মকরামপুর মনে করাল তিন বছর আগের ব্রাহ্মণবাড়

বিস্ফোরণের পরেই পোড়া বারুদের গন্ধ

কীভাবে বিস্ফোরণ?  এ দিনের ঘটনায় এখনও কিছু বলতে চায়নি পুলিশ। তবে কার্যালয়ের পাসে ভিড়ের মধ্যেই এক যুবককে ফিসফিস করে বলতে শোনা গেল, ‘‘এত কিছুর পরেও সব চাপা পড়ে যাবে।”

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী  ও বিশ্বসিন্ধু দে

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৮ ০১:১৪
Share:

মৃত সুদীপ্ত ঘোষ।

ঘড়ির কাঁটা তখন সবে সাড়ে আটটার ঘর পেরিয়েছে। দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। কয়েকটি দোকানে খবরের কাগজ দিয়ে তৃণমূলের কার্যালয়ে ঢুকেছেন খবরের কাগজ বিক্রেতা চন্দন দাস। টেবিলে খবরের কাগজটা রেখে পিছন ঘুরতেই বিকট শব্দে কেঁপে উঠল দলীয় কার্যালয়। ছিটকে পড়লেন চন্দন। দলীয় কার্যালয়ের রান্নাঘরে তখন আর্তনাদ আর গোঙানির শব্দ। স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে গিয়ে দেখলেন, রান্নাঘরে পড়ে রয়েছেন পাঁচজন। কারও হাত উড়ে গিয়েছে। কারওবা পা। রক্তে ভেসে যাচ্ছে রান্নাঘর।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সকালে এ ভাবেই এক লহমায় বদলে গিয়েছিল মকরামপুর বাজারের ছবি। স্থানীয়েরা জানালেন, বিকট শব্দের পরই নাকে এসেছিল বারুদের ঝাঁঝাল গন্ধ। ধোঁয়ায় অন্ধকার চারপাশ। কিছুটা ধাতস্ত হয়ে তৃণমূল কার্যালয়ের রান্নাঘরে উঁকি মারতেই দেখা যায়, রক্তাক্ত ও সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছেন সুদীপ্ত ঘোষ (৩১) নামে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী। গুরুতর জখম অবস্থায় কাতরাচ্ছেন স্থানীয় জয়ন্ত দাস, চন্দন দাস, সুদীপ্ত ঘোষ, বিকাশ ভুঁইয়া, বিমল চৌধুরী ও খাকুড়দার স্বরূপ দাস। সকলকে প্রথমে মকরামপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরে মেদিনীপুর মেডিক্যালে পাঠানো হয়। সুদীপ্তকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। পরে ওড়িশার কটক নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হল বিমল চৌধুরী (৩৪) নামে আর একজনের। জখম চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিস্ফোরণে অ্যাসবেসটস ভেঙে আহত হয়েছেন কয়েকজন প়ড়শিও।

এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভাঙা অ্যাসবেসটস, জানলা, দরজার অংশ। কার্যালয়ে রান্নার সরঞ্জাম-সহ অন্য জিনিসপত্র দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। চারপাশে বারুদের গন্ধ। পাশেই থাকেন পঁচাত্তর বছরের বুলিবালা দোলাই। দুপুরেও আতঙ্কে কাঁপছিলেন তিনি। ওই বৃদ্ধা বলেন, ‘‘ঘর-দোর কেঁপে উঠল। বিকট আওয়াজে চোখের সামনে ভেঙে গেল দলীয় কার্যালয়ের দেওয়াল। উড়ে গেল ছাদ। এরকম এর আগে দেখিনি।’’ পাশের বাড়ির বিশ্বজিৎ দোলাই, কমলা হাজরা, শিবানী দোলাইরা তো প্রথমটায় ঠাওর করতে পারেননি কী হয়েছে। তাঁদের কথায়, ‘‘রান্না শুরু করেছিলাম। শব্দ শুনে ছুটে এসে দেখি ধোঁয়ায় ঢেকেছে আশপাশ। কোনও দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’

Advertisement

লন্ডভন্ড: মকরামপুরে বিস্ফোরণস্থলে পুলিশের তল্লাশি।

মকরামপুরে যে বিস্ফোরণই হয়েছে তা বোঝার পর অনেকেরই মনে পড়ছে পিংলার ব্রাহ্মণবাড়। ২০১৫ সালের ৬ মে রাতে এক তৃণমূল কর্মীর বাড়ি লাগোয়া কারখানায় বিস্ফোরণে ১৩ জনের মৃত্যু হয়। মৃতদের ন’জনই নাবালক। তারা ওই কারখানায় কাজ করত। ওই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিয়েবাড়ির বাজির তত্ত্ব দিয়েছিলেন। সেই তত্ত্বে মান্যতা দিয়েই পিংলা বিস্ফোরণে চার্জশিট দিয়েছিল সিআইডি। বছর তিনেক আগে মকরামপুরের অদূরে কোতাইগড়ে এক বাজি কারখানার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। এ দিনও বিস্ফোরণস্থলে গিয়েছে সিআইডি ও বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াড।

কীভাবে বিস্ফোরণ? এ দিনের ঘটনায় এখনও কিছু বলতে চায়নি পুলিশ। তবে কার্যালয়ের পাসে ভিড়ের মধ্যেই এক যুবককে ফিসফিস করে বলতে শোনা গেল, ‘‘এত কিছুর পরেও সব চাপা পড়ে যাবে।”

নিজস্ব চিত্র

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement