Suvendu Adhikari

ক্ষোভেই বাড়ছে পদ্ম

আমপান দুর্নীতি হোক বা বেহাল রাস্তা, নন্দীগ্রাম এখনও সরব। জমি আন্দোলনের আঁতুড়ঘরে ক্ষোভের কারণ খুঁজল আনন্দবাজার। ২০১১ সালে নন্দীগ্রামের বিধায়ক হয়েছিলেন শহিদ জননী ফিরোজা বিবি। ২০১৪ সালে তমলুক লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদ হন শুভেন্দু অধিকারী। ২০১৬ সালে নন্দীগ্রামের বিধায়ক নির্বাচিত হন শুভেন্দু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২০ ০১:১৪
Share:

—ফাইল চিত্র।

রাজ্য রাজনীতির পালাবদলের সূচনা হয়েছিল যে মাটি থেকে, সেই নন্দীগ্রামই গত এক দশক ধরে দেখেছে শাসকদলের দলাদলি। প্রায় বিরোধীশূন্য পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রামে তৃণমূলের প্রতিপক্ষ হিসেবে মাথা তুলেছে দলেরই বিক্ষুব্ধ একটা অংশ। আর সেই আবহেই এখন সেখানে মাথা তুলছে গেরুয়া শিবির।

Advertisement

২০১১ সালে নন্দীগ্রামের বিধায়ক হয়েছিলেন শহিদ জননী ফিরোজা বিবি। ২০১৪ সালে তমলুক লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদ হন শুভেন্দু অধিকারী। ২০১৬ সালে নন্দীগ্রামের বিধায়ক নির্বাচিত হন শুভেন্দু। তখন তিনি প্রায় ৮১ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। ওই বছরেই তমলুক লোকসভার উপ-নির্বাচনে নন্দীগ্রাম থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার লিড পেয়েছিলেন দিব্যেন্দু অধিকারী। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম থেকে তৃণমূলের লিড কমে হয় প্রায় সাড়ে ৬৮ হাজার। আর বিজেপি-র ভোট ২০১৬ সালে যেখানে ছিল ১০ হাজারের কিছু বেশি, তা ২০১৯ সালে বেড়ে হয়েছে ৬২ হাজারের বেশি।

এই পরিসংখ্যান বলছে, ভোট কমেছে তৃণমূলের, বেড়েছে বিজেপি-র। বামেদের ভোটও উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। এলাকায় কান পাতলে শোনা যায়, তৃণমূল নেতাদের দুর্নীতির জেরে জেরবার নন্দীগ্রামবাসী। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সেই ক্ষোভেই অনেকে বিজেপি-র দিকে ঝুঁকছেন। এলাকাবাসীর একাংশের মানুষের মতে, তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ভুরি ভুরি। আমপানের ক্ষতিপূরণ নিয়ে বিস্তর গরমিলের অভিযোগ উঠেছে নন্দীগ্রামের তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধেও। অনেকে টাকা ফিরিয়েছেন। দলও সাসপেন্ড করেছে অনেককে। শুভেন্দুও নন্দীগ্রামে এসে প্রকারান্তরে স্বীকার করেছেন, আমপানের ক্ষতিপূরণে ন্যায্য প্রাপকদের অনেকেই বঞ্চিত থেকে গিয়েছেন।

Advertisement

এখন আবার শুভেন্দু দলহীন-জনসংযোগ দেখা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এই আবহের সুযোগ নিচ্ছে বিজেপি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভকে হাতিয়ার করে সংগঠন বাড়াচ্ছে তারা। নন্দীগ্রামের ২টি ব্লককে ৫টি মণ্ডলে ভাগ করেছে গেরুয়া শিবির। নন্দীগ্রাম ২ ব্লকে ইতিমধ্যে শক্তি বাড়িয়েছে বিজেপি। বিনা যুদ্ধে তৃণমূলকে এক চুল জমি ছাড়তেও তারা নারাজ। বিজেপি-র তমলুক জেলা সাংগঠনিক সহ-সভাপতি প্রলয় পাল বলেন, ‘‘তৃণমূলের নেতারা খালি আমি আমি করেন। তাঁরা কেউ আমরা আমরা করেননি। সেটাই মানুষ এত দিনে ধরতে পেরেছে। তাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিজেপিকে সমর্থন করছে।’’

তৃণমূলের অবশ্য ব্যাখ্যা, বাম-সমর্থনেই পুষ্ট হচ্ছে বিজেপি। বামেদের ভোট পাচ্ছে বলেই বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের হার বাড়ছে। তৃণমূলের নন্দীগ্রাম বিধানসভা কমিটির চেয়ারম্যান মেঘনাদ পালের কথায়, ‘‘নন্দীগ্রামে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক অটুট আছে। বামেদের সিংহভাগ ভোট বিজেপি-র দিকে গিয়েছে। তাতেই গেরুয়া শিবির লাফালাফি করছে। তবে তৃণমূলের ভোটে বিজেপি থাবা বসাতে পারেনি।’’

বাস্তবে অবশ্য দেখা যাচ্ছে, গত কয়েক মাসে নানা ঘটনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে নন্দীগ্রামবাসীর ক্ষোভ প্রকাশ্যে এসেছে। পুরনো কায়দায় রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে বিক্ষোভ হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০০৭ সালের জমি-আন্দোলন অনেকাংশেই পুষ্ট হয়েছিল তৎকালীন শাসক বামেদের প্রতি সাধারণ মানুষের বিদ্বেষ থেকে। অধুনা শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভের মাত্রা সেখানে পৌঁছেছে কিনা, তার পরিণতিতে অতীতের পুনরাবৃত্তি দেখবে কিনা নন্দীগ্রাম— সে সবের জবাব অবশ্য অতীতই দেবে।

(শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন