হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে ভোগান্তি খড়্গপুরে

রাতে ঝাঁপ বন্ধ ওষুধের দোকানের

রাতে কেউ অসুস্থ হলে খড়্গপুর শহরে মহকুমা হাসপাতাল ও বিসি রায় হাসপাতালের ওষুধের দোকানই একমাত্র ভরসা। অভিযোগ, মহকুমা হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান খোলা থাকলেও দোকানের জানালা বন্ধ থাকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:০৮
Share:

রাতবিরেতে কারও শরীর খারাপ করলেই বিপদ! চিকিৎসককে ফোন করে ওষুধের নাম জেনেও বিশেষ লাভ নেই! কারণ রাত বাড়লেই ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায় প্রায় সব ওষুধের দোকানের। অনেক ডাকাডাকির পর খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধ দোকান খুললেও প্রয়োজনীয় অধিকাংশ ওষুধ মেলে না বলে অভিযোগ। ফলে ওষুধের খোঁজে রোগীর পরিজনেদের হন্যে হয়ে ঘোরা ছাড়া উপায় নেই।

Advertisement

রাতে কেউ অসুস্থ হলে খড়্গপুর শহরে মহকুমা হাসপাতাল ও বিসি রায় হাসপাতালের ওষুধের দোকানই একমাত্র ভরসা। অভিযোগ, মহকুমা হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান খোলা থাকলেও দোকানের জানালা বন্ধ থাকে। অনেক ডাকাডাকির পর জানালা খুললেও মেলে না অধিকাংশ ওষুধ। আইআইটি চত্বরেৃ বিসি রায় হাসপাতালের ভিতরে একটি ওষুধ দোকান রাতে খোলা থাকে। তবে আইআইটি চত্বরে নিরাপত্তার কড়াকড়ির জন্য ওই দোকানে বাইরের কেউ যেতে পারেন না। রাতে ওষু়ধ না মেলায় প্রায়ই সমস্যায় প়ড়ছেন অনেকে। দিন কয়েক আগেই গভীর রাতে পেটে যন্ত্রণা শুরু হয় বছর দু’য়েকের নীলাশা বেরার। শহরের এক চিকিৎসককে ফোন করে ওষুধের নাম জেনে নেন নীলাশার বাবা-মা। রাতে হন্যে হয়ে ঘুরেও ওষুধ পাননি পরিজনেরা। পরে ফের চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে একটি দোকানে গিয়ে ডাকাডাকি করতে মেলে ওষুধ। রাতে ওষুধের খোঁজে বেরিয়ে এ ভাবেই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন অনেকেই।

খড়্গপুর শহরের বাসিন্দাদের দাবি, দুর্ভোগ এড়াতে রাতেও শহরে ওষুধের দোকান খোলা হোক। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময়ে শহরে মহকুমা হাসপাতাল সংলগ্ন বেশ কয়েকটি ওষুধের দোকান রাতেও খোলা থাকত। এমনকী প্রয়োজনে কয়েকটি দোকানে গিয়ে ডাকাডাকি করলেও রাতে দরজা খুলে ওষুধ দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। তবে বছর তিনেক ধরে ওই দোকানগুলি রাতে বন্ধ রাখা হচ্ছে। শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাতে ওষুধের দোকানে গিয়ে ডাকলেও কেউ সাড়া দেয় না। প্রেমবাজারের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক ম্যানেজার তপন তরফদার বলছেন, “প্রেমবাজার এলাকায় পাঁচটি ওষুধের দোকানের একটিও রাতে খোলা থাকে না। রাতে প্রয়োজন হলেও ওষুধ না পেয়ে আমাদের পরিচিত অনেকেই দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমার শারীরিক নানা সমস্যা রয়েছে। বাড়িতে ওষুধ মজুত রাখি। এর পরেও অনেক সময় রাতে ওষুধের প্রয়োজন হলে কী হবে সেই আশঙ্কাতেই ভুগতে হয়।”

Advertisement

কিন্তু রাতে দোকান খোলা রাখতে সমস্যা কোথায়? ওষুধ ব্যবসায়ীদের দাবি, নিরাপত্তার অভাবের কারণে তাঁরা রাতে দোকান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। হাসপাতাল সংলগ্ন একটি দোকানের মালিক অরুণ দণ্ডপাটের কথায়, “রাতে ওষুধ দোকান খোলা রাখলে নানা সমস্যা হয়। তবে এখনও কেউ রাতে ডাকলে ওষুধ দিই।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। কারণ রাতে অনেক মাদকাসক্ত দোকানে এসে ঘুমের ওষুধ, কাশির সিরাপ চায়। আর সে সব না দিলেই হামলা হয়।” বছর পাঁচেক আগে মহকুমা হাসপাতালের উল্টো দিকে একটি দোকান রাতে খোলা থাকত। ওই দোকানের মালিক অরুণ দুয়া বলেন, “আগে রাতে দোকান খুলে রাখতাম। রাতে নেশাগ্রস্তরা এসে ভিড় করে। অনেক সময় টাকা না দিয়ে ওষুধ নিতে চায়। তাই নিরাপত্তার অভাবে কর্মীরা কাজ করতে চান না।”

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অরবিন্দ মাহাতো বলছেন, “রাতে শিশুদের পেট ব্যথা, বমি, শ্বাসকষ্টের মতো নানা সমস্যা হয়। আমাকে অনেকে ফোন করেন। সমস্যা গুরুতর বুঝলে হাসপাতালে ভর্তি করতে বলি। আবার অনেক সময় ওষুধ বলে দিই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘রাতে ওষুধের অভাবে অনেক শিশুর অভিভাবককে ভুগতে হচ্ছে। অন্তত পালা করে ওষুধের দোকান খোলা রাখার ব্যবস্থা
করা হোক।”

রাতে ন্যায্য মূল্যের ওষুধ দোকানের জানালাও বন্ধ থাকে কেন? মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “নায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের জানালা বন্ধ রাখার বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। কেউ ডাকলে ওঁরা ওষুধ দেয়। কিন্তু আমি ওদের জানালা খুলে রাখতে বলব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন