হাতসাফাই থেকে হাতের কাজে ফেরা 

পুলিশ ও প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর খানেক আগে একটি চুরির ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের দাউদপুরের বাসিন্দা হাসানুরজামানের। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৮ ০০:৩৯
Share:

হাসানুরজামান। নিজস্ব চিত্র

অনেকটা সিনেমার মতো! অভাবের সংসারে ছোট্ট থেকেই সে পা বাড়িয়েছিল অপরাধের জগতে। আইনি প্যাঁচে জড়িয়েছিল জীবন। কিন্তু বর্তমানে সেই বছর পনেরোর কিশোরই ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছে। ফিরতে চেয়েছে সমাজের মূল স্রোতে। আর তার ওই প্রচেষ্টায় পাশে দাড়িয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন।

Advertisement

পুলিশ ও প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর খানেক আগে একটি চুরির ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের দাউদপুরের বাসিন্দা হাসানুরজামানের। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে হলদিয়া মহকুমা আদালতের নির্দেশে ওই কিশোরের ঠাঁই হয়েছিল একটি হোমে। সেখানে কয়েক মাস থাকার পরে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে হাসানুরের।

সমাজ কল্যাণ দফতরেরে এক জেলা আধিকারিক বলেন, ‘‘সমাজের মূল স্রোত থেকে হাসানুরের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণগুলি অনুধাবন করা হয়। তারপর তার মানসিক পরিবর্তন লক্ষ্য করি। জুভেনাইল জাস্টিস আদালতই নির্দেশ দেয়, ওই ছেলেটিকে সমাজের মুল স্রোতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।’’ জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এর পরেই হাসানুরকে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তার জন্য নন্দীগ্রামে একটি নতুন বাড়িও বানিয়ে দেয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

Advertisement

শুক্রবার দাউদপুরে ওই কিশোরের বাবার হাতে ওই বাড়ির চাবি এবং হাসানুরের হাতে টেলারিং মেশিন তুলে দেওয়া হয়। স্থানীয় সূত্রের খবর, হাসানুরের বাবা শেখ রাজু লোকের ট্যাক্সি চালান। অভাবের সংসারে ছেলেকে পড়াতে পারেনি তিনি। ফলে নানা কুকাজে জড়িয়ে পড়েছিল সে।

এ দিন হাসানুরের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেন জেলাশাসক রশ্মি কমল। অনুষ্ঠানে ছিলেন নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবু তাহের, বিডিও সুব্রত মল্লিক-সহ প্রশাসনের অন্য আধিকারিক। মেশিন পেয়ে রীতিমত খুশি হাসানুর। সে বলে, ‘‘জীবন এভাবে বদলে যেতে পারে, তা কোনও দিন ভাবিনি। সৎ ভাবে বেঁচে থাকার উৎসাহ এর আগে কেউ দেয়নি।’’ তার বাবা বলেন, ‘‘মাথা উঁচু করে বাঁচতে কে না চায়। প্রশাসন আমাদের মত গরীবের পাশে দাঁড়ালে তা সম্ভব।’’

ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, আগামী তিন বছর হাসানুরকে মাসিক দু’হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। তার বাবাকে একটি ট্যাক্সি কিনে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

গোটা বিষয়ে জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘সকলকে নিয়ে সুন্দর সমাজ গড়ে তোলার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ আমরা। তাই হাসানুরের পাশে দাঁড়িয়েছি। এটা বাকিদের কাছে প্রেরণা হতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন