পাহাড়ের রোগীদের একমাত্র ভরসা এই ডাক্তার

দার্জিলিং জুড়ে রোজ মিছিল। রোজ জ্বলছে সরকারি অফিস, বাংলো, থানা। পথে টহল দিচ্ছে সেনা। কিন্তু জজবাজারে চেম্বার খোলা রেখে রোগী দেখে যাচ্ছেন তিনি। বললেন, ‘‘চেম্বারে রোগী দেখছিলাম, আচমকা হট্টগোল শুনে বাইরে এসে দেখি পেট্রল পাম্পের কাছে একটি গাড়ি দাউদাউ করে জ্বলছে।

Advertisement

অনিতা দত্ত

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৭ ০৪:৩৬
Share:

চিকিৎসক প্রতাপ গুহ

অশান্ত পাহাড়ে এখন রাতও নামে তাড়াতাড়ি। ভাঙচুর-আগুন-লাঠি-গুলির আবহে সূর্য ডুবলেই চার দেওয়ালের আড়ালে নিরাপত্তা খোঁজেন বাসিন্দারা। এই আতঙ্কের পরিবেশে নিশুতি রাতেও পাহাড়ি পাকদণ্ডী বেয়ে আসা যাওয়া লেগে রয়েছে তাঁর। যখন যেখানে ডাক পড়ছে, চামড়ার ব্যাগে স্টেথোস্কোপ, প্রেশার মাপার যন্ত্র আর প্রয়োজনীয় ওষুধ ভরে টর্চ হাতে ছুটে যাচ্ছেন তিনি। পাহাড়ের নেই রাজ্যে বাসিন্দাদের যে বড় ভরসা ডাক্তার প্রতাপ গুহ।

Advertisement

ঠাকুর্দা অতুল চন্দ্র গুহ ছিলেন দার্জিলিংয়ের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের সিভিল সার্জেন। আর বাবা কৃষ্ণগোবিন্দ গুহ হোমিওপ্যাথ। বাবার পথেই হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক বছর ৪৭ এর প্রতাপবাবু। তিনপুরুষের বাস দার্জিলিঙের ছোটা কাকঝোরায়। এই তো সে দিন সন্ধ্যায় ডাক এসেছিল ধোবিতলা থেকে। ফিরতে ফিরতে রাত দশটা। পাহাড় তখন ঘুমে অচেতন। পথে টহল দিচ্ছিলেন পুলিশের এক পদস্থ কর্তা। চিনতে পেরে নিরাপত্তার খাতিরে গাড়ি করে বাড়ি পৌঁছে দেবার কথা বলতেই প্রত্যাখ্যান করলেন প্রস্তাব। হেঁটেই ফিরলেন বাড়ি।

দার্জিলিং জুড়ে রোজ মিছিল। রোজ জ্বলছে সরকারি অফিস, বাংলো, থানা। পথে টহল দিচ্ছে সেনা। কিন্তু জজবাজারে চেম্বার খোলা রেখে রোগী দেখে যাচ্ছেন তিনি। বললেন, ‘‘চেম্বারে রোগী দেখছিলাম, আচমকা হট্টগোল শুনে বাইরে এসে দেখি পেট্রল পাম্পের কাছে একটি গাড়ি দাউদাউ করে জ্বলছে। আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে এক দল। ভাগ্যিস নিভেছিল, তা না হলে গোটা জজবাজারটাই যে পুড়ে খাক হত।’’

Advertisement

এক মাসেরও বেশি লাগাতার বন্‌ধে পাহাড়ে বন্ধ ব্যাঙ্ক। এটিএম কাউন্টার। রোগীদের হাতজোড় করা মুখগুলি দেখলেই আঁচ পান তিনি। বলেন, "টাকার কথা ভাবতে হবে না। বাড়ি যাও, ওষুধগুলো খেয়ে সুস্থ হও তো আগে।" নিয়ম করে প্রতি মাসের দ্বিতীয় ও চতুর্থ শনি-রবিবার শিলিগুড়িতে নামেন। রোগী দেখেন। পাহাড়ের মানুষদের জন্য ওষুধও নিয়ে যান। এখন সে পথ বন্ধ। ওষুধের ভাঁড়ারে টান ধরলে তাই জেলা স্বাস্থ্য দফতরের শরণাপন্ন হওয়ার কথা ভেবে রেখেছেন প্রতাপবাবু।

স্থানীয় বাসিন্দা দুর্গা লিম্বু বললেন, ‘‘গন্ডগোল চলছে, তার মধ্যে অসুখবিসুখ তো আছেই। ডাক্তারবাবু না থাকলে খুব বড় বিপদ হতো।’’ আর এক বাসিন্দা মুন্নে ঘটরাজের কথায়, ‘‘রাতবিরেতে দরকার পড়লে তাঁকে যে পাওয়া যাবে, সেটা আমরা জানি।"

তাই তো পাহাড় ছাড়তে পারেননি তিনি। স্ত্রী আর ক্লাস সেভেনের পড়ুয়া মেয়েকে পাঠিয়ে দিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের শ্বশুরবাড়ি। নিজে দু’ বেলা ফুটিয়ে খেয়ে চেম্বারে ছুটছেন নিয়ম করে। যদি অসুবিধায় পড়ে যান কোনও অসুস্থ পাহাড়বাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন