বিতর্ক ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে

নতুন নিয়মেও বহাল সুভাষের লোক

রোগীদের নিম্নমানের খাবার বিলি নিয়ে নালিশ উঠেছে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কানে। শুরু হয়েছে তদন্ত। তাতেও ঝাড়গ্রাম জেলা ও মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে অভিযুক্ত ঠিকাদারি সংস্থার দাপট কমেনি বলেই অভিযোগ।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৪৫
Share:

সুভাষ দাস। —নিজস্ব চিত্র।

রোগীদের নিম্নমানের খাবার বিলি নিয়ে নালিশ উঠেছে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কানে। শুরু হয়েছে তদন্ত। তাতেও ঝাড়গ্রাম জেলা ও মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে অভিযুক্ত ঠিকাদারি সংস্থার দাপট কমেনি বলেই অভিযোগ। এমনকী স্বাস্থ্য দফতর নিযুক্ত ১৪জন পুরনো অস্থায়ী কর্মীকে বাদ দিয়ে এই ঠিকাদারি সংস্থার লোকজনকে নিয়োগ করা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক।

Advertisement

সাত-আট বছর ধরে দৈনিক ১০০ টাকা মজুরিতে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে কাজ করতেন সাত মহিলা-সহ ১৪ জন ঠিকাকর্মী। ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের মেল মেডিসিন, ফিমেল মেডিসিন, মেল সার্জিক্যাল ও ফিমেল সার্জিক্যাল— এই চারটি ওয়ার্ডে ওই ১৪ জন ছিলেন ওয়ার্ড বয় এবং ওয়ার্ড গার্ল। মাস তিনেক আগে এই চারটি ওয়ার্ড ঝাড়গ্রাম মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ভবনে স্থানান্তরিত হয়। ১৪জন পুরনো ঠিকাকর্মীও কাজে বহাল থাকেন। তবে নতুন ভবনে সাফাই ও নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্ব দেওয়া হয় ঠিকাদার সুভাষ দাসের সংস্থা এসবি এন্টারপ্রাইজকে। সুভাষবাবুর সংস্থার ৩১ জন কর্মী ওই কাজে নিযুক্ত হন।

সম্প্রতি ওয়েস্টবেঙ্গল মেডিক্যাল সার্ভিসেস কর্পোরেশন লিমিটেড (এমএসসিএল)-এর পক্ষ থেকে রাজ্যের ১২ টি মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের নিরাপত্তা ও হাউস কিপিং-সহ বেশ কিছু কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে ‘সিকিউরিটি অ্যান্ড ইনটেলিজেন্স সার্ভিসেস ইন্ডিয়া লিমিটেড’ (এসআইএস) নামে একটি সর্বভারতীয় বেসরকারি সংস্থাকে। গত ১৭ অক্টোবর থেকে ‘এসআইএস’ সংস্থাটির ঝাড়গ্রামে কাজ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু অভিযোগ, সুভাষবাবুর কর্মীদের বাধায় তারা নির্ধারিত দিনে কাজ শুরু করতে পারেনি। শেষে গত ২ নভেম্বর থেকে এসআইএস কর্মী নিয়োগ শুরু করে। এবং সেখানে সুভাষবাবুর লোকেদের নিয়োগে বাধ্য করা হয়েছে বলেই খবর। কাজ হারিয়েছেন পুরনোরা। সূত্রের খবর, নিজস্ব কর্মী নিয়োগের পাশাপাশি সুভাষবাবুর সংস্থার ৩১ জন কর্মীকে বহাল রেখেছে নতুন সংস্থা। তা ছাড়া, স্থানীয় তৃণমূলের দুই জনপ্রতিনিধির সুপারিশে কয়েকজনকে নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা প্রায় ৯০ জন।

Advertisement

নয়া ব্যবস্থায় কাজ হারানো ১৪জন ঠিকাকর্মী তাঁদের পুনর্বহালের দায়িত্বে স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন মহলে দরবার শুরু করেছেন। কাজ হারানো মিঠু সিংহ, সন্ধ্যা বেরাদের প্রশ্ন, “নতুন সংস্থা পুরনো ঠিকাদার সংস্থার লোকজনকে নিয়োগ করেছে। নতুনদেরও নেওয়া হয়েছে। আমরা কী দোষ করলাম।”

হাসপাতালের সুপার মলয় আদক থেকে সিএমওএইচ (ঝাড়গ্রাম) অশ্বিনীকুমার মাঝি সকলেরই বক্তব্য, ঠিকা কর্মী নিয়োগের কোনও ক্ষমতা তাঁদের হাতে নেই। এ ক্ষেত্রে এসআইএস-এর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তাহলে সুভাষ দাসের লোকেরা কী ভাবে বহাল হলেন? সুপার এবং সিএমওএইচের জবাব, “সংস্থাটি কাকে নেবে সেটা একেবারেই তাদের নিজস্ব বিষয়।” তবে এসআইএসের তরফে কেউ মন্তব্য করতে চাননি।

ঘটনা হল, রোগীদের খাবার, জেনারেটর, গাড়ি, জেলা হাসপাতালের পুরনো ভবনের সাফাই কর্মী, নিরাপত্তারক্ষী— সবেরই দায়িত্বে রয়েছে সুভাষবাবুর সংস্থা। সেই বাম আমল থেকে এই ঠিকাদারের রমরমা শুরু। রাজ্যে পরিবর্তনের পরেও সুভাষ-রাজ টাল খায়নি। বারবার পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ ওঠার পরেও গত বছরই ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে খাবার সরবরাহের জন্য ফের বরাত পেয়েছেন সুভাষবাবু, এ বার তিন বছরের জন্য। তাই জামবনির সভায় প্রকাশ্যে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উষ্মা প্রকাশের পরেও আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

যদিও ষাঁট ছুঁই ছুঁই সুভাষের যুক্তি অন্য। তাঁর বক্তব্য, “কোনও গরিব লোকের কাজ কেড়ে নেওয়া মুখ্যমন্ত্রী সমর্থন করেন না। সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে আমার যে ৩১ জন কর্মী কাজ করতেন তাঁরা সকলেই অত্যন্ত গরিব। আমি কোনও জোরাজুরি করিনি। কেবল ওঁদের রাখার অনুরোধ জানিয়েছিলাম।” সুভাষবাবুর আরও দাবি, একসময় ঘুগনি বেচে, পুতুল ফেরি করে সংসার চালিয়েছেন তিনি। এখন অনেক কষ্ট করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তাই কিছু লোক শত্রুতা করছে বলে অভিযোগ তাঁর। একই তিনি বলছেন, ‘‘অভিযোগ করলেই তো হবে না। প্রমাণ করে দেখাতে হবে। সেটা কেউই পারবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন