গরমে রক্তের আকাল মেটাতে বেড়েছে শিবিরের সংখ্যা। আগের থেকে বেড়েছে রক্তের জোগানও। কিন্তু সেই রক্ত মজুত করা হবে কোথায়, তা-ই ভেবে পাচ্ছেন না ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। শুধু ঘাটাল নয়, জেলার অন্য ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির হালও কম-বেশি একই।
রাজ্যের অধিকাংশ ব্লাড ব্যাঙ্ক রক্তাপ্লতায় ভুগছে। রক্ত সঙ্কট মেটাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থানা ও পুরসভাগুলিতে রক্তদান শিবির করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই মতো প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। কিন্তু রক্তের জোগান বাড়লে কি হবে, সেই রক্ত রাখা রাখা হবে কোথায় তা নিয়ে বাড়ছে চিন্তা। সমস্যার কথা মানছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরাও। তিনি বলেন, “অল্প সময়েই শিবিরের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। শিবির থেকে রক্তও আসছে। ফলে রক্ত সঠিক সময়ে পরীক্ষা ও মজুত করা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে।”
ঘাটাল ব্লাড ব্যাঙ্কে চারটি ফ্রিজ রয়েছে। এর মধ্যে একটি ফ্রিজে পরীক্ষার নানা সরঞ্জাম ও কিট রাখা রয়েছে। বাকি তিনটি ফ্রিজে মেরেকেটে ছ’শো থেকে সাড়ে ছ’শো ইউনিট রক্ত মজুত রাখার মতো পরিকাঠামো রয়েছে। ঘাটাল হাসপাতাল সূত্রে খবর, শনিবার ঘাটাল ব্লাডব্যাঙ্কেই বিভিন্ন গ্রুপ নিয়ে আড়াইশো বোতল রক্ত মজুত ছিল। চলতি মাসে এখনও কুড়িটির বেশি শিবির করার অনুমতি দিয়েছেন ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। এক একটি শিবির থেকে কম করে ৬৫-৭০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ হয়। সেই রক্ত রাখা নিয়ে সমস্যার আশঙ্কা করছেন ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক আধিকারিক বলছেন, “কোনও সংস্থা শিবির করার আগ্রহ দেখালে তাঁদের ঘোরানো যাবে না। ঘুরিয়ে দিলেও বিপদ। তবে আর পাঁচ-সাতটি শিবির হলেই সমস্ত ফ্রিজ ভর্তি হয়ে যাবে।’’
তাঁর কথায়, ‘‘সমস্ত ব্লাড ব্যাঙ্কই এখন রক্ত সংগ্রহ করছে। ফলে অন্য ব্লাডব্যাঙ্কগুলিতেও রক্তের চাহিদা সে ভাবে নেই। এত রক্ত নিয়ে আমরা কী করব?” জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “জেলার সবক’টি ব্লাড ব্যাঙ্কেই পরিকাঠামোগত নানা সমস্যা রয়েছে। রক্তের জোগান বাড়ার ফলে আচমকাই চাপ বেড়ে গিয়েছে।’’
তিনি বলছেন, ‘‘একদিনে তো ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির ভোল পাল্টানো যাবে না। এত শিবির হলে সংগৃহীত রক্ত কোথায় রাখা হবে, সঠিক সময়ে সেই রক্ত ব্যবহার করা যাবে কি না, এ সব নিয়ে সকলেই উদ্বেগে রয়েছেন।’’ ঘাটাল হাসপাতালের সুপার কুণাল মুখোপাধ্যায়ও বলছেন, “এখন রক্তের কোনও সমস্যা নেই। তবে রক্ত কী ভাবে সংরক্ষণ করা হবে, সেই নিয়েই ভাবছি। ঘাটাল ব্লাড ব্যাঙ্কে আরও ফ্রিজ জরুরি। বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবনে জানিয়েছি।”
সমস্যা শুধু ফ্রিজের নয়, ঘাটাল ব্লাড ব্যাঙ্কে নেই রক্ত পৃথকীকরণের ব্যবস্থাও। ফলে কেউ রক্ত চাইলে ‘হোল ব্লাড’ই দিতে হচ্ছে। ব্লাড ব্যাঙ্কের এক কর্মীর কথায়, “শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহ করার পর ৩৫ দিনের মধ্যে সেই রক্ত ব্যবহার করতে হবে। কর্মী সংখ্যা কম থাকায় শিবির থেকে রক্ত আনার পর পরীক্ষা করতেও সময় লাগবে। আমরা এখন সমস্যায় পড়েছি।”