মনে হচ্ছিল মাঝসমুদ্রে পুড়ে ছাই হয়ে যাব

বুধবার রাত সাড়ে এগারোটা হবে। আমরা কলকাতার বেশ কাছাকাছি চলে এসেছিলাম। আচমকা কানে এল বিকট আওয়াজ। আমি তখন ওপরের ডেকে ছিলাম। বাইরে এসে দেখলাম, চার দিক কালো ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। নজরে এল আগুনের ফুলকিও।

Advertisement

রজতরঞ্জন কুমার (অগ্নিদগ্ধ ভেসেলের মাস্টার)

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৮ ০৫:৪৫
Share:

বুধবার রাত সাড়ে এগারোটা হবে। আমরা কলকাতার বেশ কাছাকাছি চলে এসেছিলাম। আচমকা কানে এল বিকট আওয়াজ। আমি তখন ওপরের ডেকে ছিলাম। বাইরে এসে দেখলাম, চার দিক কালো ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। নজরে এল আগুনের ফুলকিও।

Advertisement

আমরা ছুটোছুটি শুরু করে দিলাম। কিন্তু কিছু বোঝার আগেই দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করল আমাদের ভেসেল। চারদিকে রাসায়নিক ভর্তি কন্টেনার। এই আগুনের পরিণতি কী হতে পারে ভেবে আমার গোটা শরীর তখন কাঁপছে। আমি ভেসেলের মাস্টার। ফলে শুধু আত্মরক্ষা নয়, ভেসেলের বাকি ২১ জনের প্রাণ রক্ষার দায়ও তো আমারই! কিন্তু মাঝরাতে সমুদ্র এতটাই উত্তাল ছিল যে কী করব বুঝতে পারছিলাম না। কয়েকজন সহকর্মী জানালেন, ভেসেলের নীচের অংশ থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। বুঝলাম আগুন দ্রুত ছড়াচ্ছে। ভেসেলের মধ্যে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র ছিল। আমরা সেটা দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি। কিন্তু সেই বিধ্বংসী আগুন কব্জা করা সহজ ছিল না।

বিপদ থেকে বাঁচতে চেন্নাইতে এমআরসিসি (মেরিটাইম রেসকিউ কো-অর্ডিনেশন সেন্টার) ফোনে খবর পাঠাই। ততক্ষণে আগুন গোটা ভেসেলে ছড়িয়ে পড়েছে। রাসায়নিক ভর্তি বেশ কয়েকটি কন্টেনার দাউ দাউ করে জ্বলছে। সেই সময় মনে হচ্ছিল আর প্রাণে বাঁচব না। এই মাঝসমুদ্রেই পুড়ে ছাই হয়ে যেতে হবে। বারবার তখন শুধু ঈশ্বরকে ডেকেছি। রাত তখন ক’টা মনে নেই। হঠাৎ ভেসেলের কাছেই একটা জলযান দেখতে পেলাম। ভারতীয় পতাকা উড়ছে। সেই জলযান কাছাকাছি আসতেই বুঝলাম, ওটা উপকূলরক্ষী বাহিনীর জাহাজ। ধড়ে প্রাণ এল।

Advertisement

কিন্তু উপকূলরক্ষীরাও গোড়ায় আমাদের আগুন থেকে বার করতে পারছিলেন না। বহুক্ষণের চেষ্টায় ওঁরা আমাদের উদ্ধার করলেন। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরে বৃহস্পতিবার রাতে হলদিয়ায় পৌঁছলাম আমরা। তখনও বিশ্বাস হচ্ছিল না সত্যি বেঁচে গিয়েছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন