প্রধান হলেই আড়াই বছর, তাই কি লড়াই  

পঞ্চায়েত দফতরের খবর, বাম জমানায় বোর্ড গঠনের এক বছর পর সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের এক তৃতীয়াংশ  সদস্য-সদস্যা অনাস্থা চেয়ে নোটিস দিতে পারতেন। ২০১১-য় সরকার গঠনের দু’বছরের মধ্যে অধিকাংশ পঞ্চায়েত এই ‘অনাস্থা’ ম্যাজিকেই দখল করে নিয়েছিল শাসক দল। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের পরও তিনটি স্তরেই আধিপত্য কায়েম করে জোড়াফুল।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৮ ০৫:২৭
Share:

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে তিন বছর আগে বদল হয়েছিল পঞ্চায়েত আইনের। সেই বদলে যাওয়া আইন পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনে সংঘর্ষের অন্যতম কারণ বলে চর্চা প্রশাসনিক মহলে।

Advertisement

পঞ্চায়েত দফতরের খবর, বাম জমানায় বোর্ড গঠনের এক বছর পর সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের এক তৃতীয়াংশ সদস্য-সদস্যা অনাস্থা চেয়ে নোটিস দিতে পারতেন। ২০১১-য় সরকার গঠনের দু’বছরের মধ্যে অধিকাংশ পঞ্চায়েত এই ‘অনাস্থা’ ম্যাজিকেই দখল করে নিয়েছিল শাসক দল। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের পরও তিনটি স্তরেই আধিপত্য কায়েম করে জোড়াফুল।

পঞ্চায়েত দফতরের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, বছর পেরোতেই ২০১৩-য় গঠিত পঞ্চায়েতগুলিতে অনাস্থার নোটিস আসতে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতি সভাপতির বিরুদ্ধে দলেরই একাংশ অনাস্থার নোটিস দেয়। সে সময় নবান্ন সিদ্ধান্ত নেয়, এক বার বোর্ড গঠন হলে আড়াই বছর সেই পঞ্চায়েত আর ভাঙা যাবে না। সেই মতো ২০১৪ সালে পঞ্চায়েত আইনে সংশোধন হয়। বিজ্ঞপ্তি জারি হয় ২০১৫-র ৯ জানুয়ারি। দফতর সূত্রের খবর, এই আইন বদলের পর গত পঞ্চায়েতে অনাস্থা প্রস্তাব বিশেষ জমা পড়েনি। পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বার বার পঞ্চায়েতে অনাস্থা এলে উন্নয়নে সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা ছিল। সেই কারণে আড়াই বছরের আগে অনাস্থা না আনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।’’

Advertisement

পঞ্চায়েত কর্তাদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, গ্রাম সভাগুলির প্রধানকে যে আড়াই বছর সরানো যাবে না, তা বিজয়ী সদস্যরা জানেন। ফলে বিভিন্ন পঞ্চায়েতে ‘পছন্দের’ প্রধান বসাতে দলের মধ্যে মারামারি হচ্ছে বলে তাঁদের দাবি। বুধবার পর্যন্ত ১৫১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেও ১২৯২টির বোর্ড গঠন করা গিয়েছে। পঞ্চায়েত দফতর সূত্রের খবর, এগুলির মধ্যে শাসক দলের জেতা পঞ্চায়েতই বেশি। আজ-কালের মধ্যে বিনা লড়াইয়ে জিতে নেওয়া ১৬৯২টি গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি হবে। সে সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে বিভিন্ন জেলা নবান্নে জানিয়ে রেখেছে। সেই কারণে সময় বাড়িয়ে সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে ওই সব পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করাতে চাইছে দফতর।

নবান্নের কর্তারা জানাচ্ছেন, ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা, রাস্তা, ভাতা প্রদান-সহ সমস্ত সরকারি সুবিধা বণ্টনের দায়িত্ব প্রধানদেরই। এছাড়া, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের থোক টাকা গ্রাম প্রধানেরাই খরচ করতে পারেন। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের কাছে সরকার ৪২ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে। যদি ৩০ হাজার কোটিও মেলে, তা আগামী পাঁচ বছরে প্রধানদের হাত দিয়ে খরচ হবে। তাই অনেকেই সুযোগ ছাড়তে রাজি নন বলে বিরোধী শিবিরের অভিযোগ। তবে পঞ্চায়েত মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলে কেউ টাকার জন্য পঞ্চায়েতে আসে না। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আদর্শে মানুষের কাজ করাই আসল উদ্দেশ্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন