স্পেশ্যালিটি! গর্ভপাতের ওষুধও নেই

গর্ভে ন’মাসের মৃত সন্তান নিয়ে টানা চব্বিশ ঘন্টা যন্ত্রণায় কাতরাতে হল বছর ছাব্বিশের এক তরুণীকে। শেষ পর্যন্ত অনেক ঝক্কি করে বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনলেন পরিজনেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৮ ০১:০৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

হাসপাতালে আপৎকালীন গর্ভপাত করানোর প্রয়োজনীয় ওষুধ নেই। তাই গর্ভে ন’মাসের মৃত সন্তান নিয়ে টানা চব্বিশ ঘন্টা যন্ত্রণায় কাতরাতে হল বছর ছাব্বিশের এক তরুণীকে। শেষ পর্যন্ত অনেক ঝক্কি করে বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনলেন পরিজনেরা। তা খাইয়ে গর্ভপাত করানোর পরে সঙ্কটমুক্ত হলেন সোমা সিংহ নামে ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়ার ওই তরুণী।

Advertisement

এমন ঘটনায় ফের প্রশ্নের মুখে ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। জননী সুরক্ষা যোজনার ওই ওষুধ, যার এক পাতার দাম ১৬০ টাকা, তা কেন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে থাকবে না, প্রশ্ন সেখানেই। ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার মলয় আদকের জবাব, “এখন ওষুধের একটু সঙ্কট রয়েছে। তবে ওষুধ মজুত না থাকলে আমরাই ‘লোকাল পারচেজ’ করি। রোগীর বাড়ির লোককে কোনও ওষুধ কিনতে দেওয়া হয় না। এক্ষেত্রে কেন এমন হল খতিয়ে দেখব।” সুপার জানান, রোগীর পরিজন ওষুধ কিনলে ‘ডিস্ট্রিক্ট ইলনেস ফান্ড’ থেকে সেই টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, চাকুলিয়ার বাসিন্দা সোমা সিংহ শুক্রবার আউটডোরে দেখাতে এসেছিলেন। তাঁর বাপের বাড়ি ঝাড়গ্রাম শহরের বাছুরডোবায়। সোমার গর্ভস্থ শিশু নড়ছিল না। অবস্থা দেখে ওই দিন দুপুরেই হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হয় সোমাকে। আলট্রাসোনোগ্রাফি করে চিকিৎসক নিশ্চিত হন, গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এরপর স্বাভাবিক ভাবে ওষুধ দিয়ে মৃত শিশু প্রসব করানোর জন্য সোমাকে ওষুধ খাওয়ানো হয়। শুক্রবার রাতে শুরু হয় যন্ত্রণা। সোমাকে লেবার রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু প্রসব হয়নি। শনিবার দিনভর হাসপাতালের শয্যায় যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন সোমা।

Advertisement

সোমার মা কাকলি গিরি বলছিলেন, “শনিবার সন্ধ্যায় চিকিৎসক রাউন্ডে এলে আমরা জানতে পারি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুত নেই। তাই কিছু করা যাচ্ছে না। আমরা বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনতে চাইলে চিকিত্সক বলেন বাইরে থেকে ওষুধ কেনা যাবে না। দিশাহারা হয়ে পড়ি।” সোমার ভাই জয়দেব গিরি বলেন, চিকিৎসক ও নার্সকে জানিয়ে দিই, দিদির কিছু হয়ে গেলে তার দায় আপনাদের নিতে হবে। এরপর জয়দেব শহরে বিস্তর ঘুরে একটি দোকানে ওষুধ পান। সেই ওষুধ কিনে আনার পরে সোমাকে খাওয়ানো হয়। রবিবার ভোরে সোমা মৃত সন্তান প্রসব করেন।

জননী সুরক্ষা যোজনার ওই ওষুধ খোলা বাজারে সহজে মেলে না। তাহলে কেন তা হাসপাতালে মজুত রাখা হচ্ছে না? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, অনলাইনে ওষুধের অর্ডার দেওয়ার পরে সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর অনুমোদিত সংস্থাগুলি থেকে ওষুধ পেতে দু’-তিন মাস লেগে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন