old age home

Jhargram: বাড়িতে বৃদ্ধাবাস গড়ছেন তনুকা

কয়েকবছর আগে বেলপাহাড়ির এক প্রবীণা তনুকার হাত ধরে কেঁদে জানিয়েছিলেন, দিনমজুরি করে দুই ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছেন।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২২ ০৮:০৬
Share:

এই বাড়িতেই তৈরি হবে বৃদ্ধাবাস। নিজস্ব চিত্র

দূর থেকে সাহায্য নয়। এ গল্প কাছে এনে পাশে দাঁড়ানোর। হারিয়ে পাওয়া আত্মসম্মানের।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম শহরের কদমকাননের বাসিন্দা তনুকা সেনগুপ্ত। সিরিয়ালের চেয়ে সেবার আকর্ষণই তাঁর কাছে অমোঘ। এর আগে সংসার খরচ বাঁচিয়ে গত বছর ইয়াস বিধ্বস্ত সুন্দরবনবাসীর কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন ত্রাণ। এ বার দুঃস্থ ও অসহায় বৃদ্ধাদের জন্য নিজের বাড়িতেই বৃদ্ধাবাস চালু করতে চলেছেন তিনি। মূল লক্ষ্য, প্রবীণরা জীবনের শেষ দিনগুলি যেন আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে পারেন।

কয়েকবছর আগে বেলপাহাড়ির এক প্রবীণা তনুকার হাত ধরে কেঁদে জানিয়েছিলেন, দিনমজুরি করে দুই ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছেন। ছেলেরা এখন প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু বিয়ের পরে দুই ছেলেই মায়ের জন্য আলাদা কুঁড়ে ঘর করে দিয়েছেন। রেশনের চালটুকু রান্না করে খাওয়ারও সামর্থ্য নেই বৃদ্ধার। ছেলেরা মায়ের খোঁজও নেন না। তনুকা বলেন, ‘‘সেদিনই ঠিক করেছিলাম, এমন অসহায় প্রবীণাদের জীবনের বাকি দিনগুলি শান্তিতে কাটানোর জন্য কিছু একটা করব। সেই ভাবনা থেকেই বৃদ্ধাবাসের ভাবনা।’’ অরণ্যশহরে তনুকার বাড়ির এক তলায় ৮টি শয্যা নিয়ে চালু হচ্ছে ওই বৃদ্ধাবাস। নাম সরযূবালা বৃদ্ধাবাস।

Advertisement

কে এই সরয়ূবালা? এখানেই গল্পে মিশেছে পারিবারিক উত্তরাধিকার। যে উত্তরাধিকার দেশ, সমাজ বা পাশের বাড়ির পড়শির মুক্তিতে নিজের মুক্তির পথ খোঁজে।

তনুকার স্বামী বিশ্বজিৎ সেনগুপ্তের ঠাকুমার নাম সরয়ূবালা। পূর্ববঙ্গের বরিশালের বাসিন্দা সরয়ূবালা গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন। বরিশালের ভোলায় একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন সরযূবালা। ভারতছাড়ো আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগ দেওয়ায় সরযূবালাকে গৃহবন্দি করেছিল ব্রিটিশ সরকার। তাঁর স্বামী ও দুই ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়। দেশভাগের পরে ১৯৪৮ সালে স্বামী, পুত্র সহ সরযূবালা চলে আসেন ঝাড়গ্রামে। ঝাড়গ্রাম রাজ এস্টেটের সহযোগিতায় পিছিয়ে পড়া মহিলাদের স্বনির্ভর করার কেন্দ্র ‘কর্মকুটির’ চালু করেন। কর্মকুটিরের অধীনে খাদিকেন্দ্র, বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মত নানা কর্মসূচির বাস্তবায়ন করেছিলেন সরযূবালা। ১৯৬৪ সালে ঝাড়গ্রামে তিনি প্রয়াত হন। সরয়ূবালার আদর্শ বহন করে চলেছেন তাঁর নাতবৌ।

বিশ্বজিৎ-তনুকার একমাত্র মেয়ে ত্রিজিতা সমাজকল্যাণে স্নাতকোত্তর। (মাস্টার্স অফ সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার)। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুঁথিগত বিদ্যা তো রয়েছে ত্রিজিতার জীবনের প্রথম শিক্ষিকা তনুকা যে মেয়ের জন্য বাড়িতে খুলেছেন মানবকল্যাণের এক বিশাল পাঠশালা। হাতে কলমে এমন সুযোগ আর ক’জনেরই ভাগ্যে জোটে! ত্রিজিতাও বলছেন, ‘‘মায়ের কাজের পাশে আছি।’’ আপাতত নিজের বাড়িতে বৃদ্ধাবাসটি চালু করলেও সেটিকে বড় আকারে করার ভাবনা রয়েছে তনুকার। এ জন্য জমিও কিনেছেন তিনি। ব্যক্তিগত ও শুভানুধ্যায়ীদের সাহায্যে সেখানে কিছুদিনের মধ্যে বৃদ্ধাবাসের স্থায়ী ভবন তৈরি হবে।

তনুকা সেবামূলক কাজ শুরু করেছিলেন নিজের এলাকা থেকেই। বছর পনেরো আগে বাড়ির উঠোনেই শুরু করেন ছক ভাঙা অবৈতনিক শিক্ষাদান। গড়ে তুলেছেন ‘সবুজপ্রাণ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানও। স্কুলছুটদের স্কুলে ফেরানো, শবর শিশুদের স্কুলমুখী করা, প্রত্যন্ত এলাকার শিশুদের বেড়াতে নিয়ে যাওয়া, শিক্ষা সহায়ক সামগ্রী বিলির মতো নানা কাজের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন তনুকা। নানা জনের থেকে পুরনো পোশাক চেয়ে এনে নিজের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ‘বস্ত্র ব্যাঙ্ক’ও। সেই সব পোশাক কেচে ইস্ত্রি করে তিনি পৌঁছে দেন জঙ্গলমহলের বিভিন্ন প্রান্তে অভাবী মানুষের কাছে। করোনার লকডাউনের সময়ে বেলপাহাড়ি, লালগড়, জামবনির প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন খাদ্যসামগ্রী। সংসার খরচ বাঁচিয়ে গত বছর ইয়াস বিধ্বস্ত সুন্দরবনবাসীর কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন ত্রাণ।

দুঃস্থ, অসহায়দের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের আয়োজনে ব্যস্ত তনুকা। এ বার পণ করেছেন নবতিপরদের আত্মসম্মান ফেরানোর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন