গেঁওখালিতে পিকনিকদলের উদ্ধার ৬

নৌকাডুবি, প্রশ্ন সেই নজরদারিতে

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে গেঁওখালিতে নদীবক্ষে থাকা পরিস্রুত পানীয় জল প্রকল্পের কাছে একটি বয়ায় ধাক্কা মেরে উল্টে নৌকাটি। অভিযোগ, যাত্রীদের উদ্ধারের পর দেখা যায় সকলেই মদ্যপ ছিলেন। ২০১০ সালে কোলাঘাটের নাউপালায় পিকনিক করতে এসে রূপনারায়ণে নৌকাভ্রমণে বেরিয়ে বেরিয়ে মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ১১ জনের।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:১৬
Share:

হলদিয়ার টাউনশিপ ঘাট। যাত্রীদের জন্য লাইফ জ্যাকেটের বালাই নেই। নিজস্ব চিত্র

পিকনিক করে ফেরার পথে নৌকাডুবিতে কোনওরকমে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন নৌকার ৬ জন। মঙ্গলবার রাতে গেঁওখালির কাছে ওই দুর্ঘটনায় পুলিশ ও গ্রামের লোকজন ৬ জনকে উদ্ধার করেছে। কিন্তু যে ভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে তাতে ফের পিকনিকের সময় নৌকা নিয়ে যাত্রীদের বেপরোয়া নদীবক্ষে ভ্রমণে নজরদারির অভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই সঙ্গে শুধু পিকনিকের সময় নয়, বিভিন্ন ছুটির দিনেও গঙ্গার হাওয়া খেতে পর্যটকদের নৌকায় ঘুরে বেড়ানোয় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই সূত্র ধরেই ফের নদী পারাপারের সময় যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও মাথাচাড়া দিয়েছে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে গেঁওখালিতে নদীবক্ষে থাকা পরিস্রুত পানীয় জল প্রকল্পের কাছে একটি বয়ায় ধাক্কা মেরে উল্টে নৌকাটি। অভিযোগ, যাত্রীদের উদ্ধারের পর দেখা যায় সকলেই মদ্যপ ছিলেন। ২০১০ সালে কোলাঘাটের নাউপালায় পিকনিক করতে এসে রূপনারায়ণে নৌকাভ্রমণে বেরিয়ে বেরিয়ে মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ১১ জনের। তখনও উঠেছিল নজরদারির প্রশ্ন। ওই ঘটনার পর প্রশাসনের তরফে রূপনারায়ণে নৌকা ভ্রমণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদিও তা যে পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি তার প্রমাণ মিলেছে। গত কয়েকদিন ধরে কোলাঘাটের দেনান, কাঁউরচণ্ডী ও বাঁপুর এলাকায় রূপনারায়ণে নৌকা বিহার করতে দেখা গিয়েছে পর্যটকদের। এমনকী মদ্যপান করে নদীবক্ষে নৌকাবিহারের অভিযোগও উঠেছে। পুলিশ নজরদারির অভাব নিয়ে কোলাঘাটের বিডিও তাপস হাজরা বলেন, ‘‘কোলাঘাটের ওই অংশে পুলিশের নজরদারি কম থাকে। তবে আমি কোলাঘাট থানাকে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলব।’’

অন্যদিকে, গঙ্গাসাগর মেলার বেশি দেরি নেই। ইতিমধ্যেই পুণ্যার্থীরা সাগরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়া থেকে কয়েক হাজার পুণ্যার্থী সাগরে যান। হলদিয়া পুর এলাকায় হলদি নদীর তীর থেকেই সাগারের নৌকো ছাড়ে। ফলে হলদিয়া টাউনশিপে অস্থায়ী ফেরিঘাটে এখন সকাল থেকেই মানুষের ভিড়। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাত্রীরা এসে পৌঁছেছেন টাউনশিপ ঘাটে। এদিন সকালে গিয়ে দেখা যায়, ঘাটে কয়েকশো মানুষের ভিড়। ময়না, মহিষাদল এমনকী পশ্চিম মেদিনীপুর থেকেও প্রচুর মানুষ এসেছেন। অথচ যে অস্থায়ী ঘাট থেকে ট্রলারগুলি ছাড়ছে সেখানে কোনও পাহারার ব্যবস্থা নেই। নদীবক্ষে যাত্রীদের নিরাপত্তায় বালাই নেই লাইফ জ্যাকেটেরও। অতিরিক্ত যাত্রী বহন নিয়েও কোনও নজরদারি চোখে পড়ল না। ফলে নৌকা বোঝাই হয়েই যাত্রীদের পারাপার করতে দেখা গেল। যাত্রীদের কেউ কেউ তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও তাতে কাউকে কান দিতে দেখা গেল না। ময়না থেকে এসেছেন শ্রীকান্ত সামন্ত। বাবা-মাকে নিয়ে সাগরে যাবেন। ভিড়ের মধ্যে অস্থায়ী জেটিতে বোল্ডার পেরিয়ে কোনওরকমে নৌকায় ওঠার পর তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হবে জানলে মা-বাবাকে নিয়ে আসতাম না।’’ নাম না লেখার শর্তে নৌকার এক কর্মী বলেন, ‘‘আমরা সাগরের যাত্রীদের নিরাপত্তা দিয়েই নিয়ে যাই। নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার কথা ঠিক নয়।’’ কিন্তু লাইফ জ্যাকেট? প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন ওই কর্মী। নদীঘাটে দেখা মিলল হলদিয়া পুরসভার নিরাপত্তারক্ষীদের। কোনও হেলদোল দেখা গেল না তাঁদের মধ্যেও।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন