এই বাড়িই ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।
সরকারি জমি দখল করে উঠেছিল ‘সবার জন্য বাড়ি’-প্রকল্পের ঘর। চন্দ্রকোনা পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নতুনহাটে সরকারি প্রকল্পে ওই বাড়ি তৈরি নিয়ে গোড়া থেকেই চলছিল বিতর্ক। তবে নির্মাণ বন্ধ হয়নি। শেষমেশ ওই বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ফেলারই নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। হাইকোর্টের আইনজীবী বিশ্বজিৎ দে বলেন, ‘‘গত ৮ অগস্ট বিচারপতি দেবাংশু ভৌমিক চার সপ্তাহের মধ্যে ওই নির্মাণ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশের কপি সংশ্লিষ্ট সব দফতরে পাঠানো হয়েছে।’’
ষাটের দশক থেকে সেচ ও নিকাশির জন্য চন্দ্রকোনায় কংসাবতী প্রকল্পের একটি ক্যানাল আছে। বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে বেরিয়ে ওই ক্যানাল আমলাগোড়া, গড়বেতা হয়ে চন্দ্রকোনায় ঢুকেছে। ক্যানাল তৈরির সময় সেচ দফতর চন্দ্রকোনায় জমি অধিগ্রহণ করেছিল। নতুনহাটের বাসিন্দা তাপস লাহার পরিবার তখন জমি দিয়েছিলেন। অধিগৃহীত জমিতেই ক্যানাল তৈরি হয়েছিল। ফি বছর বোরো মরসুমে কংসাবতী ব্যারাজ থেকে জল ছাড়া হয়। সেই জল ক্যানাল দিয়ে চন্দ্রকোনায় ঢোকে। চাষিরা প্রয়োজনমতো জল ব্যবহার করেন। বৃষ্টির জলও ওই ক্যানালের মাধ্যমে ফাঁকা মাঠে গিয়ে পড়ে। এককথায় চন্দ্রকোনা শহরে সেচ ও নিকাশির অন্যতম মাধ্যম হল এই ক্যানাল।
সম্প্রতি চন্দ্রকোনা শহরের নতুনহাটের বাসিন্দা লক্ষ্মীরানি মণ্ডল পুরসভার সবার জন্য বাড়ি প্রকল্পে ঘর তৈরি জন্য টাকা পান। লক্ষ্মীরানি পুরসভায় নকশা দেন। পুরসভা তা অনুমোদন করে। বাড়ি তৈরি শুরু হয়। অভিযোগ ছিল, লক্ষ্মীরানি সেচ দফতরের জমি দখল করেই ঘর বানাচ্ছিলেন। ক্যানাল ভরাট করে তৈরি হচ্ছিল বাড়ি। জমি দাতা তাপস লাহা আপত্তি করেন। তবে সেচ দফতর, পুরসভা, চন্দ্রকোনা থানা— সর্বত্র লিখিত অভিযোগ জানানো হলেও নির্মাণকাজ বন্ধ হয়নি। শেষে তাপস ও তাঁর পরিজনেরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। গত ৮ অগস্ট হাইকোর্ট ওই নির্মাণ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। সেচ দফতরের এক পদস্থ বাস্তুকার জানান, তাঁদের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই বাড়ি তৈরি করা হচ্ছিল। তাপস বলেন, “জনস্বার্থে ওই জমি সরকারকে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে কেউ বাড়ি করবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। তাই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ছিলাম।’’
কিন্তু সরকারি জমিকে ক্যানাল বুজিয়ে বাড়ি তৈরির অনুমোদন দেওয়া হল কী ভাবে?
চন্দ্রকোনার পুরপ্রধান অরূপ ধাড়ার দাবি, “আমাদের অন্য জমি দেখানো হয়েছিল। বিষয়টি জানতে পেরেই টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। হাইকোর্টের নির্দেশ মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” আর লক্ষ্মীরানির বক্তব্য, “আমার নিজস্ব জমি নেই। তাই সরকারি জমির উপরই বাড়ি তৈরি করছিলাম। ভুল হয়েছিল।’’