বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈঠকে বাগবিতণ্ডা

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে জেলা প্রশাসন সর্বদলীয় বৈঠক ডাকলেন। জেলাশাসক রণধীর কুমার জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠ পরিবেশ ও শহরের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টায় সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়েছে।

Advertisement

বিবেকানন্দ সরকার

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:২৮
Share:

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রহরা। —নিজস্ব চিত্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে জেলা প্রশাসন সর্বদলীয় বৈঠক ডাকলেন। জেলাশাসক রণধীর কুমার জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠ পরিবেশ ও শহরের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টায় সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়েছে।

Advertisement

তার আগে সোমবার রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসকের হস্তক্ষেপ চেয়ে স্মারকলিপি দেয় কংগ্রেস। জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্তের নেতৃত্বে কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় গিয়ে জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন। জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘বন্‌ধের দিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পরপর দু’বার কংগ্রেস ও ছাত্র পরিষদের নেতা, কর্মী ও সমর্থকেরাই দল ও রাজ্য সরকারকে বদনাম করতে পরিকল্পিতভাবে গোলমাল করেছে। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলি ও বোমার রাজনীতি করে, তারা টিএমসিপি-র কেউ নয়।’’ সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, ‘‘দলের কেউ এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

গত বৃহস্পতিবার রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে কারচুপির অভিযোগ নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যায়। ভর্তি বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক অশোক দাসকে ঘেরাও করা হয়। পড়ুয়াদের ঘেরাওয়ের সময়ে আচমকা হামলা চলে। গুলি ছোড়া হয়। বোমাও ফাটে। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, সব দেখেও হাত গুটিয়ে বসে থাকার। ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই উপাচার্য অনিল ভুঁইমালি চলে গিয়েছিলেন। গোলমালে থামলেও সে দিন আর বি‌শ্ববিদ্যালয়ে ফেরেননি। পরে তা শুক্র-শনিবার দুদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করা হয়। ইতিমধ্যে ছাত্র পরিষদের তরফে থানায় অভিযোগ করা হয়, টিএমসিপি নেতা অনুপ কর সহ কয়েকজন গুলি-বোমা নিয়ে হামলা চালিয়েছেন। পক্ষান্তরে, টিএমসিপিও ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি নব্যেন্দু ঘোষ সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ দায়ের করেন। তবে পুলিশ এখনও কাউকেই গ্রেফতার করেনি।

Advertisement

এ দিন গোলমালের পরে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতেই সেখানে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গেল গুলি-বোমা নিয়ে হামলার মামলায় অভিযুক্ত টিএমসিপি নেতা-কর্মীদের কয়েকজনকে। সোমবার সকাল থেকে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দিনভর এমনই ছবি দেখেছেন পড়ুয়াদের অনেকেই। ক্লাস হয়েছে। ভর্তি প্রক্রিয়াও ছিল স্বাভাবিক।

এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ছিল কড়া পুলিশ পাহারা। সকাল থেকেই প্রথম বর্ষের ভর্তির জন্য ছাত্রছাত্রীদের লাইন ছিল চোখে পড়ার মতো। বেলা পৌনে বারোটা নাগাদ উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হলে তড়িঘড়ি টিচার্স কমন রুমে অধ্যাপক ও অধ্যাপিকাদের সাথে বৈঠকে বসেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্থ স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে নিয়ে আসা এবং ঘটনার পর্যালোচনা করাই ছিল মূল বিষয়। সেই বৈঠকে অবশ্য উত্তপ্ত তর্ক-বিতর্ক হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে। উপাচার্য বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রাখতে সকলের সাহায্য দরকার। সেটা বৈঠকে বলেছি। পড়ুয়া-শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী সকলে মিলে এমন ভাবে কাজ করতে হবে যাতে ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।’’


রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রেরা

এই দিন বিশ্ববিদ্যালয় খুলতেই দেখা যায়, টিএসসিপি-র অভিযুক্তেরা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছেন। তবে ছাত্র পরিষদের অভিযুক্তদের কাউকে দেখা যায়নি। কংগ্রেস দাবি করেছে, শাসক দলের সঙ্গে আঁতাতের কারণেই পুলিশ টিএমসিপি-র অভিযুক্তদের কাউকে গ্রেফতার করছে না। কিন্তু ছাত্র পরিষদের অভিযুক্তদের কাউকে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে গ্রেফতার করা হতে পারে। পুলিশ এই ব্যাপারে জানিয়েছে, তদন্ত চলছে। সেই মতো পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন