আজ, বুধবার দাঁতনে ১২ ঘণ্টার বন্‌ধের ডাক বিজেপি-র

বিপিন মৃত্যুতে লড়াইয়ের ডাক মুকুলের

নিহত বিপিনের দেহ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ মেদিনীপুরে আনা হয়। দলের জেলা কার্যালয়ের সামনে দলের নেতা-কর্মীরা তাঁর মরদেহে মালা দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দাঁতন ও মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৪৫
Share:

শোকমিছিল: বিপিন দাসের দেহ নিয়ে মিছিল দাঁতনে। রয়েছেন মুকুল রায়-সহ বিজেপি নেতৃত্ব। মঙ্গলবার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

নিহত বিজেপি কর্মী বিপিন দাসের দেহ নিয়ে শোকমিছিল করল বিজেপি। দাঁতনের পেট্রল পাম্প থেকে সরাইবাজার পর্যন্ত মিছিলে হাঁটেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। ছিলেন দলীয় নেতা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, তুষার মুখোপাধ্যায়ও। মঙ্গলবার বাড়ির গ্রাম দাঁতনের কাঁটাপালেও বিপিনবাবুর দেহ নিয়ে যাওয়া হয়। বিজেপি কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় আজ, বুধবার ১২ ঘণ্টার দাঁতন বন্‌ধেরও ডাক দিয়েছে গেরুয়া শিবির।

Advertisement

নিহত বিপিনের দেহ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ মেদিনীপুরে আনা হয়। দলের জেলা কার্যালয়ের সামনে দলের নেতা-কর্মীরা তাঁর মরদেহে মালা দেন। বিপিনবাবুর ছেলে সুবল দাসের কথায়, “পুলিশের সামনেই হামলা হয়েছে। আমরা যখন পুলিশ ডেকেছিলাম পুলিশ আসেনি। অথচ, পুলিশ থাকাকালীন ওরা হামলা করল। ভাঙচুর করল। মারধর করল। বাবা বলেছিল, তোমরা ভাঙচুর করছো কেন? তখনই তৃণমূলের লোকেরা বাবার উপর হামলা করে। দোষীদের চরম শাস্তি চাই।” বিজেপি-র জেলা সভাপতি শমিত দাশও বলছেন, ‘‘পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রথম রাজনৈতিক শহিদ বিপিন দাস। বিপিন দাসের হত্যার বিচার চাইতে যতদূর যেতে হয় আমরা যাবো।”

এ দিনের শোকমিছিলে ভিড় হয়েছিল ভালই। মিছিল থেকে দলীয় কর্মীদের ভেঙে না পড়ে লড়াই করার বার্তা দেন বিজেপি নেতৃত্ব। মুকুলবাবু বলেন, ‘‘আমাদের একটি ছেলে খুন হয়ে গেল। কান্না অনেক হয়েছে। আর কান্নার দিন নেই। এ বার চোখ দিয়ে জল নয়, আগুন ঝরানোর দিন এসেছে।’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করেও মুকুলবাবুকে বলতে শোনা যায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন শিল্প আনতে বিদেশ যাচ্ছেন। জ্যোতিবাবুর আমলে তাও হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যাল গড়ে উঠেছিল। কিন্তু গত সাড়ে ৬ বছরে একটিও শিল্প আসেনি। আর শিল্প আসবে কী ভাবে? শিল্প কি বিজেপি কর্মী যে পুলিশ ধরে নিয়ে চলে আসবে!”

Advertisement

শোকমিছিলের পরে দাঁতনের সরাইবাজারে এক পথসভারও আয়োজন হয়। সভায় মুকুলবাবু বলেন, “দাঁতনে এসে যে জনস্রোত দেখেছি তাতে আমার ৪০ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে দাঁতনের পঞ্চায়েত ও জেলা পরিষদের একটি আসনেও তৃণমূল জয়ী হতে পারবে না। সব ক’টি আসনে বিজেপি জয়ী হবে।’’ পঞ্চায়েত ভোট আসন্ন। তারও আগে চলতি মাসেই সবং বিধানসভা কেন্দ্রে উপ-নির্বাচন। ইতিমধ্যেই ওই কেন্দ্রে অন্তরা ভট্টাচার্যের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে বিজেপি। এ দিন মুকুলবাবু বলেন, ‘‘বাংলায় গণতন্ত্র নিধন হচ্ছে। তার প্রতিবাদ নিশ্চয় সবংয়ের উপ নির্বাচনের প্রচারেও তুলে ধরব। বিপিন দাসের মৃত্যুর কথাও প্রচারে তুলে ধরা হবে।’’

বিজেপি নেতা মুকুলবাবুর কথায়, ‘‘২০১১ সালে পরিবর্তনের সপক্ষে মানুষ ভোট দিয়েছিলেন। আজ বাংলায় গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে তৃণমূল করা যাচ্ছিল না। তাই আরও একবার বাংলার মাটিতে পরিবর্তনের পরিবর্তন কায়েম করে বিজেপিকে বাংলায় প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করব।’’ এ দিন মুকুলবাবু বক্তৃতা দেওয়ার সময় হঠাৎ মাইক বন্ধ হয়ে যায়। এরপরে প্রচার ভ্যানের মাইক নিয়েই বক্তৃতা শুরু করেন মুকুলবাবু। তিনি বলেন, “এ ভাবে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করা যায় না। ওঁরা এত ভীত যে মাইকে যা বলছি সেটাও শোনার মানসিকতা নেই।’’

গত ১ ডিসেম্বর রাতে দাঁতনের কাঁটাপালে তৃণমূল ও বিজেপি-র লোকেদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে জখম হন বিপিনবাবু। রবিবার রাতে কলকাতার হাসপাতালে বিপিনের মৃত্যু হয়। এ দিন সরাইবাজারে পথসভার পরে মৃত বিজেপি কর্মীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কাঁটাপালের বাড়িতে। নিহত কর্মীর বাড়িতেও যান মুকুলবাবু। বিপিনের বাবা-মা ও স্ত্রী আগেই মারা গিয়েছেন। মৃতের ছেলে সুবল দাসের সঙ্গে কথা বলেন মুকুলবাবুরা। দলের পক্ষ থেকে মৃতের পরিজনেদের হাতে ৫ লক্ষ টাকার সাহায্য তুলে দেওয়া হবে বলে
জানান মুকুলবাবু।

দলের কর্মীর মৃত্যুর প্রতিবাদে আজ, বুধবার ১২ ঘণ্টার বন্‌ধ ডেকেছে বিজেপি। বিজেপি-র দাঁতন মণ্ডল সভাপতি মোসাব মল্লিক বলেন, “গণতন্ত্র বাঁচানোর জন্য আমরা মানুষের কাছে ১২ ঘণ্টার বন্‌ধে সামিল হওয়ার আবেদন জানিয়েছি। আমরা জানি, তৃণমূল অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু আমরা কর্মীদের শান্তি বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছি।” যদিও মুকুল রায়ের জয়ের স্বপ্নকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না তৃণমূলের দাঁতন ব্লক সভাপতি তথা বিধায়ক বিক্রম প্রধান। তিনি বলছেন, “যে কোনও মৃত্যু দুঃখজনক। তাই মানুষ রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে শোক মিছিল দেখেছে। কিন্তু মিছিলে যাঁরা পা মিলিয়েছে তাঁরা অন্য ব্লক থেকে এসেছেন। আর তাই দেখে নির্বাচনে জয়ের যে স্বপ্ন মুকুল রায় দেখাচ্ছেন তা বাচ্চা ছেলের কথা বলে মনে করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন