আধার-জট কাটবে কবে, প্রশ্ন পূর্বে

সরকারি প্রকল্পে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বার্ধক্য ভাতার টাকা পেতে ভরসা এই কার্ড। গ্যাসের ভর্তুকি পেতে পরিচয় পত্রের সঙ্গে আধার কার্ডের নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক। এমন নানা কাজে বাধ্যতামূলক হওয়ার পরেও আধার কার্ড হাতে পাননি এমন মানুষের সংখ্যা পূর্ব মেদিনীপুরে নিছক কম নয়।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৬ ০১:৪৬
Share:

সরকারি প্রকল্পে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বার্ধক্য ভাতার টাকা পেতে ভরসা এই কার্ড।

Advertisement

গ্যাসের ভর্তুকি পেতে পরিচয় পত্রের সঙ্গে আধার কার্ডের নম্বর থাকা বাধ্যতামূলক।

এমন নানা কাজে বাধ্যতামূলক হওয়ার পরেও আধার কার্ড হাতে পাননি এমন মানুষের সংখ্যা পূর্ব মেদিনীপুরে নিছক কম নয়। প্রশাসনের হিসেব বলেছে, জেলার প্রায় ৫০ লক্ষ বাসিন্দার মধ্যে এখনও ৬ লক্ষ বাসিন্দার আধার কার্ড তৈরির কাজ বাকি। তাই আধার কার্ড তৈরির জন্য চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়সীমা দেওয়া হলেও তা বাড়িয়ে করা হয়েছে আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত। এখন যে গতিতে কাজ চলছে তাতে সেই সময়ের মধ্যে ওই বাসিন্দাদের হাতে কার্ড পৌছাবে তা নিয়ে ধন্দে জেলা প্রশাসনও।

Advertisement

পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ট্রেজারি) প্রশান্ত অধিকারী অবশ্য বলেন, ‘‘জেলার অধিকাংশ বাসিন্দাদের আধার কার্ড তাঁদের হাতে পৌঁছে গিয়েছে। অনেক বাসিন্দাদের আধার কার্ড ডাকযোগে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। যে সব বাসিন্দাদের এখনও কার্ড তৈরি হয়নি তাঁদের জন্য বিভিন্ন এলাকায় শিবির করা হচ্ছে।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আধার কার্ড তৈরির জন্য শিবিরে বাসিন্দাদের ছবি তোলা ও তাঁদের পরিচয়মূলক বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ কাজের জন্য দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বর্তমানে জেলায় মোট ১৬ টি যন্ত্র নিয়ে কাজ করছে। একটি যন্ত্র দিয়ে গড়ে প্রতিদিন মোট ৬০ জন বাসিন্দার ছবি তোলা ও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ফলে জেলার বিভিন্ন এলাকায় শিবিরে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১০০০ বাসিন্দার ছবি তোলা ও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেই হিসেবে জেলার ২৫ টি ব্লক ও ৫ টি পুরসভা এলাকা মিলিয়ে ৬ লক্ষ বাসিন্দার আধার কার্ড তোলার জন্য আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। সে কারণেই সময়সীমা বাড়ানো হলেও আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেও সেই কাজ করা যাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছে। আর সেটা আন্দাজ করেই প্রশান্তবাবু বলেন, ‘‘জেলার বিভিন্ন ব্লক ও পুরসভায় শিবির করা হচ্ছে। কাজ দ্রুত শেষ করতে বেশি সংখ্যক যন্ত্র ব্যবহারের জন্যও বলা হয়েছে।’’

আধার তৈরির কাজের ধীর গতি নিয়ে জেলার একাংশ বাসিন্দাদের মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এমনকি কয়েক সপ্তাহ আগে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বিডিও অফিসে ছবি তোলার জন্য দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্থানীয় লোকজন। কিন্তু তারপরও সময়মতো কাজ না হওয়ায় হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয়রা। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

কার্ড তৈরি করতে গিয়ে বাসিন্দাদের নাজেহাল হওয়ার অভিজ্ঞতা কম নয়। হরিহরপুরের বাসিন্দা গৌরহরি দাসের কথায়, ‘‘আধার কার্ড তৈরির জন্য দু’বার ছবি তুলেও সেটা হাতেই পেলাম না। ফের শিবিরে গিয়ে ছবি তুলতে চাইলেও শিবির হচ্ছে কই?’’ নন্দকুমারের নাড়াদাঁড়ি গ্রামের বাসিন্দা শুভব্রত ভট্টাচার্য কাজের সূত্রে মালদায় থাকেন। শুভব্রতর কথায়, ‘‘প্রথমবার ব্লক অফিসে ছবি তোলাতে গিয়ে দেখি তালিকায় আমার নাম নেই। পরে তালিকায় নাম উঠলেও গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে শিবিরে আসতে পারিনি। কবে শিবির হবে বুঝতে পারছি না।’’

সমস্যার কথা মানছেন নন্দকুমার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকুমার বেরা বলেন, ‘‘ব্লকের ৮৫ শতাংশ বাসিন্দার আধার কার্ড তৈরির কাজ হয়ে গিয়েছে। বাকিদেরও আধার কার্ড তৈরি করতে শিবির হচ্ছে। ১৫ দিন আগে ব্লকে শেষ বার শিবির হয়েছিল। তারপর কবে শিবির এখনও জানানো হয়নি।’’ সমস্যার কথা মানছেন তমলুকের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেনও। তাঁর কথায়, ‘‘১০ দিন আগে শেষবার এই শিবির হয়েছে। আগামী সপ্তাহে ফের শিবির হবে বলে জানানো হয়েছে। শিবিরের সংখ্যা বাড়িয়ে দ্রুত আধার কার্ড তৈরির জন্য প্রশাসনের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন