আমনের ক্ষতি, বোরো রক্ষার উদ্যোগ

প্রাথমিক ভাবে বৃষ্টির ঘাটতি থাকবে বলে আশঙ্কার প্রহর গুণছিলেন কৃষিজীবীরা। কিন্তু গত এক মাসে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে পুরো হিসাব গিয়েছে বদলে। ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত সারা রাজ্য। তাই ক্ষতিটা রয়েই গেল। সারা রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরেও চিত্রটা একই।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৫ ০০:৫৮
Share:

জলে ডুবে ধানের বীজতলা। — নিজস্ব চিত্র।

প্রাথমিক ভাবে বৃষ্টির ঘাটতি থাকবে বলে আশঙ্কার প্রহর গুণছিলেন কৃষিজীবীরা। কিন্তু গত এক মাসে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে পুরো হিসাব গিয়েছে বদলে। ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত সারা রাজ্য। তাই ক্ষতিটা রয়েই গেল। সারা রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরেও চিত্রটা একই।

Advertisement

জেলায় এখনও পর্যন্ত শুধু কৃষিক্ষেত্রেই আর্থিক ক্ষতির পরিমাণটা দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৫৪৬ কোটিতে। এর মধ্যে আমন ধানে ৩৭০ কোটি, সব্জি ও ফুল চাষে ১১২ কোটি, পান ও মশলা জাতীয় হলুদ, আদা, লঙ্কা চাষে ৬৪ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে। ভারী বৃষ্টিতে আমনের ক্ষতির আশঙ্কা থাকেই। পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে জলাধার থেকে ছাড়া জল।

এ বছর জেলা কৃষি দফতর ৫ লক্ষ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছিল। কিন্তু গোটা জেলায় যে রকম বন্যা পরিস্থিতিতে তৈরি হয়েছে তাতে, সেই লক্ষ্যমাত্রার ধারে কাছেও পৌঁছনো যাবে না।

Advertisement

কিন্তু গোড়ার দিকে চাষের কাজ ভাল ভাবেই এগোচ্ছিল। জুলাইয়ের শেষ থেকে পরিস্থিতির অবনতি হয়। হিসাব বলছে গত দশ বছরে জুলাই মাসে বৃষ্টিপাতের যে গড় তার তুলনায় ৩৫০ মিলিলিটারেও বেশি বৃষ্টি হয়েছে এ বছর জুলাই মাসে।

ফলে এখন জলের তলায় হেক্টরের পর হেক্টর কৃষিজমি। চাষিরা জানাচ্ছেন, তলিয়ে যাওয়া বীজে আর ধান রোয়া সম্ভব নয়। বীজধান পাওয়া গেলে রোয়া যেতে পারে। অবশ্য বীজ থেকে চারা তৈরি করতে সময় লাগে। তারপর সেই চারা রোয়া হলে ফলনই বা কতটা হবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছে।

পরিস্থিতি দেখে রাজ্যের কাছে বিভিন্ন ফসলের মোট ১৫ লক্ষ মিনিকিট চেয়ে আবেদন করেছে জেলা প্রশাসন। জেলার কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের বীজধান দেওয়া হবে। চাষিদের পাশে থাকার সব রকম চেষ্টা চলছে। রাজ্যের কাছে মোট ১৫ লক্ষ মিনিকিট চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।’’ কৃষি কর্মাধ্যক্ষ স্বীকার করে নিয়েছেন, গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকটি এলাকার পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। বীজতলা নষ্ট হওয়ায় কিছু জমি হয়তো পতিতই পড়ে থাকবে। তিনি জানিয়েছেন ব্লকস্তরে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে রকম ভাবে সহায়তা করা হবে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, এ বার জেলায় আমন ধানের ৩০ হাজার প্যাকেট মিনিকিট এসেছিল। ১৫ হাজার ২০০ প্যাকেট ব্লকস্তরে বিলি করা হয়েও গিয়েছিল। কিন্তু এর পরই ভারী বৃষ্টিতে পশ্চিম মেদিনীপুরের একাংশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়।

প্রাথমিক ভাবে জেলা প্রশাসনের একাংশের অনুমান, যে ভাবে জমিতে জল জমে রয়েছে, তাতে ঘাটাল, দাসপুর ১ এবং ২, সবং, পিংলা, ডেবরা, কেশপুর প্রভৃতি ব্লকের প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির বীজতলা নষ্ট হতে পারে। এই পরিমাণ জমি পতিত হয়ে যাবে। সাধারণত, ১৫ অগস্টের মধ্যে আমনের চারা রোপন করা হয়। অর্থাত্‌, হাতে সময়ও নেই। সুতরাং প্রশাসন চাইছে অন্তত বোরো চাষে চাষিদের সাহায্য করতে।

বোরো ধান রোপনের কাজ শুরু হয় সাধারণত ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে। বোরো ধান চাষের জন্য ৬০০ টন (৬০ হাজার প্যাকেট) মিনিকিট চেয়ে রাজ্যের কাছে আবেদন করেছে জেলা। পাশাপাশি, ১০ কেজি করে তিন লক্ষ মিনিকিটের প্যাকেট, তিন লক্ষ প্যাকেট ইউরিয়া, তিন লক্ষ প্যাকেট পটাশ ৩ লক্ষ চাষিকে দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া বিউলি কলাই, মুগ, সরিষা, মুসুর, ভুট্টা, বাদাম প্রভৃতি চাষের জন্য মিনিকিট দেওয়ার আবেদন রাখা হয়েছে। বিউলি কলাই চার কেজির প্যাকেট ১০ হাজার চাষিকে দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

নির্মলবাবু বলেন, ‘‘ভারী বৃষ্টির পাশাপাশি জলাধারের ছাড়া জলে নিচু এলাকার ফসল ডুবেছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে জমির জল নামতে নামতে ফসল রোয়ার সময় পেরিয়ে যাবে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় সব ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

জেলার একটি বড় অংশের মানুষ আমন ধান চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। ফলে, কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, যার প্রভাব পড়তে পারে জেলার অর্থনীতিতেও। সে সমস্যার কথা মানছে জেলা প্রশাসনও।

জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, ‘‘চাষের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ব্লক থেকে প্রাথমিক রিপোর্ট এসেছে। পরে চূড়ান্ত রিপোর্ট আসবে। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে।’’ জমা জল নামার পর নতুন করে আমন চাষ করার জন্য তৈরি বীজ দেওয়ার সব রকম চেষ্টা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন। কৃষি দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর তথা জেলার কৃষি অধিকর্তা নিমাইচন্দ্র রায় বলেন, ‘‘জমা জলে চাষের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। পরিমাণ খতিয়ে দেখতে পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে রাজ্যে প্রাথমিক রিপোর্টও পাঠানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন