তাজপুরের পর নজরে দিঘা

বেআইনি নির্মাণে নোটিস ডিসেম্বরেই, দাবি

অবশেষ টনক নড়েছে প্রশাসনের। তাজপুরের সৈকতে অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলতে নোটিস জারি করেছে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। প্রশ্ন হল এই নজর দিঘার উপর পড়বে কবে? প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাজপুর, দিঘা, মন্দারমণি— সর্বত্রই রমরমিয়ে চলছে অবৈধ হোটেল নির্মাণের কাজ।

Advertisement

সুব্রত গুহ

কাঁথি শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০৩
Share:

জোর কদমে চলছে হোটেল তৈরি। নিজস্ব চিত্র।

অবশেষ টনক নড়েছে প্রশাসনের। তাজপুরের সৈকতে অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলতে নোটিস জারি করেছে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। প্রশ্ন হল এই নজর দিঘার উপর পড়বে কবে?

Advertisement

প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাজপুর, দিঘা, মন্দারমণি— সর্বত্রই রমরমিয়ে চলছে অবৈধ হোটেল নির্মাণের কাজ। ওল্ড দিঘা সৈকতের দু’শো মিটারের মধ্যেই অক্টোবর নাগাদ শুরু হয়েছিল দু’টি হোটেলের দোতলা নির্মাণ। অবৈধ ওই নির্মাণের কাজ চলছে প্রশাসনের নাকের ডগায়, বিশ্ব বাংলা উদ্যান থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে। অথচ প্রায় কিছুই করেনি প্রশাসন।

দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় কিছু হোটেলের মালিক ও বাসিন্দারা অভিযোগ করছিলেন, রাজ্যের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র দিঘাতে কোস্টাল রেগুলেটিং জোন-এর আইন উড়িয়েই অবাধে চলে বেআইনি নির্মাণ। আইন অনুযায়ী সমুদ্র সৈকতের ৫০০মিটারের মধ্যে যে কোনও ধরনের নির্মাণের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এমন নির্মাণের বিরুদ্ধে একাধিকবার প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও। কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন। এমনকী হকারদেরও সৈকত থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। বরং প্রশ্ন উঠছে দিঘার সৈকতে উন্নয়ন পর্ষদের নিজের ক্যান্টিন নিয়েও। স্থানীয়দের অভিযোগ, হোটেলগুলির তো কথাই নেই। সৈকতে নতুন করে তৈরি হচ্ছে পর্ষদের ক্যান্টিন ঘর।

Advertisement

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক দিঘার বেশ কিছু হোটেল মালিকও অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছেন। তাঁদের কথায়, “প্রশাসনের নাকের ডগায় গত এক বছরে ওল্ড ও নিউ দিঘায় একের পর এক হোটেল তৈরি হয়েছে। সবই বেআইনি।’’ এ বছর পুজোর ছুটির সুযোগ নিয়ে সৈকতের কাছেই দু’টি হোটেল রাতারাতি দিঘায় নির্মাণ কাজ চালিয়েছে। প্রশাসন দেখেও দেখেনি। কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।

দিঘা শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক তপন মাইতির দাবি, “যে দু’টি হোটেলের বিরুদ্ধে বেআইনি ও অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে সেগুলি আমাদের সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত নয়। ফলে এতে আমাদের কিছু বলার থাকতে পারেন না।”

বরং তপনবাবু অভিযোগ করেন, কোস্টাল রেগুলেটিং জোন-এর নিয়ম অনুযায়ী যে কোন নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেটা সরকারি বা বেসরকারি সর্বত্রই প্রযোজ্য। কিন্তু দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ নিজেও তো সৈকতের ধারে নিজেদের ক্যান্টিনের সংস্কার করে নতুন ঘর তৈরি করছে। নিজেই নিজের আইন ভাঙছে।

দিঘায় যে কোনও নির্মাণের জন্য রামনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতির কাছে গৃহ নির্মাণের অনুমোদন নিতে হয়। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নিতাই সার স্বীকার করেছেন, অনুমোদন ছাড়াই হোটেলে নির্মাণ চলছে। নিতাইবাবুর দাবি, ‘‘অনুমোদনহীন হোটেলের নির্মিত অংশ প্রয়োজনে প্রশাসনের উদ্যোগে ভেঙ্গে ফেলা হবে।” দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান ও কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী জানিয়েছেন, “কাঁথি সমুদ্র উপকুলের পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে যে সব হোটেল, লজ বেআইনি ভাবে তৈরি হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেগুলি ভেঙে ফেলা হবে। ইতিমধ্যেই তাজপুরে নোটিস জারি হয়েছে। এরপরই দিঘা মন্দারমণির পালা।”

পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ফেলার দায়িত্ব স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতিরই। রামনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাহী আধিকারিক ও বিডিও অনুপম বাগ জানিয়েছেন, “নজর এড়িয়ে কিছু হোটেল লজ তৈরি হয়েছে। সেগুলিকে চিহ্নিত করে নোটিস পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু হচ্ছে।” পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নিতাই সার জানান, ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহেই নোটিস পাঠানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন