ভয়ে কাঁটা রেলশহর

রেলমাফিয়া রামবাবুর বাড়ি তাক করে গুলি

খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, “ঘটনার পিছনে ওরা নিজেরা বা ওদের কোনও গোষ্ঠী বিরোধ থাকতে পারে। আবার নতুন দুষ্কৃতী দল মাথাচাড়া দিতে পারে। আমরা সবটা খতিয়ে দেখছি।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৮ ০১:৫৫
Share:

বন্দি: মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে রামবাবু। ইনসেটে তার বাড়ির সামনে উদ্ধার হওয়া গুলির খোল। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

এক রেল মাফিয়া খুন হয়েছে। সেই খুনের মামলাতেই আরেক রেল মাফিয়ার জেলবন্দি। এমন অবস্থায় বোমা-গুলির শব্দ কমে এসেছিল রেলশহর খড়্গপুরে। শুক্রবার সকালে ফের শহরবাসীর কানে বাজল সেই চেনা গুলির শব্দ। গুলি চলল খড়্গপুরের এক সময়ের ‘ডন’ বাসব রামবাবুর বাড়ির সামনেই। উদ্ধার হল বুলেটের খোল।

Advertisement

এ দিন সাতসকালে গুলির শব্দে জেগে ওঠে খড়্গপুরের মালঞ্চ রোডের বিবেকানন্দ পল্লির মোড়। সেখানেই তিনতলা পেল্লায় বাড়ি রেলমাফিয়া বাসব রামবাবুর। সেই বাড়িকে নিশানা করেই সকাল পৌঁনে সাতটা নাগাদ শূন্যে দু’রাউন্ড গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ। রেলমাফিয়া শ্রীনু নায়ডু খুনে গ্রেফতার হয়ে এই মুহূর্তে রামবাবু জেলে। ঘটনার সময় তার স্ত্রী বি স্বাতী বাড়িতে ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তবে পরে বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। দরজা খুলে অজিত শর্মা নামে এক যুবক বলেন, “বৌদি মেদিনীপুরে দাদার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন। সকালে আমরা কর্মীরা ভিতরেই বসেছিলাম। গেট ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। ফাঁক দিয়ে দেখলাম দু’টি বাইকে কয়েকজন যুবক এল। একজন নেমে শূন্যে গুলি চালাল। স্টিল রঙের সিক্সার পিস্তল ছিল।”

ঘটনা নিয়ে ধন্দে পুলিশও। পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে রামবাবু-সহ পাঁচজনের জামিন বাতিল হয়েছে। তাই বিপদ বুঝিয়ে জামিন পেতে রামবাবুর অনুগামীরা নিজেরাই এমন ছক কষেছে কিনা তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, “ঘটনার পিছনে ওরা নিজেরা বা ওদের কোনও গোষ্ঠী বিরোধ থাকতে পারে। আবার নতুন দুষ্কৃতী দল মাথাচাড়া দিতে পারে। আমরা সবটা খতিয়ে দেখছি।”

Advertisement

চিকিৎসার জন্য এ দিন মেদিনীপুর মেডিক্যালে আনা হয়েছিল জেলবন্দি রামবাবুকে। তবে গুলি চলা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁর দাবি, ‘‘এ ব্যাপারে কিছু শুনিনি।’’ তদন্তে নেমে রামবাবুর বাড়ির উল্টোদিকের একটি নার্সিংহোমের সিসিটিভি ফুটেজ হাতে এসেছে পুলিশের। তবে সেই ফুটেজে দুষ্কৃতীদের মুখ স্পষ্ট নয় বলে পুলিশের দাবি। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, “সকালে দু’টি বাইকে চারজন এসে শূন্যে দু’রাউন্ড গুলি চালিয়েছে। আমরা দু’টি বুলেটের খোল উদ্ধার করেছি। তদন্ত চলছে।”

ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনীতিও। বিজেপিকে দুষে তৃণমূলের শহর সভাপতি রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “শহর অশান্ত করতে একটি রাজনৈতিক দল গত কয়েকমাস ধরেই বাইরে থেকে দুষ্কৃতী আমদানি করছে। এই গুলি সেই অস্থিরতা তৈরির একটা চেষ্টা হতে পারে।” তৃণমূলের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারেরও বক্তব্য, “দেড় বছর শহর একেবারে শান্ত ছিল। শহরের বিধায়ক শহরে এসে মাঝেমধ্যেই উস্কানিমূলক কথা বলেন। দুষ্কৃতীরা তাতে উৎসাহিত হয়ে এই কাজ করতে পারে।” বিজেপি বিধায়ক দিলীপ ঘোষ ফোন ফোন ধরেননি। এসএমএসের জবাব দেননি। তবে বিজেপির রাজ্য নেতা তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রামবাবু বা শ্রীনু নায়ডু কোন দলের লোক তা ২০১৫ সালের পুরভোটে প্রমাণ হয়েছিল। গুন্ডা নিয়ে রাজনীতি সারা বাংলার সঙ্গে খড়্গপুরেও তৃণমূলই করছে। এই ঘটনাতেও নিশ্চয়ই ওদের গোষ্ঠী রাজনীতি জড়িত।’’

২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি শ্রীনু নায়ডু খুনের গ্রেফতার হয় রামবাবু। তার পর থেকে শান্তই ছিল রেলশহর। মাঝে গত অক্টোবরে শুধু কুমোরপাড়ায় প্রকাশ যাদব নামে বছর তেইশের এক যুবকের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার হয়। পাশে পড়েছিল পিস্তল। প্রকাশ এক সময় শ্রীনু ‘ঘনিষ্ঠ’ দীপঙ্কর শুক্লের বন্ধু ছিল বলে জানা যায়। সেই ঘটনার কিনারা হয়নি এখনও। তবে আবার গুলি চলায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। রামবাবুর বাড়ির অদূরেই বিবেকানন্দ পল্লি ক্লাবের সদস্য স্থানীয় ব্যবসায়ী অমিত হালদার বলেন, “গত কয়েকমাস আমরা নিশ্চিন্তে ছিলাম। কিন্তু পাড়ার কাছে গুলি চলায় আবারও ভয় পাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন