‘রাজনৈতিক চাপ’, চাকরি ছাড়তে চান ব্লক স্বাস্থ্যকর্তা

গত ২৬ জুন চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে চেয়ে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যভবনে আবেদন পাঠান মৌসমবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘আবেদনে আমি ব্যক্তিগত কারণে ইস্তফা দিচ্ছি বলে জানিয়েছি। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপ তো যথেষ্ট ছিল। ইস্তফার পিছনে অবশ্যই সেটা কারণ।”

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

দাঁতন শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৮ ০৮:০০
Share:

প্রতীকী চিত্র।

চাকরি ছাড়তে চান দাঁতন ১ এর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ)। সরকারি ভাবে তিনি জানিয়েছেন, কারণটা ব্যক্তিগত। তবে বিএমওএইচ মৌসম মান্না জানালেন, দীর্ঘদিন ধরে ‘রাজনৈতিক চাপে’র মুখে কাজ করতে হচ্ছিল তাঁকে।

Advertisement

কেমন সেই ‘রাজনৈতিক চাপ’? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, দাঁতন গ্রামীণ হাসপাতালের ভাড়া গাড়ির টেন্ডার নিয়ে কয়েকবার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের টানপড়েনের প্রকাশ্যে এসেছিল। বহু ক্ষেত্রে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে হাসপাতালে গোলমালে জড়িয়েছেন শাসক দলের কর্মীরা। এমনকী, হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির সমান্তরাল হাসপাতাল উন্নয়ন কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। সেই কমিটি গঠনে আপত্তি জানানোয় ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে তৃণমূলের একাংশ নেতা-কর্মীর বিবাদ দেখা দিয়েছে বলে দাবি হাসপাতালের একাংশ কর্মীর। হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, “মাস সাতেক আগে একটি সংঘর্ষে জখমদের চিকিৎসা করাতে এসে তৃণমূলের কর্মীরা নিজেদের মধ্যে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। তখন আমাদের দুই কর্মীকে মারধর করা হয়। হাসপাতালের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ জানানোর কথা ছিল। কিন্তু নেতাদের চাপে তা করা হয়নি।”

গত ২৬ জুন চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে চেয়ে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যভবনে আবেদন পাঠান মৌসমবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘আবেদনে আমি ব্যক্তিগত কারণে ইস্তফা দিচ্ছি বলে জানিয়েছি। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপ তো যথেষ্ট ছিল। ইস্তফার পিছনে অবশ্যই সেটা কারণ।”

Advertisement

দাঁতন গ্রামীণ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি খোদ দাঁতনের তৃণমূল বিধায়ক বিক্রম প্রধান। তিনি অবশ্য বলেন, “রাজনৈতিক চাপের অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। হাসপাতালে কোনও আলাদা কমিটি গঠনের কথাই হয়নি। আমি বা আমাদের দলের কর্মীরা সবসময়ে হাসপাতালের উন্নয়নে মরিয়া। কিন্তু হাসপাতালের ভাড়া গাড়ির টেন্ডার-সহ নানা কাজে দুর্নীতি চলে। হাসপাতালের স্বার্থে সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করি।” বিধায়ক অস্বীকার করলেও হাসপাতালে ‘চাপ’ যে থাকে মেনে নিয়েছেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালে টুকটাক রাজনৈতিক চাপ তো থাকেই। বরং মৌসম মান্না তো আগে দাঁতনে অনেক চাপ মোকাবিলা করেছে। এখন তো কোনও চাপ নেই।’’

ইস্তফার পর কেটে‌ছে একমাসেরও বেশি। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বা ‘হু’তে নতুন চাকরি পেয়েছেন মৌসমবাবু। কিন্তু ইস্তফার আবেদন মঞ্জুর না হওয়ায় নতুন চাকরি নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। মৌসমের কথায়, ‘‘এখন চাইছি আমার আবেদন দ্রুত গৃহীত হোক। একমাস কেটে গেলেও এই হাসপাতালেই কাজ করছি। এই চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে না পারলে নতুন চাকরিতে যোগ দিতে পারছি না। সেই সময়সীমা শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়ব।” কেন মঞ্জুর হচ্ছে না ইস্তফার আবেদন? মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘ওঁর (মৌসম) ইস্তফাপত্র স্বাস্থ্যভবনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সব দিক দেখে সেই ইস্তফাপত্র মঞ্জুর হতে একটু সময় লাগে।”

রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসক সঙ্কট চরমে। এরই মধ্যে চাকরি ছাড়তে চাইলেন এক বিএমওএইচ। চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, ‘টুকটাক রাজনৈতিক চাপ’ই তো মাঝে মাঝে অসহনীয় হয়ে যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন