স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হাঁড়ির হাল লালগড়ে

সঙ্কট বুঝলেই রোগী রেফার যেন দস্তুর

অ্যাসবেস্টসের ছাদ উড়ে যাওয়ায় পরিত্যক্ত বহির্বিভাগের ভবন। অন্তর্বিভাগের ভবনের একফালি জায়গাতেই চলে বহির্বিভাগ। অন্তর্বিভাগে কাগজে কলমে দশটি শয্যা থাকলেও রোগীর চাপে পাতা রয়েছে ২২টি শয্যা। বাড়তি রোগী এলে ঠাঁই হয় মেঝেতে।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

লালগড় শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share:

ছাদহীন: বহির্বিভাগের ঘরের এমনই হাল। নিজস্ব চিত্র

অ্যাসবেস্টসের ছাদ উড়ে যাওয়ায় পরিত্যক্ত বহির্বিভাগের ভবন। অন্তর্বিভাগের ভবনের একফালি জায়গাতেই চলে বহির্বিভাগ। অন্তর্বিভাগে কাগজে কলমে দশটি শয্যা থাকলেও রোগীর চাপে পাতা রয়েছে ২২টি শয্যা। বাড়তি রোগী এলে ঠাঁই হয় মেঝেতে। উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া লালগড়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল এমনই।

Advertisement

এক সময় এই লালগড়কে কেন্দ্র করে অশান্ত হয়ে উঠেছিল জঙ্গলমহল। রাজ্যে সরকার বদলের পরে এখন লালগড়ে ঝাঁ-চকচকে বহুতল নার্সিং ট্রেনিং স্কুল হয়েছে। চওড়া পিচের রাস্তা হয়েছে। ঝাড়গ্রামের সঙ্গে সহজ যোগাযোগের জন্য কংসাবতীর উপর সেতু হয়েছে। জমজমাট দোকান-বাজার ও বসতি হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির হাল ফেরেনি।

অনেক সময়ই সঙ্কটাপন্ন রোগীকে দেওয়ার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডারও থাকে না স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সঙ্কটাপন্ন রোগীদের ২০ কিলোমিটার দূরের ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে অথবা ৪২ কিলোমিটার দূরের দূরে পাশের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করতে হয়।

Advertisement

লালগড় ব্লক সদর ও সংলগ্ন গ্রামগুলির প্রায় ২০ হাজার মানুষ এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। এ ছাড়া পাশের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি ব্লকের ভীমপুর ও পিড়াকাটা অঞ্চলের রোগীদের কাছেও লালগড়ের এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিই ভরসা। এলাকার বেশির ভাগ বাসিন্দা আদিবাসী ও অনগ্রসর শ্রেণির। তাই সিংহভাগ বাসিন্দা সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু অভিযোগ, এখনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির পরিকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দু’জন মাত্র চিকিত্সক। নার্স আছেন ৫ জন। তবে সরকারি কর্মী বা জিডিএ (জেনারেল) আছেন মাত্র দু’জন। কাজ সামলাতে অতিরিক্ত অস্থায়ী এক কর্মী আছেন। বছর চারেক আগে সাফাই কর্মীর মৃত্যু পরে আর নিয়োগ হয়নি। তাই দু’জন ঠিকা-সাফাই কর্মী আছেন। আর আছেন একজন ফার্মাসিস্ট। চিকিত্সক ও কর্মীদের আবাসনেরও বেহাল দশা। সরকারি ভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডার দেওয়া হয়েছে ৫টি। কিন্তু সিলিন্ডার গুলি রিফিল করাতে হয় মেদিনীপুরে নিয়ে গিয়ে। রোগীর চাপ বাড়লে সিলিন্ডার খালি হয়ে গেলে খুবই সমস্যা হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশে নতুন করে বর্হিবিভাগ ভবন তৈরির কাজও এগোয়নি।

দিন কয়েক আগে গুরুতর হৃদরোগে আক্রান্ত লালগড় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কৃষ্ণগোপাল রায়কে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে অক্সিজেন মেলেনি। অভিযোগ, হৃদ্‌রোগের চিকিত্সা করানোর মতো পরিকাঠামো না থাকায় মৃত্যু হয় কৃষ্ণগোপালবাবুর। সব মিলিয়ে হতশ্রী স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ব্লক সদর লালগড়ে ব্লক অফিস রয়েছে। অথচ ব্লকের গ্রামীণ হাসপাতালটি রয়েছে ১৭ কিলোমিটার দূরে বিনপুরে। লালগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত করার দাবিও উঠেছে।

স্থানীয়দের বক্তব্য, দুই চিকিত্সক সাধ্যমতো পরিষেবা দেন। কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকায় সঙ্কটাপন্ন রোগী তো দূর, লালগড়ে সিজার করে সন্তান প্রসবও করানো হয় না। সিজার করে প্রসবের জন্য প্রসূতিদের পাঠানো হয় ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটিতে। এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি লালগড় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার দিলীপকুমার ভক্তা। তিনি বলেন, “আমরা সাধ্যমতো পরিষেবা দিই।”

ঝাড়গ্রামের সিএমওএইচ অশ্বিনী মাঝি বলেন, “লালগড়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০টি করা হবে। প্রয়োজনীয় পরিষেবা দেওয়ার জন্য পরিকাঠামো উন্নয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে।” অশ্বিনীবাবু জানান, বহির্বিভাগের নতুন ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। পরে অন্তর্বিভাগের নতুন ভবনও হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন