আবাস যোজনায় নজির

একশোয় একশো চন্দ্রকোনা

গত অর্থবর্ষেই গ্রামীণ এলাকার দরিদ্র পরিবারগুলিকে পাকা বাড়ি তৈরি করে দিতে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ চালু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ রাজ্যে সেই প্রকল্পেরই নাম ‘বাংলা আবাস যোজনা’।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৪০
Share:

নতুন: আবাস যোজনায় তৈরি পাকাবাড়ি। নিজস্ব চিত্র

‘বাংলা আবাস যোজনা’ প্রকল্পে বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে নজির গড়ল চন্দ্রকোনা ২ ব্লক প্রশাসন।

Advertisement

গত অর্থবর্ষেই গ্রামীণ এলাকার দরিদ্র পরিবারগুলিকে পাকা বাড়ি তৈরি করে দিতে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ চালু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ রাজ্যে সেই প্রকল্পেরই নাম ‘বাংলা আবাস যোজনা’। বাড়ি না থাকলে অথবা মাটির বাড়ি থাকলে এই প্রকল্পের সুবিধে পান সাধারণ মানুষ। ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষে ৪২৪টি বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল চন্দ্রকোনা ২ ব্লক প্রশাসন। উপভোক্তাদের তালিকা পাঠানোর পর বরাদ্দ হয় টাকাও। মোট চার কিস্তিতে প্রকল্পের টাকা পান তাঁরা। ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। সঙ্গে একশো দিনের কাজের প্রকল্প থেকে ১৭ হাজার ১০০ টাকা দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলিকে।

তবে প্রকল্পের টাকা পেয়েও বাড়ির কাজ শুরু না করে তা অন্যত্র খরচ করার রীতি পুরনো। আবার সোনার গয়না কেনা, মেয়ের বিয়ে দেওয়া বা বাইক কেনার ঘটনাও দেখা গিয়েছে এ রাজ্যে। চন্দ্রকোনা-২ ব্লকেও ‘ইন্দিরা আবাস যোজনা’র টাকা পেয়ে বাড়ি তৈরি না করে তা অন্যত্র খরচ করার অভিযোগ উঠেছে আগে। এ নিয়ে থানায় অভিযোগও হয়। এ বার নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ‘বাংলা আবাস যোজনা’য় একশো শতাংশ বাড়ি তৈরি করে নজির গড়ল চন্দ্রকোনা-২ ব্লক প্রশাসন।

Advertisement

কী ভাবে সম্ভব হল ওই কাজ?

চন্দ্রকোনা ২-এর বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ির বক্তব্য, “উপভোক্তাদের ভালবেসে এবং বুঝিয়ে প্রকল্পের বাড়ি তৈরি করা গিয়েছে। কখনও-সখনও হয়তো বকাবকিও করতে হয়েছে। প্রকল্পের সহায়কেরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।” ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকিরঞ্জন প্রধান বলেন, “প্রকল্পের সমস্ত বাড়িই তৈরি করে ফেলেছে চন্দ্রকোনা ২ ব্লক। এগিয়ে আছে চন্দ্রকোনা ১ ব্লকও। এ ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে মহকুমার বাকি ব্লকগুলি। মহকুমায় সব বাড়িই যাতে দ্রুত তৈরি হয়, সে জন্য উদ্যোগ তৈরি হয়েছে।”

ব্লক প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয়েছে, প্রথম দিকে এখানেও টাকা পাওয়ার পর অনেক উপভোক্তাই বাড়ি শুরু করেননি। তাই তালিকা নিয়ে খোদ বিডিও সটান পৌঁছে যাচ্ছিলেন উপভোক্তাদের বাড়িতে। কার কী সমস্যা এবং কাজ শুরু না হওয়ার পিছনে কী কারণ, তা জেনে প্রকল্পটি ঠিকঠাক রূপায়ণে উদ্যোগী হন বিডিও। বাড়ির টাকা বাড়ি তৈরির জন্যই— সে কথা বোঝাতে আয়োজিত হয়েছে শিবিরও। শুরু হয় কড়া নজরদারি। সহায়তা করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। চলতি বছরের মার্চ থেকে টানা তিন-চার মাস প্রত্যেক উপভোক্তার বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যান বিডিও এবং সরকারি আধিকারিকেরা। সমস্ত দিক তদারকি করার পরই মেলে সাফল্য।

এই ব্লকের কুঁয়াপুর পঞ্চায়েতের শ্যামগঞ্জের বাসিন্দা জুম্মান আলি প্রথম কিস্তির টাকা সংসারের কাজে খরচ করে দিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “আমি তো সব টাকাই খরচ করে দিয়ে বসেছিলাম। ধারে ইট-বালির ব্যবস্থা করে দেন বিডিও। তখনই নিজের ভুল বুঝতে পারি। এখন পাকার বাড়িতে থাকছি।” একই ছবি বান্দিপুর ১ পঞ্চায়েতের মাসান টুডুর ক্ষেত্রেও। তিনি বলেন, “একসঙ্গে এত টাকা ব্যাঙ্কে আসার পর আমি তো কাজে যেতেই ভুলে গিয়েছিলাম। টাকা তুলেই দিন চলছিলয়। হঠাৎ বিডিও এসে বাড়ি শুরু করতে বলেন। তখনই কাজ শুরু করি।” ব্লক প্রশাসনের দাবি, ইতিমধ্যেই ৪২৩টি বাড়ির কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। চলতি বছরেই আর একটি বাড়ি তৈরি হয়ে যাবে। এ বার লক্ষ্য সময়ের আগেই দ্বিতীয় পযার্য়ের বাড়িগুলি শেষ করা।

এ বিষয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সচিব প্রবীর ঘোষ বলেন, “২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষে জেলায় প্রায় ২৭ হাজার বাড়ির টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। পঞ্চাশ শতাংশ কাজও শেষ হয়েছে। এর মধ্যেই চন্দ্রকোনা ২-এ কাজ হয়েছে ১০০ শতাংশ। তাই শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর নয়, রাজ্যেও সেরা হওয়ার দাবিদার ওই ব্লক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন