পুলিশ হয়রান করছে, থানা ঘেরাও বিজেপির

শাসক তৃণমূলের চাপে রেলশহরে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে অকারণে পুলিশি অভিযান চলছে বলে আগেই অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। তারপর তারা অভিযোগ তোলে জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের নাম করে হুমকি দিচ্ছে তৃণমূলের লোকজন। এ বার পুলিশের এই ভূমিকার প্রতিবাদে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখালেন বিজেপির মহিলা কর্মী-সমর্থকেরা। যাদের ধরপাকড় করা হয়েছে, তাদের মুক্তির আবেদনও জানানো হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০২:০৬
Share:

খড়্গপুর টাউন থানায় বিজেপির মহিলা কর্মী-সমর্থকদের ঘেরাও-বিক্ষোভ। আছেন শ্রীনু নায়ডুর স্ত্রী বিজেপি প্রার্থী পূজাও। —নিজস্ব চিত্র।

শাসক তৃণমূলের চাপে রেলশহরে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে অকারণে পুলিশি অভিযান চলছে বলে আগেই অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। তারপর তারা অভিযোগ তোলে জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের নাম করে হুমকি দিচ্ছে তৃণমূলের লোকজন। এ বার পুলিশের এই ভূমিকার প্রতিবাদে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখালেন বিজেপির মহিলা কর্মী-সমর্থকেরা। যাদের ধরপাকড় করা হয়েছে, তাদের মুক্তির আবেদনও জানানো হয়।

Advertisement

শুক্রবার দুপুরে শহরের রেল এলাকার ১৮ ও ১৫ নম্বরের বিজেপির মহিলা কর্মী-সমর্থকেরা খড়্গপুর টাউন থানা ঘেরাও করেন। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুই যুবক ভেঙ্কট রাও ও ঈশ্বর রাওকে বুধবার গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ধৃতেরা আপাতত আদালতের নির্দেশে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। ওই দুই যুবক ডাকাতির উদ্দেশে জড়ো হয়েছিল বলে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। কিন্তু বিজেপির দাবি, স্কুলছাত্র ঈশ্বর রাও নিরপরাধ। তার মা গোবিন্দ আম্মাও এ দিন থানায় ঘেরাও অভিযানে ছিলেন। এই কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী পূজা নায়ডু। রেল মাফিয়া শ্রীনু নায়ডুর স্ত্রী পূজা মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুলেছিলেন। পূজার অভিযোগ ছিল, তিনি বিজেপি প্রার্থী হওয়ায় শাসকদলের চাপে তাঁর স্বামীকে গ্রেফতার করতে মরিয়া পুলিশ এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এই নিয়ে সরব হয় বিজেপিও।

এ দিন থানা ঘেরাও অভিযানে অবশ্য কোনও দলীয় পতাকা ছিল না। তোলা হয়নি স্লোগানও। জনা চল্লিশেক মহিলা থানার সামনে জমায়েত করেন। তারপর পূজা নায়ডুর নেতৃত্বে কয়েকজন আইসি দীপক সরকারের সঙ্গে দেখা করে মিথ্যে মামলায় ঈশ্বর রাওকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। ঈশ্বর স্কুলছাত্র হওয়ায় তার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে যাতে তাকে মুক্তি দেওয়া হয় সেই আবেদনও জানানো হয়। এরপর থানায় পৌঁছন বিজেপির শহর সভাপতি প্রেমচাঁদ ঝা। পরে প্রেমচাঁদ বলেন, ‘‘নির্বাচনের মুখে শহরের বিভিন্ন জায়গার সঙ্গে বিশেষ করে রেল ওয়ার্ডে বিজেপি কর্মীদের হুমকি দিচ্ছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। আমরা বারবার পুলিশে জানালেও পুলিশ পদক্ষেপ না করে উল্টে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের হয়রানি করছে। আমাদের মনে হচ্ছে পুলিশ শাসকদলের চাপেই এ সব করছে।’’ যদিও পুলিশের দাবি, নির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণের প্রেক্ষিতেই সমাজবিরোধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, ‘‘যাদের ধরা হচ্ছে তারা সকলেই সমাজবিরোধী। শ্রীনু নায়ডুও আমাদের চোখে অপরাধী। তাকে খোঁজা হচ্ছে।’’ আর মিথ্যা মামলায় ধরপাকড় নিয়ে বিজেপির অভিযোগ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপারের বক্তব্য, ‘‘এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নাম জানাতে হবে। নাম দিলেই পুলিশ পদক্ষেপ করবে।’’

Advertisement

পুলিশ বেছে-বেছে বিজেপি কর্মীদের দুষ্কৃতী বলে ধরছে বলেই অভিযোগ এ দিন থানায় আসা মহিলাদের। বছর আঠারোর ঈশ্বরের মা গোবিন্দ আম্মা বলেন, ‘‘আমার ছোট ছেলে একাদশ শ্রেণির ছাত্র। পুলিশ মিথ্যা মামলায় ওকে গ্রেফতার করেছে।’’ থানা থেকে বেরিয়ে বিজেপি প্রার্থী পূজাও বলেন, “এলাকায় কিছু অপরিচিত দুষ্কৃতী আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করছে। আমাদের কর্মীদের হুমকী দিচ্ছে। অথচ পুলিশ একজন স্কুল ছাত্রকে গ্রেফতার করছে। আমাদের মনে হচ্ছে তৃণমূলের চাপে পুলিশও বাধ্য হয়ে এগুলি করছে।’’ পূজার আরও বক্তব্য, ‘‘পুলিশ শ্রীনু নায়ডুকে খুঁজছে। আমরা বলছি যাঁরা প্রকৃত দুষ্কৃতী পুলিশ তাদের ধরুক। শ্রীনুকে যদি গ্রেফতার করতে হয় তবে আগে রামবাবুকে গ্রেফতার করা হোক। কারণ শহরের সবাই জানে রামবাবু এখন তৃণমূলে রয়েছেন।”

রেলশহরে একসময়ের ত্রাস বাসব রামবাবুর সঙ্গে শ্রীনুর সম্পর্ক ভাল নয়। ২০১১ সালে আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় রামবাবুর গাড়িতে শ্রীনু গুলি চালিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। রামবাবু এখন তৃণমূলে ঝুঁকছেন বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। তাই রামবাবুকে গ্রেফতার করতে বলে পূজা কার্যত তৃণমূল-রামবাবু যোগকেই স্পষ্ট করতে চেয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। যদিও শহর তৃণমূলের সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী বলেন, “গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের জন্য আমাদের কোনও সমাজবিরোধী প্রয়োজন নেই। এ সব রাজনৈতিক উদ্দেশে বলা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন