কাজের দাবিতে খেদানোয় বাধা একাংশ গ্রামবাসীর

ঝাড়খণ্ড থেকে ৪০টি হাতি রাজ্যে

হাতি খেদানোর দলে ৩০ জন বাসিন্দাকে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়েছিল বন দফতর। দলে আরও স্থানীয় লোকজনকে নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন গ্রামবাসী। বন দফতর গ্রামবাসীর দাবি মানেননি।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৬ ০২:০৮
Share:

তাড়ানো হচ্ছে হাতির পাল। ফাইল ছবি।

হাতি খেদানোর দলে ৩০ জন বাসিন্দাকে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়েছিল বন দফতর। দলে আরও স্থানীয় লোকজনকে নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন গ্রামবাসী। বন দফতর গ্রামবাসীর দাবি মানেননি।

Advertisement

আর তার ফলে সোমবার সন্ধ্যায় ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোরে হাতি তাড়ানোর সময় বনকর্মী ও হুলাপার্টির লোকজনকে বাধা দিলেন গ্রামবাসীরা। কাঁকড়াঝোর গ্রামের কিছু বাসিন্দার বিরুদ্ধে এক বিট অফিসার-সহ বনকর্মীদের মারধর করার অভিযোগও উঠেছে।

বন দফতরের অভিযোগ, স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বনকর্মী ও হুলাপার্টির কাজে বাধা দেওয়ায় ঝাড়খণ্ড সীমানা পেরিয়ে দলমার পালের কমপক্ষে চল্লিশটি হাতি বেলপাহাড়িতে ঢুকে পড়েছে। হাতিগুলি রয়েছে দলদলির জঙ্গলে। এ বিষয়ে বেলপাহাড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন কাঁকড়াঝোরের ভারপ্রাপ্ত বিট অফিসার গুরুদাস মুর্মু। অভিযোগ পেয়ে অভিযুক্তদের ধরতে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। এখনও কেউ অবশ্য গ্রেফতার হয়নি।

Advertisement

জঙ্গলমহলে ক্রমাগত বুনো হাতির হামলায় প্রাণহানি ও সম্পত্তি ক্ষতির ঘটনায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রীতিমতো বিরক্ত। গত জুনে ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে এসে বনকর্তাদের কড়া ধমক দেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরই বুনো হাতির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে তৎপর হয়ে উঠেছে বন দফতর। মাস খানেক আগে হাতির একটি পাল দলমায় ফিরে যাওয়ার পরেই ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী কাঁকড়াঝোরে পাহারায় রয়েছেন বন কর্মীরা। কাঁকড়াঝোর-সহ আশেপাশের মাকড়ভুলা, আমলাশোল, আমঝর্না গ্রামের বাসিন্দাদের দৈনিক ২২৪ টাকা মজুরি ও রাতের খাবারের ভিত্তিতে হাতি খেদানোর দলে নেওয়া হয়েছে।

বন দফতর সূত্রের খবর, বন দফতরের প্রশিক্ষিত ৬০ জন হুলাপার্টির সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীরাও রাত জেগে করিডোর পাহারা দেন। এর ফলে গত এক মাসে হাতির পাল আর নতুন করে ঝাড়খণ্ডের দিক থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরে ঢুকতে পারেনি। স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রতিদিন পর্যায়ক্রমে এক একটি গ্রামের ৩০ জন বাসিন্দাকে রাত পাহারা ও হাতি খেদানোর দলে নেওয়া হয়। সম্প্রতি কাঁকড়াঝোরের বাসিন্দারা দাবি করেন, কাঁকড়াঝোর গ্রামের আরও বাসিন্দাকে প্রতিদিন দলে নিতে হবে। না হলে তাঁরা রাত পাহারা ও হাতি খেদানোর কাজ করতে দেবেন না। এই পরিস্থিতিতে সমস্যা মেটানোর জন্য কিছু দিন আগে এডিএফও (ঝাড়গ্রাম) শিবানন্দ রাম কাঁকড়াঝোরের বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। কিন্তু গ্রামবাসীর এমন অন্যায্য দাবি মানা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয় বন দফতর। এই নিয়ে এলাকায় কয়েকদিন ধরেই বন দফতরের সঙ্গে কাঁকড়াঝোরের কিছু বাসিন্দার মধ্যে তিক্ততা তৈরি হয়েছিল।

স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার সন্ধ্যায় ঝাড়খণ্ডের দিক থেকে গোটা ৪০ হাতি দু’দিক থেকে কাঁকড়াঝোরে ঢোকার চেষ্টা করতেই হুলাপার্টি ও বনকর্মীরা হাতি খেদাতে শুরু করেন। অভিযোগ, ওই সময় কাঁকড়াঝোরের কিছু বাসিন্দা বনকর্মীদের বাধা দেন। বাসিন্দাদের হাতে নিগৃহীত হন ভারপ্রাপ্ত বিট অফিসার গুরুদাসবাবু। কয়েকজন বনকর্মীকে মারধর করা হয়। তাঁদের হাত থেকে হাতি তাড়ানোর লাইট ও সরঞ্জাম কেড়ে নেওয়া হয়। শুরু হয় তুমুল গোলমাল। খবর পেয়ে স্থানীয় সিআরপি ক্যাম্পের জওয়ানরা এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। পৌঁছয় বেলপাহাড়ি থানার পুলিশ। বন দফতরের আধিকারিকরা কাঁকড়াঝোরে পৌঁছন। কিন্তু ততক্ষণে, সীমানা পেরিয়ে বেলপাহাড়ির দলদলির জঙ্গলে ঢোকে চল্লিশটি হাতি।

ডিএফও (ঝাড়গ্রাম) বাসবরাজ হোলেইচ্চি বলেন, “কর্তব্যরত বনকর্মীদের মারধর ও সরকারি কাজে বাধা দিয়েছেন স্থানীয় কিছু লোকজন। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।” হাতির দলটি যাতে লোকালয়ে না ঢুকে পড়তে পারে, সেজন্য বনকর্মী ও হুলাপার্টির লোকজন চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন ডিএফও। এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি পুলিশ। ফোন ধরেননি ঝাড়গ্রামের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। এসএমএসেরও জবাব দেননি এসপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন