অর্থাভাবে মন্দির সংস্কারের কাজ থমকে পাথরায়। নিজস্ব চিত্র
খাতায়-কলমে পঞ্চায়েত এলাকা। অথচ দেখতে একেবারে শহর। মেদিনীপুর-খড়্গপুর শহর ঘেঁষা এমন অনেক এলাকার উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এমকেডিএ)-এর এলাকা পুনর্বিন্যাস না হওয়ায়।
যেমন, খড়্গপুর গ্রামীণের মাদপুর, মেদিনীপুর গ্রামীণের পাথরা এমকেডিএ-র অধীনে নয়। ফলে, এই দুই এলাকার উন্নয়নে এমকেডিএ আর্থিক সহায়তা করতে পারে না। অথচ, এই সব এলাকার বেশ কিছু রাস্তা সংস্কারের প্রয়োজন। মন্দিরময় পাথরা পর্ষদের অধীনে এলে এই এলাকার আরও উন্নয়ন সম্ভব হত। মন্দিরগুলো যিনি রক্ষণাবেক্ষণ করেন, সেই ইয়াসিন পাঠান বলছেন, ‘‘আগেই পাথরাকে এমকেডিএ-র মধ্যে নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছিলাম। কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে এখনও কিছু হয়নি। আবার দাবি জানাব।’’ জেলা পরিষদের দলনেতা তথা মাদপুরের বাসিন্দা অজিত মাইতি বলেন, ‘‘মাদপুরকে পর্ষদের মধ্যে রাখার আবেদন আগেই জানানো হয়েছে। এটা হলে ভাল হবে। এলাকার আরও উন্নয়ন হবে।’’
বছর তিনেক আগে এলাকা পুনর্বিন্যাসে উদ্যোগী হয়েছিলেন মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এমকেডিএ) কর্তৃপক্ষ। ২০১৩ সালে পর্ষদের অনুষ্ঠানে মেদিনীপুরে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এলে বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন এমকেডিএ-র চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি। পুরমন্ত্রীও জানিয়ে দেন, পর্ষদের এলাকা বাড়ানোর বিষয়টি দেখা হচ্ছে। অবশ্য তা এখনও কার্যকর হয়নি। মৃগেনবাবু অবশ্য জানাচ্ছেন, এলাকা পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি এ বার তিনি গুরুত্ব দিয়েই দেখবেন। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক পরিকল্পনা যাতে দ্রুত কার্যকর হয়, সেই চেষ্টা করবেন। সেই সঙ্গে পর্ষদের বার্ষিক বাজেট বৃদ্ধির ব্যাপারেও তিনি উদ্যোগী হবেন বলে জানান মৃগেনবাবু। তাঁর কথায়, “বাজেট আরও বাড়ানো হলে ভাল হয়। কাজের পরিধি বাড়ে।’’
এমকেডিএ-র জন্ম ২০০৪ সালে। তার আগে-পরে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় এই ধরনের যে সব পর্ষদ গড়ে উঠেছে, ইতিমধ্যে তাদের অনেকেরই এলাকা পুনর্বিন্যাস হয়েছে। কিন্তু কাঁসাইয়ের দুই তীরের দুই শহর মেদিনীপুর-খড়্গপুর এবং তার আশপাশের ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা এমকেডিএ-র এলাকা একই রয়ে গিয়েছে। মেদিনীপুর-খড়্গপুর, এই দুই শহরের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রয়েছে পর্ষদের। ইতিমধ্যে পর্ষদের উদ্যোগে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা নতুন করে তৈরি হয়েছে। গড়ে উঠেছে শৌচাগার, যাত্রী প্রতীক্ষালয়। সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পও হয়েছে। ইতিমধ্যে মেদিনীপুরে গড়ে উঠেছে ‘স্বাগত তোরণ’। খড়্গপুরেও এই তোরণ তৈরি হবে।
দুই পুরসভা এলাকা ছাড়া মেদিনীপুর সদর, শালবনি, খড়্গপুর-১ ও ২, এই চারটি ব্লকের ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে উন্নয়ন পর্ষদের পরিকল্পনা এলাকার আওতায়। ২০০৪ সালে এই এলাকাগুলো নিয়ে পর্ষদ তৈরি হয়। তারপর আর এলাকা পুনর্বিন্যাস হয়নি। যদি কয়েক বছর আগে এলাকা পুনর্বিন্যাসের দাবি সামনে এসেছিল। পরিস্থিতি দেখে ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সেই আলোচনা শুরু করেন পর্ষদ কর্তৃপক্ষ। অবশ্য এটা ছিল একেবারেই প্রাথমিক আলোচনা। পর্ষদ সূত্রে খবর, ঠিক হয়েছিল, ওই ব্লকগুলোর পাশাপাশি আরও কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত পরিকল্পনা এলাকায় নিয়ে আসা হবে। ঠিক কোন কোন এলাকা পর্ষদের আওতায় আসতে পারে, সেই নিয়েই প্রাথমিক আলোচনা হয়। ঠিক হয়, পরে চূড়ান্ত আলোচনা করে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অবশ্য মাসের পর মাস ঘুরেছে। চূড়ান্ত আলোচনা আর হয়নি। সেই সময়ে খড়্গপুর- ২ ব্লকের মাদপুরকে পর্ষদের এলাকার আওতায় নিয়ে আসার দাবি উঠেছিল।
মেদিনীপুর-খড়্গপুর, দুই শহরেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জনসংখ্যা। নতুন নতুন বসতি গড়ে উঠছে। বাড়ছে পরিষেবার প্রত্যাশা। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, এমকেডিএ-র মধ্যে যে সব এলাকা রয়েছে, ২০০১ সালে সেই সব এলাকার জনসংখ্যা ছিল ৭ লক্ষ ২০ হাজার। ২০১১ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৮ লক্ষ ৭০ হাজার। বৃদ্ধির হার একই রকম থাকলে ২০২১ সালে এই জনসংখ্যা পৌঁছবে ৯ লক্ষ ২০ হাজার-এ। পর্ষদ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এ জন্যই এলাকা পুনর্বিন্যাসের আগে সব দিক খতিয়ে দেখা জরুরি।