দ্বন্দ্ব মেটাতে ঠাকুরবাড়ির বাইরের প্রার্থী

ঠাকুরবাড়ির কেউ নন, এমন এক জনকে এই প্রথম গাইঘাটায় দলের মতুয়া-প্রার্থী করল তৃণমূল। প্রাক্তন আইএএস অফিসার পুলিনবিহারী রায় ঠাকুরনগরের ভূমিপুত্র, তবে এখন থাকেন সল্টলেকে।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য ও সীমান্ত মৈত্র

ঠাকুরনগর শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ০৩:৩৩
Share:

ঠাকুরবাড়ির কেউ নন, এমন এক জনকে এই প্রথম গাইঘাটায় দলের মতুয়া-প্রার্থী করল তৃণমূল। প্রাক্তন আইএএস অফিসার পুলিনবিহারী রায় ঠাকুরনগরের ভূমিপুত্র, তবে এখন থাকেন সল্টলেকে। প্রার্থী হওয়া নিয়ে ঠাকুর পরিবারের নিজস্ব যে বিবাদ গত লোকসভা এবং পরবর্তী উপ-নির্বাচনে দলের রাজ্য নেতৃত্বের মাথাব্যথার কারণ হয়েছিল, তা থেকে মুক্তি পেতে এই সিদ্ধান্ত বলে দাবি তৃণমূল সূত্রের।

Advertisement

দিনকয়েক ধরে এলাকায় শোনা যাচ্ছিল, স্থানীয় বিধায়ক ও প্রাক্তন মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরই ফের শাসক দলের হয়ে টিকিট পেতে চলেছেন। শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা করা প্রার্থী-তালিকা, দাঁড়ি টেনে দিল সে জল্পনা-কল্পনাতেও।

শাসক দলের সিদ্ধান্ত জেনে দৃশ্যত বহুধাবিভক্ত মতুয়ারা। কেউ বলছেন, ‘‘ঠাকুরবাড়ির লোককেই শুধু প্রার্থী করা হবে কেন? আর কি মতুয়া নেই?’’ মঞ্জুল শিবিরের বক্তব্য, ‘‘ঠাকুর (প্রমথনাথ ঠাকুর) বংশের বাইরে কাউকে প্রার্থী হিসেবে মানতে পারেন না কোনও প্রকৃত মতুয়া।’’ খোদ মঞ্জুলকৃষ্ণের কথায়, ‘‘আমি কোনও দলে-টলে নেই। মতুয়া মহাসঙ্ঘ সঙ্ঘাধিপতি হিসাবে রাজ্যের মতুয়া সম্প্রদায়ের সব মানুষের সঙ্গে কথা বলব। দেখা যাক, তাঁরা কী বলেন।’’

Advertisement

দীর্ঘদিন ধরে ঠাকুবাড়ির ওঠা-পড়ার সঙ্গে জড়িত উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছেন, ‘‘গাইঘাটায় দল যাঁকে প্রার্থী করেছে, তিনি বড়মার (বীণাপানিদেবী) আর্শীবাদ নিয়েই ভোটে প্রার্থী হয়েছেন। মঞ্জুল প্রার্থী না হওয়ায় মতুয়া ভোট-ব্যাঙ্কে প্রভাব পড়বে না। জিতব আমরাই।’’

কিন্তু একমত হচ্ছেন না স্থানীয় রাজনীতিতে জ্যোতিপ্রিয়-ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত (গাইঘাটায় তৃণমূলের টিকিটের অন্যতম দাবিদার) ধ্যানেশনারায়ণ গুহের অনুগামীদের একটা বড় অংশ। তাঁদের দাবি, প্রয়াত কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরকে গত লোকসভা ভোটে, তাঁর স্ত্রী মমতাবালা ঠাকুরকে উপ-নির্বাচনে জিতিয়ে আনার পিছনে বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, বনগাঁ দক্ষিণের বিধায়ক সুরজিৎ বিশ্বাসের সঙ্গে গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি ধ্যানেশবাবুরও বড় অবদান রয়েছে। বিশ্বজিৎ ও সুরজিৎ টিকিট পেলেও হাতের তেলোর মতো গাইঘাটা চেনা ধ্যানেশবাবুর টিকিট না পাওয়াটা তাঁর অনেক অনুগামীর কাছে হতাশার কারণ। খোদ ধ্যানেশবাবু অবশ্য বলেছেন, ‘‘সবাই ভুলে যাচ্ছে, আগে দিদি, দল। সুযোগ পরেও আসবে।’’

টিকিট পাওয়ার সুযোগ ‘ছোট ঠাকুর’ও (মঞ্জুল) পাবেন ভেবে দলের অন্দরে জল মাপছিলেন তাঁর অনুগামীরা। এমনকী, দিনকয়েক আগে আগাম-আনন্দে বাজিও পোড়ানো হয়। কিন্তু দলের সবাই তা হজম করতে পারেননি। তৃণমূলের গাইঘাটা বিধানসভা কমিটির চেয়ারম্যান গোবিন্দ দাস যেমন বলেন, ‘‘রাজ্য নেতৃত্বের কাছে জানিয়ে দিয়েছিলাম, পদের লোভে বনগাঁ উপনিবার্চনের আগে বিজেপি-তে গিয়ে মঞ্জুল ঠাকুর দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তাঁর হয়ে ভোট চাওয়া কঠিন।’’

তৃণমূল অন্দরের খবর, এই সূত্রেই ময়দানে প্রবেশ প্রাক্তন আমলা পুলিনবিহারী রায়ের। তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রকে দীর্ঘদিন কাজ করা বছর পঁচাত্তরের মানুষটির সঙ্গে মতুয়া মহাসংঘের যোগাযোগ কখনই ছেঁড়েনি। তা ছাড়া, ঠাকুরনগরে দীর্ঘকালের বর্ধিষ্ণু পরিবার তাঁদের। পুলিনবাবু বলেন, ‘‘দ্বন্দ্ব বা বিবাদ সমস্যা হবে না। তৃণমূল নেত্রী আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, সে টুকু পালন করতে চাই। লক্ষ্য, এলাকার উন্নয়ন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন