টক্কর দেবে মহাজোট, আশঙ্কায় তৃণমূল

বরাবরই ব্যতিক্রম রামজীবনপুর। সময়টা ২০০৫। রাজ্যে ক্ষমতায় বামেরা। তখনও সিপিএমকে হঠাতে এককাট্টা হয়েছিল বিরোধীরা। তৃণমূল, কংগ্রেস ও বিজেপি মহাজোট গড়ে নেমেছিল ভোটের ময়দানে। বামেদের হারিয়ে পুরসভা ছিনিয়ে নিয়েছিল মহাজোটই। ২০১০। রাজ্যে ক্ষমতায় থাকলেও অনেকটাই ব্যাকফুটে বামেরা। সে বারও পুরসভা দখলে রেখেছিল মহাজোট।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

রামজীবনপুর শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩২
Share:

জোর কদমে জোট প্রার্থীর সমর্থনে চলছে প্রচার। —নিজস্ব চিত্র।

বরাবরই ব্যতিক্রম রামজীবনপুর।

Advertisement

সময়টা ২০০৫। রাজ্যে ক্ষমতায় বামেরা। তখনও সিপিএমকে হঠাতে এককাট্টা হয়েছিল বিরোধীরা। তৃণমূল, কংগ্রেস ও বিজেপি মহাজোট গড়ে নেমেছিল ভোটের ময়দানে। বামেদের হারিয়ে পুরসভা ছিনিয়ে নিয়েছিল মহাজোটই।

২০১০। রাজ্যে ক্ষমতায় থাকলেও অনেকটাই ব্যাকফুটে বামেরা। সে বারও পুরসভা দখলে রেখেছিল মহাজোট।

Advertisement

২০১৫। রাজ্যে বাম সরকারের পতন হয়েছে। পরিবর্তনের তৃণমূল সরকারও ক্ষমতার চার বছর পার করেছে। এ বার মহাজোটে নেই শুধু তৃণমূল। সিপিএম, কংগ্রেস ও বিক্ষুব্ধ স্থানীয় তৃণমূল নেতারা মিলে তৈরি করেছেন পুরসভায় দুর্নীতি বিরোধী জোট। ১১টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট রামজীবনপুর পুরসভার ৯টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে মহাজোট। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এ বার মহাজোটের লড়াইটা সরাসরি তৃণমূলের সঙ্গে। তবে মহাজোটই এ বারও পুরসভা দখলে রাখতে পারবে কিনা, তা সময়ই বলবে। মহাজোটের পক্ষে গোপাল কোলের অবশ্য আশা, ‘‘আমরা সাধারণ মানুষের উপর সব ছেড়ে দিয়েছি। ভোটাররা ভাল ভাবে জানেন, কোন প্রার্থীকে জয়ী করলে এলাকার উন্নয়ন হবে।’’

গত পুরভোটে ১১টি আসনের মধ্যে মহাজোট পেয়েছিল ১০টি আসন। মাত্র একটি আসন জুটেছিল সিপিএমের কপালে। ২০১০ সালের পুরভোটে তৃণমূল পেয়েছিল ৫টি আসন। বিজেপি ২টি ও কংগ্রেস ৩টি আসনে জয়ী হয়েছিল। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, রাজ্যে পরিবর্তনের পরই পুরসভা নিজেদের দখলে রাখতে তৎপর হয়ে ওঠে শাসকদল। অন্য দলের কাউন্সিলর ভাঙিয়ে পাল্লা ভারী হয় তৃণমূল। সিপিএমের একমাত্র কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। পরে বিজেপি ও কংগ্রেস থেকেও এক জন করে কাউন্সিলর শাসকদলে যোগ দেওয়ায় তৃণমূলের কাউন্সিলর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় আট জন। মহাজোট ভেঙে পুরসভায় একক ভাবে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। এ বার অবশ্য পুরসভার তিন বিরোধী কাউন্সিলর মহাজোটের প্রার্থী হিসেবেই লড়াই করছেন।

পুর-পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভও রয়েছে শহরবাসীর মধ্যে। শাসকদলের একাংশ নেতা-কর্মীর দাবি, বামেদের হঠাতে রামজীবনপুরে মহাজোট গড়ে ভোট যুদ্ধে নামে বিরোধীরা। সেই সময় বামেরা রামজীবনপুরে বিরোধী পুরবোর্ডকে সে ভাবে গুরুত্ব দেয়নি। ফলে থমকে ছিল উন্নয়নও। পরে শহরে উন্নয়ন দ্রুততর হয়েছে। তবে শহরের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর সকলেই উন্নয়নের গতিবৃদ্ধির আশা দেখেছিলেন। কিন্তু শহরে আশানুরূপ কাজ হয়নি।

এ বার পুরভোটে বিরোধীদের প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার রামজীবনপুরে পিপিপি মডেলে তৈরি হাসপাতাল। বছর দু’য়েক আগে কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি এই হাসপাতালের উদ্বোধন হয়। স্বল্প খরচে সকলকে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে খোলা হয় বহির্বিভাগ। হাসপাতালেই নার্স, প্যাথোলজি, হাসপাতাল ম্যানেজমেন্টের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। ঢাকঢোল পিটিয়ে চলে প্রচারও। প্রশিক্ষণের জন্য বেকার যুবক-যুবতীদের থেকে ৬০-৭০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। কিন্তু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না হওয়ায় শুরু হয় বিক্ষোভ। রাতারাতি বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতাল। দীর্ঘ আন্দোলনের পরও টাকা ফেরত না পেয়ে বেকার যুবকেরা পুরসভার চেয়ারম্যান শিবরাম দাস-সহ ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর কয়েকজন সদস্য ও হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার সদস্যদের বিরুদ্ধে চন্দ্রকোনা থানায় মামলা দায়ের করেন। যদিও ওই মামলায় জামিনে মুক্ত শিবরাম দাস এ বারও রামজীবনপুরে তৃণমূলের
প্রার্থী হয়েছেন।

শুধু হাসপাতাল নয়, রামজীবনপুরে টাউন হলের কাজও শুরু হয়নি। ঢিমেতালে চলছে বাসস্ট্যান্ডের কাজ। মাঝপথে বন্ধ হয়ে গিয়েছে পানীয় জলের পাইপ লাইন সম্প্রসারণের কাজ। যদিও তৃণমূল সূত্রে দাবি, রামজীবনপুরে উন্নয়নের কাজ নিয়মমাফিকই চলছে। গত পুরভোটে দেওয়া প্রতিশ্রুতির সব কাজই শেষের পথে। পিপিপি মডেলে তৈরি হাসপাতালটিও দ্রুত খোলার চেষ্টা চলছে। পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান শিবরামবাবু বলেন, “সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরেছেন, আমরা কথা দিলে রাখি। আর এখন শহরে উন্নয়নের কাজ কাদের উদ্যোগে হচ্ছে, তাও সকলেরই জানা।’’ তাঁর দাবি, যতই জোট থাকুক, তৃণমূলই এ বার একক ভাবে ক্ষমতায় আসবে। তারপরে শহরের চেহারাটাই বদলে যাবে।

কিন্তু প্রশ্ন বন্ধ হাসপাতাল খুলতে পুরসভা কী করেছে? সদুত্তর এড়িয়ে শিবরামবাবু বলেন, ‘‘আমরা একটা সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে পিপিপি মডেলে হাসপাতালটি চালু করেছিলাম। হাসপাতালের পুরো দায়িত্বই ওই সংস্থার হাতে ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমরা শুধু দেখভাল করতাম।’’ তাঁর দাবি, কখন যে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা প্রশিক্ষণের জন্য টাকা নিল, তাঁরা টেরও পাননি।

এ বারও জয় নিয়ে আশাবাদী মহাজোটের প্রার্থীরা। দুর্নীতি মুক্ত পুরসভা গড়ার বার্তা দিয়ে প্রচারেও নেমেছেন বিরোধী জোটের প্রার্থীরা। জোট প্রসঙ্গে সিপিএমের চন্দ্রকোনা-১ জোনাল কমিটির সম্পাদক বিদ্যুৎ রায়ের বক্তব্য, “শহরের মানুষ যা চেয়েছেন তাই হয়েছে। এখানে কোনও দল বড় নয়। অধিকাংশ ওয়ার্ডেই মঞ্চের প্রার্থীরাই লড়াই করছেন। দু’টি ওয়ার্ডে দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে।’’ একই বক্তব্য বিজেপির স্থানীয় নেতা গোবিন্দ মুখোপাধ্যায়েরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন