গড়বেতার বাজারে ভরদুপুরে দোকানের মধ্যে ব্যবসায়ী খুনের ঘটনার দশ দিন পর পুলিশ গ্রেফতার করেছে দু’জনকে। প্রথম দিকে স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠন জোরালো ভাবে দাবি করেছিল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীরা ধরা না-পড়লে তাঁরা বন্ধের পথে হাঁটবেন। কিন্তু তাঁদের সেই অবস্থান এখন অনেকটাই শিথিল। বরং স্থানীয় দুই ব্যবসায়ীকে পুলিশ গ্রেফতার করায় আতঙ্ক বেড়েছে। বাড়ছে ক্ষোভও।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কেউ কেউ বলছেন, ছোটখাটো চুরি, ছিনতাইয়ে ধরা পড়লেও জেলা পুলিশ সুপার সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন, ১৫-২০ কিলোমিটার দূরের থানা থেকে ধৃতদের মেদিনীপুরে তুলে আনা হয় সাংবাদিকদের জন্য। কিন্তু এতবড় একটা খুনের ঘটনায় পুলিশের মুখে কুলুপ। কেন? দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পরে পুলিশ যাঁদের গ্রেফতার করেছে তাঁরা সত্যনারায়ণ মোড় বাজারেরই ছোট ব্যবসায়ী। মঙ্গল কুণ্ডু নিহত অমল দত্তর দোকানের পাশেই চা, পান, ঠান্ডা পানীয়ের দোকান চালান। তারই পাশে ঘুগনি, চপের দোকান চালান অশোক কুণ্ডু। মঙ্গল প্রথম থেকেই পুলিশের নিশানায় ছিলেন। তাঁকে আটক করে বেশ কয়েকবার জেরা করা হয়েছে, কিন্তু অশোককে একবারই থানায় ডাকা হয়েছিল। অথচ আজও উদ্ধার করা যায়নি খুনে ব্যবহার হওয়া অস্ত্র বা খোয়া যাওয়া সোনার গয়না।
পুলিশের দাবি, সে দিন অমল দত্তকে দোকানে ডেকে এনেছিলেন যে ক্রেতা, তাঁকে ঠান্ডা পানীয় খাইয়েছিলেন অমলবাবু। সেই ঠান্ডা পানীয় গিয়েছিল মঙ্গলের দোকান থেকেই। কিন্তু প্রথম দিকে তা অস্বীকার করেছিলেন মঙ্গল। পরে অবশ্য তিনি স্বীকার করে নেন ঠান্ডা পানীয় দেওয়ার পরে দু’জন লোককে খালি গায়ে দোকান থেকে বেরিয়ে যেতেও দেখেছেন বলে। কিন্তু অশোক কুণ্ডুকে গ্রেফতারের কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি পুলিশ।
স্থানীয়রা অনেকেই বলছেন অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ছে পুলিশ। পুরোন শত্রুতা জেরে খুন, এমনকী তাতে আন্তঃরাজ্য যোগের কথাও এর আগে জানা গিয়েছিল পুলিশ সূত্রে। কিন্তু তদন্তে সাফল্য মেলেনি। গড়বেতা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সম্পাদক তাপস চন্দ্রের কথায়, “এই ঘটনায় আমাদেরই বিড়ম্বনা বাড়ছে। দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, প্রায়ই বিভিন্ন সোনার ব্যবসায়ীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? পুলিশ শুধু বলে যাচ্ছে, তদন্তে সহযোগিতা করুন। তাতে লাভ কী হচ্ছে!”
সংগঠনের জেলা সভাপতি উদয়রঞ্জন পাল বলেন, “কেউ কোনও ঘটনায় জড়িত থাকলে নিশ্চয় পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু তদন্তের গতিপ্রকৃতি দেখে পুলিশের সক্রিয়তা নিয়ে আমাদের মনেই প্রশ্ন থাকছে। আমাদের দাবি, তদন্তের নামে ব্যবসায়ীদের যাতে অকারণ হেনস্থা করা না হয়।’’ তবে এ বিষয়ে এখনি আন্দোলনের পথে হাঁটতে রাজি নন ব্যবসায়ীরা। তাপসবাবু জানান, পুলিশের আবেদনে তাঁরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
পুলিশের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট অমলবাবুর পরিবারও। তাঁর দাদা শ্যামল দত্ত বলেন, “আমাদের মনে হয়, পুলিশই ঘটনা সম্বন্ধে এখনও অন্ধকারে। আমরাও দিশেহারা। পাশের দোকানদারদের কেনও গ্রেফতার করল, তারা জড়িত কিনা, এ বিষয়ে পুলিশও কিছু বলতে পারছে না। তবে আমরা চাই খুনিদের কঠোর সাজা হোক।’’
অমলবাবুর কাকা স্বপন দত্তেরও সন্দেহ, জানাশোনা কেউ ঘটনায় জড়িত। তাঁর কথায়, ‘‘কিছু জানতে চাইলেই পুলিশ শুধু বলছে, ধৈর্য ধরুন। দ্রুত কিনারা হয়ে যাবে। ঘটনার তদন্ত আরও দ্রুত হলে ভাল হয়।’’ শুক্রবার রাতে নিহত অমল দত্তের বাড়িতে যান গড়বেতার বিধায়ক আশিস চক্রবর্তী। সাহায্যেরও আশ্বাস দেন তাঁর পরিবারকে। তিনি বলেন, “পুলিশি তদন্তে আমাদের হস্তক্ষেপ ঠিক নয়। এ ব্যাপারে পুলিশকে সহযোগিতার কথাই বলেছি। আশা করি, পুলিশ দ্রুত খুনের কিনারা করতে সক্ষম হবে।’’