আতঙ্কে রেলশহরের মহিলারা

আঁধার মাঠে মদ্যপদের পোয়াবারো

এক সময় এই শহরে খেলে গিয়েছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতো ক্রিকেটার, সীতেশ দাসের মতো ফুটবলার। সেই খড়্গপুরেই এখন খেলার মাঠ আঁধারে ঢাকা।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৫৫
Share:

সন্ধে নামলেই অন্ধকার সঙ্ঘশ্রীর মাঠ (বাঁ দিকে)। বিএনআর মাঠে অবশ্য আলো বসেছে (ডান দিকে)। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ

এক সময় এই শহরে খেলে গিয়েছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতো ক্রিকেটার, সীতেশ দাসের মতো ফুটবলার। সেই খড়্গপুরেই এখন খেলার মাঠ আঁধারে ঢাকা।

Advertisement

শহরের মোড়ে মোড়ে উঁচু আলোকস্তম্ভ বসছে। অথচ শহরের বুকে ছড়িয়ে থাকা ছোট ছোট খেলার মাঠগুলিতে আলো নেই। সন্ধ্যা নামলেই সেখানে মদ্যপদের ভিড়, চলছে অসামাজিক কাজকর্মও। পরিস্থিতি এমন যে স্থানীয় বাসিন্দারাও চলাফেরা করতে পারেন না। মদ্যপদের চোখরাঙানি ও হেনস্থার ভয়ে কেউ সে ভাবে প্রতিবাদের সাহস পান না। তবে তারই মধ্যে মাঠে আলো জ্বালার ও গলিপথে পুলিশি টহলের দাবি উঠছে।

একসময় শহরের মাঠেই মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, ইস্টবেঙ্গলের প্রয়াত ফুটবলার সীতেশ দাস, প্রীতি ঘোষাল, প্রণব বসুর মতো খেলোয়াড়েরা দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। খেলাধুলোর সংস্কৃতি আজও বজায় আছে খড়্গরে। বিকেল নামলেই কচি-কাঁচারা পাড়ার মাঠে ক্রিকেট-ফুটবলে মেতে ওঠে। কিন্তু মাঠের যা দশা, তাতে খেলাধুলোর পরিবেশ আর থাকছে না।

Advertisement

শহরের ছোট মাঠগুলির মধ্যে সব থেকে করুণ দশা রেল এলাকার মধ্যে নিরিবিলি বলে পরিচিত সাউথ-ইস্ট ডেভেলপমেন্ট রেল কলোনির সঙ্ঘশ্রী ক্লাব সংলগ্ন ময়দান। বিকেলে এখানে রেল কলোনির খুদেরা খেলাধুলো করে। কিন্তু সন্ধে নামলেই পাল্টে যায় মাঠের চেহারা। স্থানীয়দের পাশাপাশি বহিরাগত কিছু যুবক মদ-বিয়ারের বোতল নিয়ে মাঠে ঢুকে পড়ে। ওই পথ দিয়েই যাতায়াত করেন রেলকর্মী তথা শহরের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কৃশানু আচার্য। তিনি বলছিলেন, “রোজ মাঠে মদের আসর বসে। সরতে বললেও কাজ হয় না। উল্টে কটূক্তি শুনতে হয়। তাই মুখ বুজে থাকি।’’ সঙ্ঘশ্রী ক্লাবের সদস্য রেলকর্মী শান্তুনু দত্ত আবার বলেন, “স্থানীয় যুবকদের একাংশের প্রশ্রয়ে এ সব বাড়। কমবয়সী ওই যুবকদের সঙ্গে আমরাও ঝামেলায় জড়াতে চাই না। আসলে আলো নেই। পুলিশও আসে না। ফলে, যা হওয়ার তাই হচ্ছে।’’

একই অবস্থা ইন্দার কৃষ্ণলাল শিক্ষা নিকেতনের মাঠেও। ইন্দার গলিপথে থাকা ওই মাঠে এক সময় সন্ধের পরে স্থানীয় মহিলারা গরমে হাওয়া খেতে যেতেন। সম্প্রতি ওই মাঠের অন্যপ্রান্তে থাকা ইন্দা বালিকা বিদ্যালয়ের পাঁচিল উঠে যাওয়ায় ঘুরপথে মাঠে যেতে হয়। ফলে, মহিলাদের আনাগোনা কমেছে। আর সেই সুযোগে আঁধারে ডুবে থাকা মাঠে এখন ভিড় জমাচ্ছে বহিরাগত ছেলে-ছোকরারা। দেদার মদের আসর জমছে। স্থানীয় বাসিন্দা মৌসুমী ত্রিপাঠী, অর্চনা প্রধান, মনিকা গঙ্গোপাধ্যায়েরা বলছিলেন, “ওই মাঠে আর সন্ধের পরে যাওয়া যায় না। পুলিশের কঠোর হওয়া উচিত। আর সেই সঙ্গে দরকার দ্রুত মাঠে আলোর ব্যবস্থা করা।’’

মাস আটেক ধরে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় উঁচু আলোকস্তম্ভ বসিয়েছে পুরসভা। বাদ নেই রেলের এলাকাও। বিএনআর ময়দান, তালবাগিচা হাসপাতাল মাঠ, ট্রাফিক ময়দানের মতো বড় মাঠের ধারে বাতিস্তম্ভ বসেছে। এর ফলে বদলেছে ওই মাঠগুলির পরিবেশ। একসময়ে এই বিএনআর, তালবাগিচা ময়দানে অন্ধকারে দুষ্কর্ম চলত। এখন আলো থাকায় সে সবে রাশ টানা গিয়েছে। কিন্তু শহরের গলিপথে থাকা ছোট মাঠগুলিতে বাড়ছে দুষ্কর্ম, মদ্যপদের আড্ডা।

শুধু এই মাঠগুলি নয়, আলোর অভাবে সুভাষপল্লির জনকল্যাণ সমিতি, ভবানীপুর মাঠপাড়া এলাকায় আকছার সমাজবিরোধী কার্যকলাপ চলছে। ঝাপেটাপুরের বুলবুলচটি এলাকায় আবার দেখা দিয়েছে নতুন সমস্যা। মহকুমা আদালত ভবন তৈরি হয়ে পড়ে থাকলেও চালু না হওয়ায় সেখানে মদের আসর বসছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ভোট মরসুমে কেন্দ্রীয় বাহিনী ওই ভবনে থাকায় পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। মীরপুর সংলগ্ন একটি ক্যানালেরও ধারেও মদ্যপরা নিয়মিত আসর জমাচ্ছে। স্থানীয় প্রৌঢ়া স্বপ্না মাইতি বলেন, “এলাকায় মদ্যপদের আনাগোনা বাড়ছে।
বাড়ির মেয়েরা পথে বেরনোর সাহস পাচ্ছে না। প্রশাসনের ভূমিকা কঠোর হওয়া উচিত।’’

যদিও এ সব অজানা বলে দাবি করেন খড়্গপুরের এসডিপিও কার্তিক মণ্ডল। তাঁর বক্তব্য, “গত কয়েকদিন নির্বাচনের জন্য আমরা ব্যস্ত ছিলাম। এমন অভিযোগ থাকলে নিশ্চয়ই ওই সব এলাকায় মোটরসাইকেলে পুলিশ বারবার টহল দেবে। আশা করছি এতে সমস্যার সমাধান হবে।’’ আর পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের বক্তব্য, ‘‘আমরা ক্ষমতায় এসেই বিভিন্ন জায়গায় আলো বসাচ্ছি। তবে এক সঙ্গে সর্বত্র আলো দেওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন