড়ালকে বাড়িওয়ালি ঠাঁই দেননি বলে এক সময় সেই বাড়িই ছেড়ে দিয়েছিলেন ওঁরা। এখন অত্যন্ত আধুনিক উপায়ে কুকুরদের নির্বীজকরণ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে ২৭টি রাস্তার কুকুরের উপরে সফল হয়েছে তাঁদের পদ্ধতি।

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক অরণি চক্রবর্তী এবং তাঁর স্ত্রী সিউড়ি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের প্রাক্তন অধ্যাপিকা শমিতা শীল। থাকেন শান্তিনিকেতনে। গত বছর ১১ মার্চ থেকে শুরু করেন এই কাজ। প্রতি রবিবার। খরচ বইছেন নিজেরাই। পাশে পেয়েছেন কয়েক জন সহৃদয় পশুপ্রেমীকে। ‘‘বোলপুরে প্রচুর কুকুর বেড়ে গিয়েছে। একটা ব্যবস্থা তো করতেই হয়। এটা আমাদের প্রথম প্রচেষ্টা নয়। ১৫ বছর এখানে আছি। বিভিন্ন সময় কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগে, কখনও বাড়িতেই পরিকাঠামো তৈরি করে অপারেশন করে নির্বীজকরণ করেছি,’’ বললেন অরণিবাবু। কিন্তু গত বছর থেকে ল্যাপরোস্কোপির মাধ্যমে তাঁরা এই কাজ করছেন। নির্বীজকরণের পরে কি কুকুরের মৃত্যুর হার বেশি? ‘‘ল্যাপরোস্কোপিতে সে সমস্যা নেই। কিন্তু পেট চিরে অস্ত্রোপচারের পরে ১০ থেকে ১২ দিন কুকুরকে খুব যত্নে রাখতে হয়। যদিও দুই পদ্ধতিতেই আমাদের সাফল্যের হার ১০০ %।’’

Advertisement

এই প্রকল্পে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন আমেরিকা নিবাসী ডিন (দীপঙ্কর) চট্টোপাধ্যায়। তিনিই প্রথম ল্যাপরোস্কোপির কথা এই দম্পতিকে জানান। অরণি-শমিতার প্রচেষ্টার কথা কানে যায় আমেরিকার ডাক্তার অশোক খন্ডকারেরও। তিনি নিজে শান্তিনিকেতনে এসে অধ্যাপক দম্পতিকে ল্যাপরোস্কোপের জেনোস্কোপ মেশিনটি উপহার দিয়েছেন। যার দাম ৪ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা! মেশিন বাদ দিয়ে গোটা পরিকাঠামো তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৮ লক্ষ। এর মধ্যে মাত্র সাড়ে ১১ হাজার টাকা অন্যের দান। বাকিটা? মুচকি হেসে অরণিবাবু বললেন, ‘‘গিন্নিফান্ড’’। শুধু টাকা নয়, নির্বীজকরণের জন্য পথকুকুর ধরে আনা, অপারেশনের পরের ঝক্কি— পুরোটাই সামাল দেন গিন্নি, শমিতা। ওষুধ, বাড়িভাড়া, নিরাপত্তা রক্ষী ইত্যাদি নিয়ে এই কাজে খরচ প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা।

ল্যাপরোস্কোপি করেন সিউড়ির পশু হাসপাতালের চিকিৎসক সৌরভ কুমার। সাহায্য করেন স্ত্রী সুবর্ণা কুণ্ডু। তিনিও পশুচিকিৎসক। ‘‘বহরমপুরে সরকারি হাসপাতালে ল্যাপরোস্কোপির ব্যবস্থা আগে থাকলেও এখন নেই। অরণি-শমিতার আগ্রহ দেখে আমরা এগিয়ে আসি,’’ বললেন সৌরভ। পারিশ্রমিকও নেন না তাঁরা। ল্যাপরোস্কোপির পর অজ্ঞান অবস্থাতেই কুকুরের কানে উল্কি করে নম্বর লিখে মার্ক করে দেওয়া হয়।

বর্ষায় এবং কুকুরদের মিলন ঋতুতে বন্ধ থাকে এই কাজ। এই বছর ২৬ জানুয়ারি থেকে আবার শুরু হবে কাজ। কুকুরদের সুরক্ষা বাড়াতে এ বার তাঁরা আনছেন আরও উন্নত যন্ত্র, ডায়াথারমি ভেসেল সিলার। ‘‘এতে কুকুরদের ইঞ্জেকশন দিয়ে অজ্ঞান করতে হবে না। মানুষকে যে ভাবে করা হয়, সে ভাবেই হবে।’’ যন্ত্রণাও টের পাবে না লালু, বাঘা, ভুতুমের দল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement