ঝাড়গ্রামে শাল গাছ কাটা রুখতে পড়েছে পোস্টার। —নিজস্ব চিত্র।
ফের অরণ্যশহরে ‘বলি’ হতে চলেছে শালগাছ! এ বার নাকি সংখ্যাটা ১৫০!
সাঁওতালি মাধ্যম পিটিটিআইয়ের (প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট) ভবন তৈরির জন্য দেড়শো শালগাছ কাটা হতে পারে বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। বিষয়টি জানাজানি হতেই পোস্টার সাঁটিয়ে গাছ বাঁচাতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে ‘ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগ’। ঝাড়গ্রামের ডিস্ট্রিক্ট ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং (সংক্ষেপে ‘ডিআইইটি’) চত্বরে পোস্টার সাঁটিয়ে নাগরিক উদ্যোগের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনও ভাবেই বহু পুরনো শালগাছ গুলি তারা কাটতে দেবেন না।
গত কয়েক বছরে স্টেডিয়াম, এসপি অফিস-সহ নানা ধরনের সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প রূপায়ণের জন্য কয়েক হাজার শালগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়াও শহরের জলা জমি ভরাট করে ও রায়তি জমির বহু পুরনো সব গাছ কেটে তৈরি হয়েছে একের পর এক বহুতল। শহরের রাস্তার ধারের সারি সারি শাল গাছ এখনও উধাও। এখন টিকে রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি শালগাছই।
টাটা-খড়্গপুর শাখার তৃতীয় রেল লাইনের জন্যও রেলের জমি থেকে শাল, পিয়াল, বহেড়া, হরিতকী, আমলকি, কুসুম, কেঁদ, মহুলের মতো আরও কয়েক হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। অরণ্যশহরের পরিবেশ বাঁচাতে বাঁচাতে নাগরিকরা মিলে গড়ে তুলেছেন ‘ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগ’। গত ২২ জুলাই গণ কনভেনশন ডেকে শহরের সবুজ বাঁচানোর শপথও নিয়েছেন নাগরিকরা। কয়েক দিন আগে শহরের শহরের শালগাছের চারা রোপণ করে সেগুলি বড় করে তোলার দায়িত্ব নিয়েছেন ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগের সদস্যরা।
রাজ্যের প্রথম সাঁওতালি মাধ্যম পিটিটিআই চালু হবে ঝাড়গ্রাম জেলায়। ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের কাছে ‘ডিআইইটি’ চত্বরে সাঁওতালি ভবন তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ওই চত্বরে রয়েছে ৩৫৪টি বহু পুরনো শাল গাছ। বেশ পুরনো আরও ষাটটি অন্য গাছও রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে পূর্ত দফতর জানিয়েছে, ওই চত্বরের বাঁ দিকে সাঁওতালি পিটিটিআই ভবন তৈরি করতে গেলে অন্তত দেড়শো শাল গাছ কাটতে হবে। এমন গাছ কাটার প্রস্তাবের বিষয়টি জানাজানি হতেই অরণ্যশহরের পরিবেশ কর্মীরা উদ্বিগ্ন। ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগের আহ্বায়ক শ্রীমন্ত রাউত বলেন, “উন্নয়নের দোহাই দিয়ে ফের শাল গাছ কাটার প্রশাসনিক-চক্রান্ত শুরু হয়েছে। পরিবেশ বাঁচিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা রূপায়নের দাবিতে আমরা পথে নামব।”
ঝাড়গ্রামের ডিস্ট্রিক্ট ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং-এর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শঙ্কর দত্ত বলেন, “আমাদের চত্বরে ফাঁকা জায়গাও আছে। শালগাছ না কেটে বিকল্প জায়গায় ভবনটি করার ব্যাপারে জেলা প্রশাসনকে প্রস্তাব দেওয়া হবে।”