অদম্য: ডান পা দিয়েই কি-বোর্ড বাজাচ্ছে রিনি। —নিজস্ব চিত্র।
দোতলার সিঁড়ি ভেঙে উঠতে পারবে না ধরে নিয়ে নীচের ঘরে ক্লাস করার কথা ভাবছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। আপত্তি করে রিনি। বলে, ‘‘আমার জন্য বাকি সকলকে কেন সমস্যায় পড়তে হবে? আমি দিব্যি উঠতে পারব।’’
মেয়েটির মনের জোর দেখে সে দিন অবাক হয়েছিলেন টাকি ষষ্ঠীবর লালমাধব উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা।
এমন অবাক করার মতো আরও অনেক কিছু আছে রিনি ভট্টাচার্যের। জন্ম থেকে কনুইয়ের নীচ থেকে দু’টো হাত নেই। বাঁ পা-ও নেই। এক পায়ে ঝড়ের বেগে লিখতে পারে মেয়ে। এক পায়েই সিন্থেসাইজার বাজায়। গলায় সুরও খাসা। গান নিয়েই চর্চা করতে চায় ভবিষ্যতে।
আজ, সোমবার থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে রিনি।
উত্তর ২৪ পরগনার টাকির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের স্টেশন পাড়ায় বাড়ি মুকুল ও শর্মি ভট্টাচার্যের। একমাত্র মেয়ে রিনির জন্মের পর থেকেই এমন অবস্থা। বাবা-মা জানালেন, পঞ্চম শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল একটি স্কুল। রিনির নাকি বাকি সকলের সঙ্গে ক্লাস করতে অসুবিধা হবে। তাকে দেখে নাকি সমস্যা হতে পারে বাকিদেরও!
দমে যাননি বাবা-মা। দমেনি রিনিও। লালমাধব স্কুলে ভর্তি হয়। সেখান থেকেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে সে। সিট পড়েছে টাকি সরকারি স্কুলে। তার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মনীষা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বরাবর ষাট শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে ও আমাদের সকলের গর্ব।’’ রিনির পরীক্ষা দিতে যাওয়া-আসা করতে যাতে অসুবিধা না হয় তা দেখা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ রণজিৎ দাস। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার আগে আত্মবিশ্বাসী রিনি অবশ্য বলছে, ‘‘এক পা দিয়েও কত কিছু করা যায়। আমার মতো অবস্থা যাদের, কেউ যেন মন খারাপ না করে।’’
‘‘জীবনের প্রত্যেকটা দিন যে পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় মেয়েটাকে, সে তুলনায় মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরনো তো নেহাতই সহজ কাজ’’— বললেন রিনির স্কুলের এক শিক্ষিকা।