শাসকের ভোট কমেছে শহরে

জেলার দু’টি আসন বাদ দিয়ে সর্বত্র ঘাসফুল ফুটেছে। একদা লাল গড় পশ্চিম মেদিনীপুরে লালের লেশ মাত্রও অবশিষ্ট নেই। যদিও শহর মেদিনীপুরে ভোট ব্যাঙ্কে ধস অস্বস্তিতে রাখছে শাসক শিবিরকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৬ ০১:২৬
Share:

জেলার দু’টি আসন বাদ দিয়ে সর্বত্র ঘাসফুল ফুটেছে। একদা লাল গড় পশ্চিম মেদিনীপুরে লালের লেশ মাত্রও অবশিষ্ট নেই। যদিও শহর মেদিনীপুরে ভোট ব্যাঙ্কে ধস অস্বস্তিতে রাখছে শাসক শিবিরকে।

Advertisement

২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে মেদিনীপুর পুর- এলাকা থেকে তৃণমূল প্রার্থী মৃগেন মাইতি প্রায় ৩২ হাজার ভোটের ‘লিড’ পেয়েছিলেন। অন্য দিকে, মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের গ্রামাঞ্চলে প্রায় ৪ হাজার ভোটে পিছিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। শেষমেশ প্রায় ২৮ হাজার ভোটে জয় পান মৃগেনবাবু। আর এ বার ভোটে মেদিনীপুর শহর থেকে প্রায় ১৪ হাজার ভোটে ‘লিড’ পেয়েছে তৃণমূল। গ্রামাঞ্চল থেকে লিড এসেছে প্রায় ১৮ হাজার ভোটের।

মেদিনীপুর বিধানসভার মধ্যে গ্রামাঞ্চল এবং শহরাঞ্চল- দু’টি এলাকাই রয়েছে। শহরাঞ্চলের মধ্যে রয়েছে মেদিনীপুর পুর- এলাকা। গ্রামাঞ্চলের মধ্যে রয়েছে মেদিনীপুর সদর ব্লকের চারটি অঞ্চল এবং শালবনি ব্লকের পাঁচটি অঞ্চল। বর্তমানে মেদিনীপুর পুরবোর্ড তৃণমূলের দখলেই রয়েছে। তা হলে কেন শাসকের ভোট কমল? শাসক- শিবিরেরই একাংশের দাবি, কয়েকটি এলাকায় অন্তর্ঘাত হয়েছে। দলের একাংশ নেতা-কর্মী ভোট- প্রচারে তেমন সক্রিয় ছিলেন না। ফলে, দলের বক্তব্য মানুষের কাছে ঠিক মতো পৌঁছনো যায়নি!

Advertisement

সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক তথা মেদিনীপুরের প্রার্থী সন্তোষ রাণা বলেন, “শহরে আমাদের ভোট বেড়েছে। আসলে যে এলাকায় নির্বিঘ্ন নির্বাচন হয়েছে, সেখানেই ফল ভাল হয়েছে।” মেদিনীপুরের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী তথা শাসক দলের জেলা চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি বলেন, “ফলাফল নিয়ে বিশ্লেষণ করতে হবে। কোথাও দুর্বলতা- ঘাটতি থাকলে তা খুঁজে বের করতে হবে।” জেলা তৃণমূলের এক নেতা মানছেন, “কিছু তো কারণ রয়েছে। না- হলে অন্য এলাকায় যেখানে দলের জয়জয়কার, সেখানে শহরে ভোট কমবে কেন! বিশেষ করে মেদিনীপুরের মতো শহরে। যে শহর কখনওই বামপন্থীদের বিপুল ভাবে সমর্থন করেনি।”

শাসকদলের একাংশের দাবি, ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ছিল। তাই দলের প্রার্থী ভোট একটু বেশিই পেয়েছিলেন। দলের অন্য একটি অংশের অবশ্য মত, শহর যে মুখ ফেরাচ্ছে সেই ইঙ্গিত তো ২০১৩ সালের পুর- নির্বাচনেই মিলেছে। ওই নির্বাচনে পুর- এলাকার ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টি পেয়েছিল তৃণমূল। পুরবোর্ড ধরে রাখতে হলে নূন্যতম ১৩টি আসনই প্রয়োজন ছিল। দল একটি আসন কম পেলেই পুরবোর্ডের হাতবদল হয়ে যেতে পারত।

মেদিনীপুর বিধানসভা এলাকায় ২৯৬টি বুথ রয়েছে। এরমধ্যে গ্রামাঞ্চলের ৯টি অঞ্চলে ১৪৩টি বুথ। এবং পুর- এলাকায় ১৫৩টি বুথ। হিসেব বলছে, গ্রামাঞ্চলের ওই ১৪৩টি বুথের মধ্যে ২১টি বুথে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। শহরের ১৫৩টি বুথের মধ্যে ২৬টি বুথে পিছিয়ে রয়েছে শাসক দল।

গত পুর- নির্বাচনে কংগ্রেস-তৃণমূলের জোট হয়নি। দু’দল পৃথক ভাবে লড়াই করে। বিধানসভার ফল বলছে, তৃণমূল পুরভোটের ফলও ধরে রাখতে পারেনি। দলের একাংশের ব্যাখ্যা, পুর- পরিষেবা নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ থাকতে পারে। মেদিনীপুরের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী মৃগেনবাবু অবশ্য বলছেন, “ফলাফলের বুথ ভিত্তিক পর্যালোচনা হবে। কী হয়েছে, কেন হয়েছে, সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন