বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া বুড়ো আঙুলকে ফের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া। শ্বাসনালী কেটে যাওয়া এক ব্যক্তির শ্বাসনালী জুড়ে প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়া। খাদ্যনালীতে আটকে যাওয়া জ্যান্ত কইমাছ অস্ত্রোপচার করে এক যুবককে বাঁচানোর মতো ঘটনায় ইতিমধ্যেই জেলার সরকারি হাসপাতালগুলির মধ্যে সাড়া ফেলেছে ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। মঙ্গলবার ফের আর একটি জটিল অস্ত্রোপচার করে ৬ বছরে একটি শিশুকে সুস্থ করলেন হাসপাতালের এক চিকিৎসক।
শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজার সময় বাড়ির উঠোনে বন্ধুদের সঙ্গে খুনসুটি করছিল ৬ বছরের শুভম দাস। হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে আচমকাই মুখের টুথব্রাশ সহ মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে শুভম। ব্রাশটি শুভমের মুখের ভিতর গেঁথে যায়। প্রবল রক্ত ক্ষরণ হতে থাকে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে নিয়ে ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ছোটেন পরিবারের লোকেরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ভর্তির সময়েও শুভমের মুখ থেকে খুব রক্ত ক্ষরণ হচ্ছিল। তাকে পরীক্ষা করে সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন শল্য চিকিৎসক গৈরিক মাজি। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় অন্যত্র। অস্ত্রোপচারের আগে শুভমকে অজ্ঞান করার প্রক্রিয়াটি বেশ ঝুঁকির ছিল। কারণ, মুখের ভিতরে সমানে রক্ত ক্ষরণ হতে থাকায় অজ্ঞান অবস্থায় রক্ত ও মুখের লালা শ্বাসনালীতে চলে গিয়ে বিপত্তি ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তাই খুব সতর্ক ভাবে শুভমকে অজ্ঞান করা হয়। অস্ত্রোপচারের সময় তাকে সমানে পর্যবেক্ষণ করেন অ্যানাস্থেটিস্ট চিকিৎসক প্রসূন ঘোষ। ঘণ্টাখানেক ধরে চলে অস্ত্রোপচার। শুভমের মুখমণ্ডলের স্নায়ুগুলিকে বাঁচিয়ে অস্ত্রোপচার করেন শল্য চিকিৎসক গৈরিক মাজি। শেষ পর্যন্ত মুখের ভিতর থেকে টুথব্রাশটি বের করতে সক্ষম হন চিকিৎসক। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, অস্ত্রোপচারের পর শুভম বিপদমুক্ত।
হাসপাতালের সুপার মলয় আদক বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারটি চ্যালেঞ্জের ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। দুই চিকিৎসককে ধন্যবাদ।’’ প্রসঙ্গত, এর আগে এক ব্যক্তির কাটা বুড়ো আঙুল অস্ত্রোপচার করে জোড়া লাগিয়েছিলেন গৈরিকবাবু। এ দিন ছেলের বিপদ কেটে গেলে শুভমের বাবা পরিবহণকর্মী সত্য দাস ও মা তুলসীদেবী বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে এসে এমন পরিষেবা পাব, ভাবিনি।’’