গত কয়েকদিন সংঘাত, বিক্ষোভের পর বৃহস্পতিবার বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার স্টেশনগুলি অনেকটাই ফিরল স্বাভাবিক ছন্দে। অশোকনগরে মাতৃভূমি লোকাল আটকে দেওয়ার হুমকি থাকা সত্ত্বেও এ দিন ট্রেনটি চলেছে নির্বিঘ্নে। পর্যাপ্ত জিআরপি, আরপিএফ এবং জেলা পুলিশ ছিল। স্থানীয় তৃণমূল নেতা-সমর্থকরাও যাত্রীদের নিয়ম মানার অনুরোধ করেছেন বারবার।
এ দিন ট্রেন চলাচল নিয়মিত করার কৃতিত্বের অংশিদার নিত্যযাত্রীরাও। অশোকনগরের এক পুরুষ নিত্যযাত্রীর কথায়, ‘‘সোমবার হাবরা স্টেশনে মাতৃভূমি লোকালের উপরে যে হামলা হয়েছিল, সে জন্য স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতীই দায়ী। নিত্যযাত্রীদের কেউ কেউ অবরোধ হয়তো করেছিলেন। কিন্তু মহিলাদের মারধর, ট্রেন ভাঙচুরের মতো ঘটনায় অফিসযাত্রীরা কোনও ভাবেই জড়াননি।’’
ওই যাত্রীর কথার সমর্থন মিলেছে পুলিশের তদন্তেও। সোমবার হাবরায় মাতৃভূমি লোকাল-সহ দু’টি ট্রেনে হামলার ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যেই ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে। যাদের অনেকেরই পুলিশ ও রেলের উপরে পুরনো রাগ ছিল বলে জানা গিয়েছে। মাতৃভূমি লোকাল আটকে নিত্যযাত্রীদের বিক্ষোভের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আচমকাই পুলিশের উপর চড়াও হয় ওই স্থানীয় যুবকেরা। ট্রেনে ভাঙচুরও তারাই করে।
গত কয়েকদিনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ দিন অবশ্য পুলিশ পাহারা ছিল পুরোমাত্রায়। বুধবারই অশোকনগরে এক অফিসযাত্রী ছুটে মাতৃভূমি লোকালের ভেন্ডার কামরায় উঠতে গিয়ে পড়ে যান। গুজব রটে যায়, তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে রেলপুলিশ। তার জেরে যাত্রীদের একাংশ হুমকি দেয়, বৃহস্পতিবার অশোকনগরে অবরোধ করা হবে মাতৃভূমি। সেই আশঙ্কায় এ দিন কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়েছিল স্টেশনে স্টেশনে। ট্রেনের মধ্যেও প্রচুর নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। হাবরায় জনরোষ থেকে শিক্ষা নিয়ে এ দিন পুলিশ কর্মীদের মাথায় হেলমেট, গায়ে বিশেষ বর্মও দেখা গিয়েছে।
তবে সে সব কিছু ব্যবহারের প্রয়োজন পড়েনি। সকাল ৮টা নাগাদ মাতৃভূমি লোকাল অশোকনগরে ঢোকে। নিত্যযাত্রীরা সংযতই ছিলেন। স্টেশনগুলিতে নিত্যযাত্রী ছাড়া স্থানীয় উটকো লোকজনকে দাঁড়াতেই দেয়নি পুলিশ। বিভিন্ন স্টেশনে তৃণমূল নেতৃত্বকেও হাজির থাকতে দেখা গিয়েছে। অশোকনগর-কল্যাণগড়ের পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার, হাবরার পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস, গোবরডাঙার কাউন্সিলর শঙ্কর দত্তরা দলবল নিয়ে হাজির ছিলেন স্টেশনে। হাবরার বিধায়ক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘আমরা মানুষের সমস্যায় সব সময়ে পাশে থাকি। এটা নতুন কথা ’’ যদিও সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সত্যসেবী কর বলেন, ‘‘স্টেশনে তৃণমূলের এই নজরদারি মানুষের কোনও কাজে আসবে না। রেলকেই স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।’’