কালো নৌকা পাচার করছে ‘কালো তেল’

পুলিশ জানিয়েছে, লঞ্চ থেকে ২০ ড্রাম তেল উদ্ধার হয়েছে। প্রতিটি ড্রামে ২০০ লিটার কেরোসিন ছিল। অৰ্থাৎ লঞ্চটিতে প্রায় চার হাজার  লিটার কেরোসিন ছিল বলে পুলিশের দাবি। যার আনুমানিক বাজার মূল্য দেড় লক্ষ টাকার বেশি। ঘটনায় সত্যনারায়ণ গিরি ও কানাই মণ্ডল নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

শান্তনু বেরা

কাঁথি শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৪১
Share:

সন্দেহজনক কালো নৌকা।

কেরোসিন পাচার হচ্ছিল লঞ্চে। খবর পেয়ে পুলিশের তল্লাশি অভিযানে বমাল সমতে ধরা পড়ল দু’জন। ওই ঘটনা উস্কে দিয়েছে কয়েক মাস আগে সমুদ্রের বুকে ভাসমান রহস্যজনক কালো বোটের স্মৃতি।

Advertisement

গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই জুনপুট, গোপালপুরের সমুদ্র উপকূলে কালো নৌকার উপস্থিতির কথা উপকূল পুলিশ ও মৎস্য দফতরের আধিকারিকদের জানিয়েছিলেন মৎস্যজীবীরা। নিয়ম অনুসারে পশ্চিমবঙ্গের ভুটভুটি, ট্রলার বা টু’সিলিন্ডার নৌকাগুলি কমলা রঙের হওয়ার কথা। তা হলে কালো নৌকা এল কী করে? সেই সময় পুলিশ এবং উপকূল রক্ষীবাহিনী তল্লাশি চালিয়েও কোনও কালো নৌকার সন্ধান পায়নি।

গত রবিবার রাতে সমুদ্রে ফের কালো নৌকা চলাচলের খবর পায় জুনপুট উপকূল থানার পুলিশ। তারা দ্রুত তল্লাশি অভিযানে নামে। রসুলপুর নদীর মোহনায় কাছে কালো এবং নীল রং করা একটি লঞ্চকে পুলিশ দেখতে পায়। সেই লঞ্চকে আটক করে তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর পরিমাণে কেরোসিন উদ্ধার হয়।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, লঞ্চ থেকে ২০ ড্রাম তেল উদ্ধার হয়েছে। প্রতিটি ড্রামে ২০০ লিটার কেরোসিন ছিল। অৰ্থাৎ লঞ্চটিতে প্রায় চার হাজার লিটার কেরোসিন ছিল বলে পুলিশের দাবি। যার আনুমানিক বাজার মূল্য দেড় লক্ষ টাকার বেশি। ঘটনায় সত্যনারায়ণ গিরি ও কানাই মণ্ডল নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরের বাসিন্দা। সোমবার দুই ধৃতকে কাঁথি আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।

লঞ্চ থেকে উদ্ধার কেরোসিন ভর্তি ড্রাম। নিজস্ব চিত্র

পুলিশের প্রাথমিকভাবে অনুমান, কেরোসিন পাচারের পিছনে বড় চক্র রয়েছে। কেরোসিন সাধারণত রেশনে বিক্রি হয়। কিন্তু এত পরিমাণে কেরোসিন কী ভাবে এবং কোথা থেকে খোলা বাজারে এল, তা নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেছে পুলিশ। ওই কেরোসিন কাদের জন্য আনা হচ্ছিল তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেল হেফাজতে থাকা সত্যনারায়ণ এবং কানাইকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে ওই সমস্ত বিষয়ে জানতে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়।

প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর থেকে বঙ্গোপসাগর দিয়ে ওই লঞ্চগুলিতে পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল এলাকায় কেরোসিন পাচার করা হয়। দাবি, ডিজেলের সঙ্গে ওই কেরোসিন মিশিয়ে মাছ ধরার ট্রলারে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

পুলিশের অনুমান, গত জুলাইয়ে যে সব কালো নৌকা দেখা গিয়েছিল, সেগুলিতেও কেরোসিন পাচার করা হয়ে থাকতে পারে। কেরোসিনের উৎস জানতে খবর দেওয়া হয়েছে সাগরের পুলিশকে। জলপথে কেরোসিন পাচার নিয়ে কড়া নজরদারির ব্যাপারে উপকূল রক্ষী বাহিনীকেও জানানো হয়েছে।

মৎস্য দফতরের সহ-মৎস্য অধিকর্তা রামকৃষ্ণ সর্দার বলেন, “ধরা পড়া লঞ্চটি মাছ ধরার লঞ্চ নয় বলে মনে হচ্ছে। মৎস্যজীবীদের কেউ কেউ জানিয়েছিলেন, জলপথে মাঝে মাঝে কালো নৌকা দেখা যায়। এটা সেরকম নৌকা কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “এই ঘটনার পিছনে কেরোসিন পাচারের বড় চক্র রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ডিজেলে ট্রলার বা অন্য জলযান চলে। কিন্তু ডিজেলের দাম বেড়েছে। সেই তুলনায় কেরোসিনের দাম কম। তাই কিছু কিছু জলযান ডিজেলের সঙ্গে কেরোসিন মিশিয়ে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করছে বলে খবর পেয়েছি। এমনই কোনও চক্রকে এই কেরোসিন দেওয়ার জন্য পাচার হচ্ছিল বলে অনুমান।’’

সমুদ্রে রহস্যজনক কালো নৌকা নিয়ে পুলিশ সুপারের দাবি, ‘‘মাঝে মাঝে সমুদ্রে কালো নৌকো দেখা যেত বলে মৎস্যজীবীরা জানিয়েছিলেন। এটা তেমনই কোনও নৌকা কি না, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন