করে দেখানোর স্বপ্ন ছাড়েননি শত যন্ত্রণাতেও

মধ্যমগ্রামের মাইকেলনগরের সমাদৃতা চক্রবর্তী শুধু জানেন, হারার আগে হারতে নেই। তাই জীবনের এত অন্ধকারেও নিজের ব্রতটুকু ছাড়েননি। বরং দেখিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, তিনিও পারেন।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৭ ০৩:২৮
Share:

সফল সমাদৃতা। নিজস্ব চিত্র

বসতে পারেন না, চলতে পারেন না। কোমর থেকে নীচের দিকে কোনও পেশী কাজ করে না। কত দিনের লড়াই, কত কঠিন লড়াই, জানা নেই।

Advertisement

মধ্যমগ্রামের মাইকেলনগরের সমাদৃতা চক্রবর্তী শুধু জানেন, হারার আগে হারতে নেই। তাই জীবনের এত অন্ধকারেও নিজের ব্রতটুকু ছাড়েননি। বরং দেখিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, তিনিও পারেন।

সমাদৃতা পেরেছেন। ময়দানটা ছিল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। কী ভাবে পরীক্ষায় ‘বসবেন’, তা নিয়েই সংশয় ছিল। ৮০ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেছেন সমাদৃতা।

Advertisement

জন্ম থেকেই ‘স্পাইনাল মাসক্যুলার অ্যাট্রফি’র (এসএমএ) শিকার। পা থেকে কোমর পেরিয়ে গোটা শরীরটাই ক্রমশ ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। ছোটবেলায় তা-ও কোলে চড়ে বাইরে যেতে পারতেন। একটু বড় হতে পড়ার ঘরের বিছানাটাই ‘আস্ত’ পৃথিবী হয়ে দাঁড়াল।

আরও পড়ুন: জেদের জোরেই প্রথম অর্চিষ্মান

জেদ ধরেছিলেন, উচ্চ মাধ্যমিক দেবেনই। মেয়ের ইচ্ছেটুকু রাখতে মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে নানা জায়গায় আর্জি জানান বন দফতরের অবসরপ্রাপ্ত অফিসার সজল চক্রবর্তী।
সুরাহা হচ্ছিল না। অবশেষে সংবাদমাধ্যমে সমাদৃতার কথা জানতে পেরে নবান্ন থেকে নির্দেশ এসে পৌঁছয় সমাদৃতার স্কুল, বিশরপাড়ার ‘নবজীবন বিদ্যামন্দির হাইস্কুল’-এ। নিজের স্কুলে বিছানায় কাঠের স্ট্যান্ড রেখে কোনও মতে তাঁর বসার ব্যবস্থা করা হয়। সমাদৃতাকে দেখতে আসেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মহুয়া দাস। এ দিন খবর শুনে উচ্ছ্বসিত মহুয়া বললেন, ‘‘এত কষ্ট করে পরীক্ষা দিয়ে এত ভাল ফল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’’ সমাদৃতার প্রধানশিক্ষক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ও বললেন, ‘‘কী কষ্ট করে যে মেয়েটা পরীক্ষা দিয়েছে!’’

কোথা থেকে পেলেন এত শক্তি? কোন আশায় ভর করে এত দূর লড়লেন? মনোবিদেরা বলছেন, শারীরিক অক্ষমতাই সম্ভবত মেয়েটিকে মরিয়া করে তুলেছে। মনোবিদ জয়রঞ্জন রাম বলেন, ‘‘প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও যে লড়াই সম্ভব, প্রমাণের তাগিদ ছিল।’’ মনোবিদ রিমা মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘প্রতিবন্ধকতা থাকলে অনেকে করুণা করে। সেটার জবাব দেওয়ার ইচ্ছে তৈরি হয় মনে।’’

সবাই প্রশংসা করলেও খুশি নন সমাদৃতা নিজে। বললেন, ‘‘আরও নম্বর পাওয়া উচিত ছিল। বড় হয়ে সবার সমস্যায় পাশে থাকতে চাই।’’

চোখে আঁচল চাপা দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন মা নমিতা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement