ভেড়িতে তারের গেরোয় বিপন্ন মাছরাঙা, পেঁচা

হলদিয়া ব্লকের হলদি নদীর তীরবর্তী বাঁশখানা, বালুঘাটা, গঙ্গামোড়, তেরপেক্ষ্যা ইত্যাদি এলাকা জুড়ে ভেড়ির উপর এই জালই পরিবেশবিদদের চিন্তায় ফেলেছে।

Advertisement

আরিফ ইকবাল খান

হলদিয়া শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৮ ০৭:৩০
Share:

ভেড়ির মাছ শিকার রুখতে টাঙানো জালেই আটকে পড়ে মৃত মাছরাঙা। নিজস্ব চিত্র

বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ভ্যানামেই (চিংড়ির একটি প্রজাতি) চাষের জন্য একাধিক ভেড়ি। আর সেই সব ভেড়ির বেশ কিছুটা উপরে রয়েছে এক ধরনের সুতোর জাল। যাতে পাখিদের মাছ শিকার আটকানো যায়। হলদিয়া ব্লকের হলদি নদীর তীরবর্তী বাঁশখানা, বালুঘাটা, গঙ্গামোড়, তেরপেক্ষ্যা ইত্যাদি এলাকা জুড়ে ভেড়ির উপর এই জালই পরিবেশবিদদের চিন্তায় ফেলেছে।

Advertisement

না, চিংড়ি মাছ নয়, তাঁদের চিন্তার কারণ ভেড়ির উপর ওই বিশেষ ধরনের জাল। ভেড়ির মালিকদের দাবি, পাখিদের মাছ শিকার আটকাতে ওই জাল লাগিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সমস্যা হল, ভেড়ির বেশ কিছুটা উপর দিয়ে ওই জাল বিছানোয় পাখিরা উড়তে গিয়ে জালে আটকা পড়ছে। ডানা কাটা যাচ্ছে তাদের। যার ফলে ওই সব এলাকায় পাখির আনাগোনাও আগের তুলনায় কমেছে। আর সেটাই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পাখিপ্রেমী ও পরিবেশবিদদের কাছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশেষ ধরনের ওই জালের সুতোয় জখম হচ্ছে মাছ রাঙা ও পেঁচা-সহ নানা জাতের পাখি। মারাও যাচ্ছে অনেক পাখি। পরিস্থিতি এমন যে মাছরাঙা প্রায় অদৃশ্য হলদিয়ায়।

কী ভাবে ক্ষতি হচ্ছে পাখির?

Advertisement

মাছের ভেড়ির ওপর মশারির নেটের মত বিছানা রয়েছে এক ধরনের নাইলনের সুতো। তা এতই সূক্ষ্ম ও ধারালো যে পাখির পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। ভেড়ির ৬-৭ ফুট উপর দিয়ে বিছানো ওই জালের সুতোতেই ক্ষতি হচ্ছে পাখির। ঘটনা স্বীকার করেছেন হলদিয়ার বালুঘাটার মাছচাষি রণজিৎ ভৌমিক। তিনি জানান, তাইল্যান্ড থেকে নাইলনের এই সুতো আনা হয়েছে। এটা এতটাই সরু যে পাখিদের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়। কিন্তু কেন এই জাল? তিনি জানান, মূলত পাখিদের থেকে যাতে মাছে সংক্রমণ না হয় সেই কারণেই পাখি আটকাতে এমন ব্যবস্থা।

পাখিদের এমন ক্ষতিতে উদ্বিগ্ন মহিষাদল রাজ কলেজের প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক শুভময় দাস। শুভময়বাবু জানান, জখম মাছরাঙা ও পেঁচা হামেশাই ছাত্রছাত্রীরা তুলে আনছেন। তাদের অনেকে মারাও যাচ্ছে। পাখি বাঁচাতে ওই জাল সরিয়ে ফেলা বা বিকল্প ব্যবস্থা করা উচিত। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের জেলায় উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে মাছরাঙা। এটা পরিবেশ দূষণের সঙ্কেত বহন করে।’’ তিনি জানান, মাছরাঙা হল এমন পাখি যে মাটিতে ইঁদুরের গর্তে সাপের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থেকে বাসা বানায় এবং মাটিতেই ডিম পাড়ে আর জলের খাদ্য খায়। তাই মাছরাঙা ঠিক থাকলে জল, স্থল ও গাছ ঠিক আছে বোঝা যায়।

এই ধরনের জাল পেতে পাখিদের আটকানো যে বেআইনি তা জানিয়ে বন্যপ্রাণী আইন বিশেষজ্ঞ পার্থ দেবনাথ জানান, বন্যপ্রাণী আইনে ফাঁদ পাতা শিকারের মধ্যে পড়ে। এ ভাবে পাখি নিধনের বিরুদ্ধে পথে নামতে চলেছেন হলদিয়ায় একটি পক্ষীপ্রেমী সংস্থাও। সংস্থার তরফে মধুসূদন কুইল্যা বলেন, ‘‘আমরা ভেড়িতে এভাবে পাখি মেরে ফেলার বিরুদ্ধে। এর বিরুদ্ধে পথে নেমে আন্দোলনের পাশাপাশি বনমন্ত্রীকেও চিঠি দেওয়া হবে।’’

হলদিয়ার মৎস্য সম্প্রসারণ আধিকারিক সুমন সাহুর সাফাই, ‘‘পাখিদের মাধ্যমে ভেড়ির মাছের নানা ধরনের রোগ হয়। মাছ বাঁচাতেই এই পদক্ষেপ।’’ তবে বিকল্প হিসাবে তিনি জানান, নাইলনের তারের সঙ্গে প্লাস্টিক বেঁধে দিলে এবং হাওয়ায় তা উড়লে পাখি আর ফাঁদে পড়বে না। ফলে জখম বা মারাও যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন