আজ মাদক বিরোধী দিবস

নেশার জালে বিপন্ন শৈশব

মেদিনীপুরের এক নেশামুক্তি এবং পুনর্বাসন কেন্দ্রের অধিকর্তা নন্দিতা বসু জানালেন, তাঁদের কেন্দ্রে যে ৯৫জন এখন ভর্তি রয়েছে, তার মধ্যে বেশ কয়েকজনই অল্পবয়সী। এদের কয়েকজন যেমন মেধাবী পড়ুয়া, তেমনই কয়েকজনের অক্ষর পরিচয়টুকুও হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৭ ১২:৫০
Share:

বছর ঘুরে ফের হাজির মাদক বিরোধী দিবস। আজ, সোমবার এই দিনটিতে নানা কর্মসূচি হবে। বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হবে শিশু-কিশোরদের সচেতনতায়। কারণ, মাদকের জালে বিপন্ন শৈশব-কৈশোরই এখন সব থেকে বড় ভাবনা।

Advertisement

আজ মাদক-সচেতনতায় পদযাত্রা, সচেতনতা সভা করবে মেদিনীপুরের স্কুল ‘রয়্যাল অ্যাকাডেমি’। স্কুলের পড়ুয়ারাই এই কর্মসূচিতে যোগ দেবে। স্কুলের অধ্যক্ষ সত্যব্রত দোলই মানছেন, ‘‘এখন অল্পবয়সীরাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এটা উদ্বেগের। সচেতনতা না বাড়লে এই প্রবণতা ঠেকানো যাবে না।’’ মেদিনীপুরের রাঙামাটি হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা কলেজিয়েট স্কুলের (বালক) শিক্ষক মধুসূদন গাঁতাইতও বলছিলেন, “মাদকের জন্য শৈশব হারিয়ে গেলে তার চেয়ে দুর্ভাগ্যের কিছু হয় না। শৈশব সুরক্ষায় তাই সচেতনতা বাড়ানো উচিত।’’

মেদিনীপুরের এক নেশামুক্তি এবং পুনর্বাসন কেন্দ্রের অধিকর্তা নন্দিতা বসু জানালেন, তাঁদের কেন্দ্রে যে ৯৫জন এখন ভর্তি রয়েছে, তার মধ্যে বেশ কয়েকজনই অল্পবয়সী। এদের কয়েকজন যেমন মেধাবী পড়ুয়া, তেমনই কয়েকজনের অক্ষর পরিচয়টুকুও হয়নি। নন্দিতাদেবীর কথায়, “মাদকাসক্তদের মধ্যে কয়েকজনের বয়স খুবই অল্প। এটা সত্যিই চিন্তার।’’

Advertisement

প্রতি বছরই মাদক বিরোধী দিবসে নানা কর্মসূচি হয় পশ্চিম মেদিনীপুরে। আজ, সোমবারও জেলা জুড়ে দিনটি পালিত হবে। কিন্তু প্রদীপের নীচেই যে অন্ধকার! শহর থেকে গ্রাম, সন্ধে নামলেই বিভিন্ন এলাকায় মাদকের কারবার শুরু হয়। দিনেদুপুরেও মাদক-পুরিয়ার হাতবদল হয়। মাদক কারবারিরা ১৫০- ২০০ টাকায় নিয়ে একটি পুরিয়া কিনে এনে মেদিনীপুর শহরে ৪০০-৪৫০ টাকায় বিক্রি করে।

আগে শহরে মাদকের কারবার চলত লুকিয়ে-চুরিয়ে। এখন অবশ্য দিনে- দুপুরে গাঁজার ঠেক বসে। দিন ঢললে প্রকাশ্যে চলে মদ্যপান। শুধু মদ-গাঁজা নয়, হেরোইন, চরস, ব্রাউন সুগারের মতো মারণ মাদকও এখন ঢুকে পড়ছে মেদিনীপুরে। আর তার শিকার হচ্ছে অল্পবয়সীরা। খোদ পুলিশেরই এক সূত্রে খবর, গত কয়েক মাসে মাদকদ্রব্য-সহ যাদের পাকড়াও করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অল্পবয়সীরাও রয়েছে। মাদকাসক্তদের একাংশ আবার চুরি, ছিনতাইয়ের মতো ছোট-বড় ৭০-৮০ শতাংশ অপরাধমূলক ঘটনায় জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মেদিনীপুরের মাদকের এই রমরমার জন্য একাংশ শহরবাসী পুলিশকেই দায়ী করছেন। তাঁদের অভিযোগ, মাদক কারবারের খুঁটিনাটি জেনেও পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে থাকে। পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ মানতে নারাজ। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “সারা বছর রুটিন নজরদারি থাকে। নির্দিষ্ট খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’ একই সঙ্গে তিনি মানছেন, “ইতিউতি হয়তো কিছু সমস্যা রয়েছে। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করাও কঠিন। কারণ, মাদক নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যাপারে কিছু খামতি রয়েছে।’’ আগামী দিনে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে আরও বেশি ব্যবহার করে সচেতনতামূলক প্রচার চালানোর চেষ্টা হবে বলে আশ্বাস ওই পুলিশ কর্তার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন