Left Brigade Rally

রবি-ব্রিগেডে যাবে সাত মিছিল, মেহনতি মানুষে মাঠ ভরাতে চায় সিপিএম, সেলিম-সহ বক্তা ছ’জন, তালিকায় নেই মিনাক্ষী

একটা সময়ে গ্রামে সিপিএমের গণভিত্তি থাকলেও সরকারে থাকার সময় থেকেই সেই ভিত আলগা হয়েছিল। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে তা আরও বেড়েছে। শহরাঞ্চলে শ্রমিক, বস্তিবাসী, গ্রামাঞ্চলে কৃষক-ক্ষেতমজুরদের বদলে সিপিএমে জাঁকিয়ে বসেছে শহর-মফস্সলের কিছু চকচকে মুখ।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ২২:৪৫
Share:

রবিবার বামেদের ব্রিগেড সমাবেশের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। —নিজস্ব চিত্র।

দল নয়। ছাত্র-যুব সংঠনও নয়। শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেতমজুর এবং বস্তি— চারটি গণসংগঠনের ডাকে রবিবার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে সমাবেশ করতে চলেছে সিপিএম। কলকাতা শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট সাতটি মিছিল ব্রিগেডে যাবে। যান নিয়ন্ত্রণে রাস্তায় পুলিশের তরফে সমস্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এপ্রিলের রোদের তেজের কথা ভেবেই বেলা ৩টেয় ব্রিগেডের সভা শুরু করবে সিপিএম। বক্তা থাকবেন ছ’জন। তবে তাঁদের মধ্যে মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায় নেই!

Advertisement

সমাবেশের ‘ডিজিটাল’ প্রচারে দস্তুরমতো পেশাদার মোড়ক রাখছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের ‘ডিজিটাল টিম’। মোট আটটি ক্যামেরা, একটি ড্রোন, একটি জিমি জিব (ক্রেনে লাগানো ক্যামেরা) ব্যবহার করা হবে সভার ছবি এবং ভিডিয়ো তুলে রাখার কাজে। বাইরের সংস্থাকে কাজে লাগানো হচ্ছে। থাকবেন দলের ‘ডিজিটাল টিম’-এর সদস্যরাও। সব মিলিয়ে ৩০ জনের দল কাজ করবে। সংবাদমাধ্যমকেও ‘ফিড’ সরবরাহ করবে সিপিএম-ই। যেমনটা সাধারণত করা হয় তৃণমূল বা বিজেপির যে কোনও কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে।

গত বছর শীতকালের ব্রিগেডে মঞ্চ হয়েছিল পার্ক স্ট্রিটের দিকে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের দিকে ছিল মুখ। মেট্রোর কাজের জন্য মঞ্চ ঘুরিয়ে দিতে হয়েছিল সেনাবাহিনীর নির্দেশে। তবে এ বার পুরনো জায়গাতেই ফিরেছে মঞ্চ। অর্থাৎ, মঞ্চের মুখ শহিদ মিনারের দিকে। তবে মেট্রোর কাজের জন্য কয়েকশো মিটার এগিয়ে মঞ্চ তৈরি করতে হয়েছে। তাতে কিঞ্চিৎ ছোট হয়েছে মাঠ। ৪৮/৩২ ফুটের মঞ্চে থাকছে তিনটি ধাপ। মঞ্চের একেবারে মাঝে থাকছে ‘পোডিয়াম’। তবে বক্তা তালিকায় কোনও চমক নেই। কৃষকসভার অমল হালদার, ক্ষেতমজুর সংগঠনের নিরাপদ সর্দার, বন্যা টুডু, বস্তি উন্নয়ন সমিতির সুখরঞ্জন দে, সিটুর অনাদি সাহুরা বক্তা। সেই অর্থে ‘বড় নাম’ বলতে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ঘটনা হল, ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতায় যে সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা পৌঁছেছেন, তাঁদের অনেকেই সেলিম ছাড়া বাকিদের নাম শোনেননি। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কর্মীদের মৌলালির কাছে রামলীলা ময়দানে রেখেছে সিপিএম। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থেকে আসা জহিরুল মিঞা, জগদীশ বর্মনেরা স্পষ্টই বলছেন, ‘‘সেলিম সাহেব ছাড়া কারও নাম তেমন শুনিনি।’’ সেই সঙ্গে সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন করছেন, ‘‘মিনাক্ষী (মুখোপাধ্যায়) বলবেন না?’’ ঘটনাচক্রে, গত কয়েক বছর ধরে সিপিএমের ভিড় টানার নাম মিনাক্ষীই। তাঁকে অবশ্য রবিবারের ব্রিগেডের বক্তার তালিকায় রাখা হয়নি।

Advertisement

রবিবার হাওড়া, শিয়ালদহ, হেস্টিংস, এক্সাইড মোড়, সুবোধ মল্লিক স্কোয়্যার, পার্কসার্কাস, মৌলালির কাছে রামলীলা ময়দান এবং সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশন থেকে মিছিল যাবে ব্রিগেডের উদ্দেশে। রবিবার হওয়ায় শহরে সাধারণ ভিড় বা যানবাহন তুলনায় কমই থাকবে। তবে পুলিশের তরফে সব রকম বন্দোবস্ত রাখা হচ্ছে। লালবাজার সূত্রে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি যেমন হবে, তেমন তেমন বিভিন্ন রাস্তায় যানচলাচল এবং ‘পার্কিং’ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। রাস্তায় থাকবে পর্যাপ্ত পুলিশ। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বাহিনী মোতায়েন করবে লালবাজার। থাকবেন পদস্থ পুলিশকর্তারাও।

একটা সময়ে গ্রামে সিপিএমের গণভিত্তি থাকলেও সরকারে থাকার সময় থেকেই সেই ভিত আলগা হতে শুরু করেছিল। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে তা আরও বেড়েছে। শহরাঞ্চলে শ্রমিক, বস্তিবাসী, গ্রামাঞ্চলে কৃষক, ক্ষেতমজুরদের বদলে সিপিএমে জাঁকিয়ে বসেছে শহর-মফস্সলের কিছু চকচকে মুখ। যাকে দলীয় নথিতে ‘শ্রেণিবিচ্ছিন্নতা’ হিসাবে উল্লেখ করেছে সিপিএম। সে কথা মাথায় রেখেই রবিবারের ব্রিগেডের মাঠ যাতে ‘তোবড়ানো গাল, ভেঙে যাওয়া মুখ’-এর ভিড় হয়, সেই চেষ্টা করছে সিপিএম। ভিড় নিয়ে আশাবাদী সিপিএমের গণসংগঠনগুলির নেতৃত্ব। তবে রোদের তেজ নিয়েও চিন্তা রয়েছে তাঁদের। সে কারণেই বেলা ৩টের সময়ে সভা শুরুর সময় দেওয়া হয়েছে। তার চেয়েও বড় চিন্তা, ভিড় হলেও তা কি বুথ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যাবে? ভোটে রূপান্তরিত করা যাবে?

মঞ্চের পিছনেই তৈরি করা হয়েছে প্লাইউড ঘেরা বাতানুকূল অস্থায়ী প্রোডাকশন কন্ট্রোল রুম (পিসিআর)। সেখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হবে ক্যামেরা, ড্রোন, জিমি। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যুব সংগঠনের ডাকে ‘ইনসাফ ব্রিগেড’ সমাবেশেও পিসিআর তৈরি করেছিল সিপিএম। তা ছিল খোলা আকাশের নীচে। কিন্তু জানুয়ারির রোদেই অনেক যন্ত্র নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল। এখন তো এপ্রিলের ভরা গরম। পিসিআর বাতানুকূল করা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। অর্থের সঙ্কটের কারণে ছাউনির কথা ভেবেও পিছিয়ে আসতে হয়েছে সিপিএমকে। তবে ডিজিটাল প্রচারের ক্ষেত্রে কোনও কার্পণ্য করছে না বামেরা। মূল মঞ্চের আশপাশেও বিভিন্ন সংগঠনের বেশ কিছু ক্যাম্প করেছে সিপিএম। তা নিয়ে শুক্রবার রাত থেকে ফোর্ট উইলিয়ামের ‘বাধা’র মুখে পড়তে হয়েছে বলে দাবি সিটু নেতৃত্বের। শনিবার দুপুর পর্যন্ত সে সব নিয়ে টানাপড়েন চলেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement