আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দু’আঙুলে

জন্ম থেকেই অকেজো দু’হাত। অকেজো ডান পা। তাতে কী? বাঁ পায়ের সচল দু’টি আঙুলতো রয়েছে। তাতেই কলম ধরে গীতা। তুলে নেয় রঙ-তুলিও। ইন্দিরা আবাসের ঘরে টিনের ফাঁক দিয়ে দেখা আকাশটাকে দূরের মনে হয় না। তিন বোনের বড় সে। সংসারের চাকাটা সচল রাখতে আকাশটা যে ছুঁতেই হবে।

Advertisement

রাজকুমার মোদক

ফালাকাটা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:৪৫
Share:

গীতা বিশ্বাস

সম্বল বাঁ পায়ের দু’টি মাত্র আঙুল। তার ভরসাতেই জীবনের লড়াইটা জিততে চায় বছর পনেরোর ছাত্রী।

Advertisement

জন্ম থেকেই অকেজো দু’হাত। অকেজো ডান পা। তাতে কী? বাঁ পায়ের সচল দু’টি আঙুলতো রয়েছে। তাতেই কলম ধরে গীতা। তুলে নেয় রঙ-তুলিও। ইন্দিরা আবাসের ঘরে টিনের ফাঁক দিয়ে দেখা আকাশটাকে দূরের মনে হয় না। তিন বোনের বড় সে। সংসারের চাকাটা সচল রাখতে আকাশটা যে ছুঁতেই হবে।

ফালাকাটার ক্ষীরেরকোট গ্রামে বাড়ি নবম শ্রেণির ছাত্রী গীতার। বাবা সন্তোষ বিশ্বাস দিনমজুর। সরকারি সাহায্য বলতে, একটি হুইল চেয়ার। তাতে বসিয়েই মা পূর্ণিমা বিশ্বাস দুই কিলোমিটার দূরের ক্ষীরেরকোট হাইস্কুলে নিয়ে যান গীতাকে। ক্লাস চলে যখন, বাইরে বসে অপেক্ষা করেন। ছুটি হলে আবার হুইলচেয়ারে বসিয়েই গ্রামের ভাঙাচোরা রাস্তা ধরে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন মেয়েকে। পায়ের দু’আঙুলের ফাঁকে কলম ধরে তার পরিপাটি লেখা যে কোনও পড়ুয়ার কাছে ঈর্ষণীয়।

Advertisement

পরিবারের সম্বল বলতে ভিটেটুকু। সন্তোষবাবু প্রতিদিন দিনমজুরি করে যা পান, তাই দিয়ে তিন মেয়ে ও তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর সংসার চলে। কোনও কোনও সময় কাজ থাকে না। তখন কার্যত না খেয়েই কাটে দিন। কিন্তু গীতার পড়ার ইচ্ছে, ছবি আঁকার ইচ্ছের কাছে দারিদ্রও হার মানে।

গীতার বাবা সন্তোষ ও মা পূর্ণিমা দু’জনেরই স্বরে ঝরে পড়ে হতাশা। বলেন, “আমরা মরে গেলে গীতার কি হবে সেই চিন্তাতেই ঘুম আসে না। লেখাপড়া শিখে কোনও একটা সরকারি চাকরি পেলে খেয়ে পড়ে চলতে পারবে। তাই যেভাবে পড়তে চায়, ছবি আঁকতে চায় তা সংসারের অভাবের মধ্যেও পূরণ করি।”

কিন্তু গীতার স্বপ্ন, সংসারের ভার নিজের কাঁধে তুলে নেওয়া। গীতার গলায় আত্মবিশ্বাস। তার কথায়, “আমি পায়ের দু’টি আঙুল দিয়ে বিশ্বজয় করতে চাই। কারও সাহায্য ও বাবা-মার ভালবাসা পেলে আমি লেখাপড়া করে চাকরি করব। বাবা-মার কোনও অভাব রাখব না।’’

শারীরিক সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে ঠেলে এগোতে চাওয়া গীতার ইচ্ছাশক্তিকে কুর্নিস জানিয়ে এগিয়ে এসেছেন ফালাকাটার খগেনহাটের দুই সমাজসেবী। নবম শ্রেণিতে ওঠার পর তার চিকিৎসা ও পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন