Higher Secondary Exam 2024

নৈঃশব্দ পেরিয়েই সফল হওয়ার লড়াই

কোলাঘাটের পুলশিটা পঞ্চায়েতের মিহিটিকরি গ্রামে বাড়ি রোহিতের। বাবা গোপাল সরকার ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। মা মিন্টু গৃহবধূ। অভাবের সংসার।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:০৭
Share:

রোহিত সরকার। নিজস্ব চিত্র ।

জন্ম থেকেই শোনার ক্ষমতা ছিল না তার। ছোটবেলা থেকে শুনে শুনেই তো সকলে কথা বলা শেখে। শুনতে পেত না বলে কথা বলার ক্ষমতাও হারিয়েছিল রোহিত সরকার। মূক ও বধির হওয়ায় একাধিকবার পড়াশোনা থমকেছে। তবে সে হার মানেনি। পরিবারের একমাত্র ছেলের প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর লড়াই চালিয়েছেন মা-বাবাও। অভিভাবকদের সহযোগিতা এবং নিদের জেদ-নিষ্ঠাকে সম্বল করে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে কোলাঘাটের রোহিত।

Advertisement

কোলাঘাটের পুলশিটা পঞ্চায়েতের মিহিটিকরি গ্রামে বাড়ি রোহিতের। বাবা গোপাল সরকার ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। মা মিন্টু গৃহবধূ। অভাবের সংসার। সংসারের সাহায্য করতে ফুলের মালা তৈরি করেন রোহিতের মা। তিন বছর বয়সে তাঁরা জানতে পারেন ছেলের প্রতিবন্ধকতার কথা। চিকিৎসকরা জানান, রোহিত ৯০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। ছেলেকে গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করেন রোহিতের মা। কিন্তু সেখানে পড়াশোনা বুঝতে অসুবিধা হওয়ায় তাকে জেলার একটি প্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি করা হয়। কয়েক মাস ক্লাস করার পর রোহিত সেই স্কুলে যেতে না চাওয়ায় ফের গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে তাকে ভর্তি করা হয়।

রোহিতকে অক্ষর চেনাতে দিনরাত পরিশ্রম করেন তাঁর মা। খাতায় লিখে লিখে ছেলেকে অক্ষর চেনাতেন তিনি। প্রাথমিকের চৌকাঠ পেরিয়ে দেউলিয়া হীরারাম হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয় রোহিত। পড়াশোনার পাশাপাশি ভাল ছবি আঁকত সে। ১৮৭ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছিল। তারপর একাদশে কলা বিভাগ নিয়ে ভর্তি হয়।

Advertisement

শুক্রবার প্রথম দিন পরীক্ষা দেওয়ার পর যথেষ্ট খুশি রোহিত। কিছু বলতে না পারলেও পরীক্ষা যে ভাল হয়েছে, তা তার চোখমুখ বলে দিচ্ছিল। মা মিন্টু সরকার বলেন, "ও ভালভাবেই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে যাবে। ভবিষ্যতে আঁকা নিয়েই ওকে পড়াতে চাই।" রোহিতের বাবা গোপাল সরকারের কথায়, ‘‘অভাবের সংসার। তার উপর ছেলে প্রতিবন্ধী। তবে আমরা মনোবল হারাইনি।ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।’’ মাসে এক হাজার টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পায় রোহিত। সেই টাকা রোহিতের পড়াশোনায় খরচ করেন বাবা-মা।

স্কুলের শিক্ষকেরাও রোহিতের দিকে বিশেষ নজর দিতেন। দেউলিয়া হীরারাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌরহরি পাল বলেন, ‘‘রোহিত আগ্রহী ছাত্র। প্রতিবন্ধকতা নিয়েও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের তরফে আমরা ওকে একটি বৃত্তি দিয়েছি। আমরা চাই ও জীবনে প্রতিষ্ঠিত হোক।"

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন