Aged Doctor Of Jhargram

নব্বইয়েও স্কুটি ছুটিয়ে ‘কল’-এ, রোগী দেখেন ‘ফি’ ছাড়াও

১৯৬০ সালে ওয়েস্টবেঙ্গল হেল্‌থ সার্ভিসে যোগ দেন। কলকাতা ও বিভিন্ন জেলার হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়েছেন।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

 ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:০৯
Share:

ঝাড়গ্রাম শহরের রাস্তায় নতুন কেনা স্কুটি চালাচ্ছেন সাধুচরণ পাত্র। নিজস্ব চিত্র ।

পুরনো স্কুটিটি বিগড়ানোয় কার্যত হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন পরিজনেরা। কিন্তু তাঁকে রুখবে সাধ্য কার!

Advertisement

৯০ বছর বয়সে নতুন স্কুটি কিনে দিব্যি তা চালিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ঝাড়গ্রাম শহরের সাধুচরণ পাত্র। নতুনডিহির বাসিন্দা এই বর্ষীয়ান চিকিৎসক নানা সেবামূলক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। তাই এখনও প্রতিদিন তাঁকে নানা কাজে বেরোতে হয়। এ ছাড়া এখনও ‘কল’এ রোগী দেখতে যান। সপ্তাহে একদিন শহরের একটি স্কুলে গিয়ে নিখরচায় পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। সপ্তাহের ছ’দিন বাড়ির চেম্বারে রোগীও দেখেন। এই দুর্মূল্যের বাজারেও সাধুচরণের ফি বাড়েনি। এ ছাড়া গরিবদের থেকে ফি নেন না। আর বাকিদের থেকে ফি বাবদ যা নেন, তা এককথায় অবিশ্বাস্য! ঝাড়গ্রাম শহরে সকলে এক ডাকে চেনেন চিকিৎসক ‘এস সি পাত্র’কে। এই নামেই বেশি পরিচিত তিনি।

১৯৩৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সাধুচরণের জন্ম ঝাড়গ্রামের বেলিয়াবেড়া থানার আশুই গ্রামে। অভাবী পরিবারের সাধুচরণ পরবর্তী-কালে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস উত্তীর্ণ হন। ১৯৬০ সালে ওয়েস্টবেঙ্গল হেল্‌থ সার্ভিসে যোগ দেন। কলকাতা ও বিভিন্ন জেলার হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়েছেন। সাবেক ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক থাকাকালীন ১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে সরকারি চিকিৎসকের চাকরি ছেড়ে দেন। সাইকেলে চড়ে লালগড়, বিনপুর, ঝাড়গ্রাম, বেলপাহাড়ির বিভিন্ন গ্রামে রোগী দেখা শুরু করেন। পরে ঝাড়গ্রাম শহরে নিজের বাড়িতে চেম্বার করলেও ঘুরে ফিরে রোগী দেখা ছাড়েননি। আটের দশকে একটি মোপেড কিনে তাতে চড়েই গ্রামগঞ্জ ঘুরে রোগী দেখতেন।

Advertisement

মোপেডটি অচল হওয়ায় বছর বারো আগে স্কুটি কিনে, সেটিতে চড়তে শুরু করেন। কিন্তু চলতি বছরের গোড়ায় সেই স্কুটি বিকল হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা ভেবেছিলেন, এ বার হয়তো সাধুচরণ এ বার ক্ষান্ত হলেন। কিন্তু সে আশায় জল ঢেলে কয়েকদিন আগে শহরের একটি শো-রুমে গিয়ে নতুন স্কুটি কিনেছেন সাধুচরণ।

ওই শো-রুমের মালিক অনিলকুমার মিশ্র বলছেন, ‘‘আমরা নতুন স্কুটি বাড়িতে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলাম। ডাক্তারবাবু আমাদের ধমক দিয়ে নিজেই শো-রুম থেকে স্কুটি চালিয়ে বাড়ি যান।’’ স্থানীয় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পুর-প্রতিনিধি বিপ্লব শীট বলছেন, ‘‘৯০ বছর বয়সেও সাধুবাবু দারুণ ভাবে কর্মক্ষম। শহরের জনবহুল রাস্তায় যানবাহনের ভিড়ে উনি স্কুটি চালিয়ে কী ভাবে ঘোরেন, এটা আমাদের সকলের
কাছে বিস্ময়ের।’’

সাধুচরণের বড় ছেলে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বছর একষট্টির সুব্রতকুমার পাত্র বলছেন, ‘‘বাবা আমার চেয়েও অনেক বেশি সুস্থ-সবল। এখনও সোজা হাঁটেন। বাড়ির একতলায় চেম্বার। দোতলায় বাবা থাকেন। সারা দিনে বহুবার বাড়ির সিঁড়ি ভাঙেন। আমাদের আপত্তি ধোপে টেকেনি।’’ সাধুচরণ বলছেন, ‘‘রোজ ভোরে হাঁটি। তারপর সকাল থেকে দুপুর চেম্বারে রোগী দেখি। সারাদিনে স্কুটি চালিয়ে নানা কাজ সারি। কল পেলে রোগী দেখতেও যাই। মাংস বাদে সব কিছুই পরিমিত খাই।’’

ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি পদে রয়েছেন সাধুচরণ। এ ছাড়াও ঝাড়গ্রাম স্টুডেন্টস হেল্‌থ হোমের সঙ্গেও যুক্ত। ১৯৮৫ সালে ঝাড়গ্রাম ওল্ড বয়েজ় অ্যাসোসিয়েশন গঠন করেন। এখনও ওই সংগঠনের বার্ষিক মেগা আড্ডার আয়োজন করেন সাধুচরণ। ঝাড়গ্রাম মডেল স্কুলের স্কুলের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। প্রতি বৃহস্পতিবার স্কুলে গিয়ে পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। সে দিন বাড়ির একতলার চেম্বার বন্ধ। সে দিন বিনা ফি’তে রোগী
দেখারও দিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন