২১ জুলাইয়ের সমাবেশে যাওয়ার জন্য বাস আটকানো হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তারপরও বুধবার দিনভর জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাস আটকে রাখার অভিযোগ উঠল শাসকদলের বিরুদ্ধে। এ দিন জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা ছিল। রাস্তায় বাস কম থাকায় সমস্যায় পড়েন অনেক পরীক্ষার্থী। ভোগান্তির শিকার হন সাধারণ যাত্রীরাও।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই ক্ষীরপাই, জাড়া-সহ কয়েকটি জায়গায় যাত্রী নামিয়ে বাস আটকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বুধবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় বাস অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সাধারণ সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতি বলেন, “অনেক জায়গাতেই বাস আটকে থাকায় বুধবার কয়েকটি রুটে কম বাস চলাচল করেছে। মূলত, দলীয় নেতৃত্বের সমন্বয়ের অভাবেই এমনটা হয়েছে।”
বুধবার অনেক জয়েন্ট পরীক্ষার্থীই রাস্তায় বেরিয়ে বাস না পেয়ে সমস্যায় পড়েন। তড়িঘড়ি অন্য গাড়ি ভাড়া করেও অনেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছন। চন্দ্রকোনার পলশচাবড়ির বাসিন্দা উপানন্দ হাজরার কথায়, “ছেলের জয়েন্ট এন্ট্রান্সের পরীক্ষা কেন্দ্র পড়েছে মেদিনীপুরে। বাস না মেলায় তড়িঘড়ি একটি গাড়ি ভাড়া করে ছেলেকে নিয়ে এসেছি। অকারণে, ১২০ টাকার মধ্যে যে কাজটা হয়ে যেত তার জন্য গুণতে হল সাড়ে ৭০০ টাকা!”
কেউ কেশপুর, কেউ নাড়াজোল যাওয়ার জন্য দীর্ঘক্ষণ বাসস্ট্যাণ্ডে দাঁড়িয়েও বাস পাননি। নাড়াজোলের প্রতিমা দোলুই বলেন, “জানি না, এরপর বাস পেলেও উঠতে পারব কিনা। কত লোক যাওয়ার জন্য বসে রয়েছে। বাস পেলেও তো যাওয়া উঠতেই পারব না।
বাস আটকানোয় সমস্যায় পড়ছেন মালিকেরাও। কোনও বাসকে আগাম বায়না দিয়ে রেখেছে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই বাস আটকে দেওয়া হয়েছে ডেবরায়। ফলে উভয় সঙ্কট। বৃহস্পতিবার সকালে বাস না পেলে ময়নার নেতাদের ক্ষোভ সামলাতে হবে। আবার ডেবরার নেতা-কর্মীদের থেকে ছাড় মেলাও ভার।
এক আইএনটিটিইউসি নেতার কথায়, “জনে জনে বলেছিলাম, ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে সকলেই যাবি। সকলে হাজির হওয়ার পর বাস না পেলে তো আমাদের উপরেই চোটপাট করবে। কী ভাবে সামাল দেব ভেবেই পাচ্ছি না!” পরিস্থিতি দেখে তৃণমূল নেতৃত্বের আশঙ্কা, ভবিষ্যতে এ ধরনের সমাবেশ হলে বাস নেওয়ার ব্যাপারে একটি নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করা জরুরি। দলের এক জেলা নেতার কথায়, “এ রকম চলতে থাকলে এরপর তো যে কোনও সমাবেশের ৪-৫ দিন আগে থেকে সকলে বাস আটকাতে শুরু করবে। নির্দিষ্ট পরিকল্পনা না করতে পারলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি খারাপ হবে।”
বাস আটকানোয় ক্ষতির মুখে পড়ছেন মালিকেরাও। বাস মালিক হাফিজুর রহমানের কথায়, “এমনিতেই সমাবেশে গেলে ভাড়া কম মেলে। তার উপর দু’দিন বাস দাঁড়িয়ে থাকলে রোজগার বন্ধ। উল্টে কর্মীদের নিজের পকেট থেকেই বেতন দিতে হবে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলের নেতাদের ভেবে দেখার আবেদন জানাব।”