ইন্দিরা আবাস যোজনা

টাকা পেলেই দিতে হচ্ছে তৃণমূল নেতাকে, নালিশ

গরিবদের বাড়ি তৈরির জন্য সরকার টাকা দিচ্ছে। প্রাপকদের হাতে টাকা পৌঁছচ্ছেও। কিন্তু টাকা পেলেই তার একটা অংশ স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের দিয়ে দিতে হচ্ছে। ইন্দিরা আবাস যোজনার ক্ষেত্রে এমনই অভিযোগ উঠেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। বিষয়টি জেলা প্রশাসন বা জেলা পরিষদেরও অজানা নয়। ভুরি ভুরি মৌখিক অভিযোগে ব্লক প্রশাসন তো জেরবার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৫ ০০:৫৯
Share:

গরিবদের বাড়ি তৈরির জন্য সরকার টাকা দিচ্ছে। প্রাপকদের হাতে টাকা পৌঁছচ্ছেও। কিন্তু টাকা পেলেই তার একটা অংশ স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের দিয়ে দিতে হচ্ছে। ইন্দিরা আবাস যোজনার ক্ষেত্রে এমনই অভিযোগ উঠেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়।

Advertisement

বিষয়টি জেলা প্রশাসন বা জেলা পরিষদেরও অজানা নয়। ভুরি ভুরি মৌখিক অভিযোগে ব্লক প্রশাসন তো জেরবার। বিডিওরা বারবার জেলার পদস্থ আধিকারিকদের কাছে সমস্যার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। নারায়ণগড়ের বিডিও লীনা মণ্ডল সম্প্রতি জেলা সভাধিপতির কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছেন যে, ‘কিছু উপভোক্তা সোশ্যাল অডিটরদের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন যে তাঁরা ইন্দিরা আবাস যোজনায় বরাদ্দ টাকায় কিয়দংশ হাতে পাচ্ছেন। তাই তাঁদের পক্ষে বাড়ি তৈরি সম্ভব হচ্ছে না।’ এ ব্যাপারে জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহের বক্তব্য, “অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। নির্দিষ্ট তথ্য পেলে নিশ্চয়ই পদক্ষেপ করব।”

অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছেন তৃণমূলের নারায়ণগড় ব্লক সভাপতি মিহির চন্দ। তাঁর কথায়, “নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ পাইনি। পেলে নিশ্চয় পদক্ষেপ করব।” বিডিও যে লিখিত অভিযোগ করেছেন? মিহিরবাবুর কথায়, “বিডিও-র অভিযোগের কথা শুনেছি। তাঁর কাছ থেকে নির্দিষ্ট নামও জানতে চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় তা পাইনি। বিডিও কেন এমন অভিযোগ করলেন, তাও আমরা খতিয়ে দেখছি।”

Advertisement

ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির জন্য উপভোক্তাকে তিন কিস্তিতে ৭৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। বর্তমানে ৭৫ হাজার টাকায় বাড়ি তৈরি হয় না বলেই অধিকাংশের অভিযোগ। তার উপর টাকার একটা অংশ যদি তৃণমূল নেতাদের দিয়ে দিতে হয়, তাহলে কী ভাবে বাড়ি তৈরি হবে, সেই প্রশ্ন উঠছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইন্দিরা আবাসের এক উপভোক্তার কথায়, “আমাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কবে টাকা জমা পড়ছে তা ব্লক থেকেই জেনে যাচ্ছেন স্থানীয় নেতারা। তারপরই সরাসরি ডেকে টাকা দাবি করছেন। হুমকি দিয়ে বলছেন, টাকা নেওয়ার কথা যেন ফাঁস না হয়।’’ ভয়ে আর কেউ তাই লিখিত অভিযোগও করছেন না। অনেক অনুনয়-বিনয় করে তৃণমূল নেতাকে ৭ হাজারের পরিবর্তে ৪ হাজার টাকা নিতে রাজি করিয়েছেন এমন উপভোক্তার কথায়, “লিখিত অভিযোগ করলে আর গ্রামে বাস করতে পারব। গ্রামেই যদি থাকতে না পারি তাহলে বাড়ি বানিয়ে কী লাভ!”

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় গত আর্থিক বছরে ইন্দিরা আবাস যোজনায় ৩৬,৯৮৯টি পরিবারের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। ৩৬,৬৫৭টি বাড়ি তৈরির অনুমোদন মেলে। তার মধ্যে প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া হয়েছে ৩৬,৫৩৪ জনকে। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়ার জন্য প্রায় ২১ হাজার বাড়ি পরিদর্শন করা হয়। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাওয়ার উপযুক্ত প্রায় ২০ হাজার পরিবারকে টাকা দিয়েও দেওয়া হয়। এখনও পর্যন্ত বাড়ি তৈরি শেষ হয়েছে ১০২৭টি। যাঁদের বেশিরভাগ উপভোক্তাকেই তৃতীয় কিস্তির টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, বাড়ি তৈরির কাজ এত ঢিমেতালে চলছে কেন? সাড়ে ৩৬ হাজারের মধ্যে এক বছরে মাত্র ১ হাজার বাড়ি তৈরি হল কেন?

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি জটিলতা রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান হল, উপভোক্তার কাছ থেকে প্রাপ্য অর্থের একটা অংশ নিয়ে নেওয়া। ৪-৫ হাজার থেকে শুরু করে ১০-১২ হাজার টাকা - উপভোক্তাদের কাছ থেকে এমনটাই দাবি করছে স্থানীয় নেতারা। এমনিতেই ৭৫ হাজার টাকায় বাড়ি করা অসম্ভব। তার উপর ১০-১২ হাজার টাকা নেতাদের দিতে হলে কিভাবে বাড়ি হবে? টাকা নিয়ে নেতা-উপভোক্তার বিবাদ না মেটা পর্যন্ত বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হচ্ছে না। কোনও ক্ষেত্রে জোর করে কাজ শুরু করা গেলেও দ্বিতীয় কিস্তির টাকা না ছাড়ার জন্য ব্লকে চাপ দিচ্ছে ওই নেতারা। ফলে গতি মন্থর হচ্ছে।

এখনই পদক্ষেপ না করলে ভবিষ্যতে সমস্যা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা। কারণ, এতদিন ৭৫ হাজার টাকা ৩ কিস্তিতে দেওয়া হত এভাবে যে, প্রথম কিস্তিতে ২৫ শতাংশ, দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬০ শতাংশ ও তৃতীয় কিস্তিতে ১৫ শতাংশ। এ বার প্রথম কিস্তিতেই বরাদ্দের ৫০ শতাংশ অর্থ মিলবে। দ্বিতীয় কিস্তিতে ৪০ শতাংশ ও তৃতীয় কিস্তিতে ১০ শতাংশ। চলতি আর্থিক বছর থেকেই এই ব্যবস্থা চালু হবে। ফলে প্রথমেই উপভোক্তা বেশি টাকা হাতে পাবেন। তাতে নেতাদের চাহিদাও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন