CPM

শিক্ষা দুর্নীতিতে বেকসুর প্রাক্তন সিপিএম নেত্রী

মিতা জানাচ্ছেন, তাঁদের একটি পারিবারিক জমি দখল করার চেষ্টা করেছিলেন তৎকালীন স্থানীয় সিপিএম নেতারা। তা নিয়ে ২০০৫ সালে গোলমাল হয়। তাঁর বাড়িতেও হামলা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৫১
Share:

সিপিএমের প্রাক্তন মহিলা নেত্রী মিতা বেজ। নিজস্ব চিত্র

শিক্ষায় দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় রাজ্য। নেতা, মন্ত্রীরা সব জেল খাটছেন। এই আবহেই স্কুল শিক্ষকের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে টাকা আত্মসাতের এক দশকের পুরনো মামলায় বেকসুর খালাস পেলে এক প্রাক্তন পেলেন সিপিএম নেত্রী।

Advertisement

মিতা বেজ নামে ওই মহিলাকে বেকসুর খালাস দিয়েছে ঝাড়গ্রাম বিচারবিভাগীয় আদালত। সোমবার বিচারক স্মরজিৎ রায়ের এজলাসে রায়দান হয়। সরকারি কৌঁসুলি অনিল মণ্ডল বলেন, ‘‘তথ্য প্রমাণের অভাবে অভিযুক্ত মিতা বেজকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন বিচারক।’’ অভিযুক্তের আইনজীবী সুমন দাস মহাপাত্রের বক্তব্য, ‘‘পরিকল্পিতভাবে আমার মক্কেলকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছিল। আদালয়ের রায়ে সেটা প্রমাণিত।’’

বাম আমলে বিনপুরের সাহাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মিতা ছিলেন সিপিএমের মহিলা সমিতির নেত্রী। রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের ঠিক আগে, ২০১১ সালের ২৯ মার্চ বিনপুর থানায় কুড়চিবনি গ্রামের মদন মণ্ডল অভিযোগ করেন, ২০০১ সালে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে মিতা তাঁর থেকে এক লক্ষ টাকা চেয়েছিলেন। মদন প্রথমে ৬৮ হাজার টাকা দেন। পরে জমি বন্ধক রেখে ও ধার করে বাকি টাকাও তিনি মিতাকে দেন। কিন্তু দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও চাকরি মেলেনি। টাকা ফেরত চেয়েও পাননি বলে অভিযোগ ছিল মদ‌নের। বছর দশেক পরে মিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন মদন। গ্রেফতার হন মিতা। ঝাড়গ্রাম আদালত তাঁর জামিন খারিজ করে। পরে তৎকালীন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা আদালতে মিতার জামিন মঞ্জুর হয়। ২০১১ সালের ২৭ জুন ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলাটি দায়রা সোপর্দ হয়ে ২০১৫ সালে বিচার শুরু হয়। ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করে আদালত। কিন্তু মিতা যে টাকা নিয়েছেন সেটা প্রমাণ করতে পারেননি তদন্তকারী অফিসার।

Advertisement

এক সময়ে সিপিএমের মহিলা সমিতির নেত্রী ছিলেন মিতা। তাঁর স্বামী প্রয়াত নারায়ণচন্দ্র বেজ ছিলেন অবসর প্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক। এখন সত্তর ছুঁই ছুঁই মিতা বলছেন, ‘‘১৯৮৯ সালে মহিলা সংগঠন ছেড়ে দিয়েছিলাম। তারপর দলের সদস্য পদ পুর্ননবীকরণ করাইনি। জমিজমা সংক্রান্ত বিবাদেই আমার নামে টাকা নেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ করা হয়। বিচারে সত্য উদঘাটিত হল। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে এটাই শান্তি।’’

মিতা জানাচ্ছেন, তাঁদের একটি পারিবারিক জমি দখল করার চেষ্টা করেছিলেন তৎকালীন স্থানীয় সিপিএম নেতারা। তা নিয়ে ২০০৫ সালে গোলমাল হয়। তাঁর বাড়িতেও হামলা হয়। পরে তৎকালীন মহকুমাশাসক আর এরন ইজরায়েলের হস্তক্ষেপে জমি দখলমুক্ত হয়ে ফিরে পান মিতার পরিবার।

মিতা বলছেন, ‘‘সেই আক্রোশেই সিপিএমের নেতারা আমার নামে ভুয়ো অভিযোগ করিয়েছিলেন।’’ মিতার অভিযোগ প্রসঙ্গে স্থানীয় সিপিএম নেতা তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য উদ্ধব মাহাতোর বক্তব্য, ‘‘মিতা অনেক আগেই দল ছেড়ে দিয়েছিলেন। আমাদের বিরুদ্ধে উনি ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।’’ উদ্ধবের আরও দাবি, ‘‘মদন যখন অভিযোগ করেন, তখন আমি শিলদা লোকাল কমিটির সম্পাদক ছিলাম। উনি আমাদের কাছেও অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন। বলেছিলাম টাকার বিনিময়ে চাকরি হয় না। টাকা উদ্ধারে তিনি আইনের আশ্রয় নিলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।’’

অভিযোগকারী মদন মণ্ডলের মোবাইল বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন