মহাজোটের হ্যাট্রিক হয়েছে এ বার পুরভোটে। কিন্তু সত্যিই কি সেই মহাজোট বোর্ড গঠন করবে এ বারও, নাকি পাশা পাল্টাবে— রামজীবনপুরে এখন এটাই প্রশ্ন। ২০০৫ সাল থেকে পর পর তিনবার মহাজোট গড়ে বোর্ড দখলে রেখেছিল শাসক বিরোধী দল গুলি। এ বারও সেই জোটই হয়েছিল, তবে স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে বাদ পড়েছিল এতদিনের হোতা তৃণমূল। বরং বাম, বিজেপি, কংগ্রেস তৃণমূলের বিরুদ্ধেই লড়েছে জোট গড়ে। সঙ্গে ছিল বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের সমর্থনও।
১১ আসনের পুরসভায় জোটের হয়ে নির্দল দখল করেছে ৪টি ওয়ার্ড, বিজেপি ২টি এবং তৃণমূল ৫টি। ফলে একক ভাবে ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে পারেনি মহাজোটও। তবে বিজেপি-র দুই কাউন্সিলরের সমর্থন নিয়ে মহাজোটের পক্ষেই চলে গিয়েছে পুরবোর্ড।
তবে হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয় তৃণমূলও। তাদের রয়েছে পাঁচটি আসন। ফলে নির্দল কাউন্সিলরদের একজনকে ভাঙিয়ে আনতে পারলেই কেল্লা ফতে। দশ বছর পর রামজীবনপুর হাতছাড়া হবে মহাজোটের, পাশাপাশি এ বারও নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পারবে তৃণমূল। এ নিয়ে মঙ্গলবার রাত থেকেই জনপদে চলছে জোর জল্পনা।
নাম গোপন রাখার শর্তে তৃণমূলের এক জেলা নেতার স্পষ্ট জানালেন, ‘‘আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য। যে কোনও একজন কাউন্সিলরকে দলে নিয়ে ফের পুরসভা দখল করা এবং শহরের উন্নয়ন করা।”
এ বিষয়ে দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়েরও ইতিবাচক ইঙ্গিতই দিয়েছেন, ‘‘আমাদের দলে কেউ আসতে চাইলে নেব না কেন? দলের নিয়ম মেনে এবং তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ না থাকলে দলে যোগ দিতেই পারেন কেউ।”
শাসক দলের ওই কৌশল ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে। সূত্রের খবর, যে চারজন মহাজোট প্রার্থী জয়ী হয়েছেন তাঁদের একজনকে ভাঙালে দলত্যাগ বিরোধী আইনের আওতায় পড়বেন না সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর। তৃণমূলের এক নেতা জানালেন, দলের ফল কেন খারাপ হল তা পরে বিশ্লেষণ করে দেখা হবে। প্রয়োজনে বিদায়ী বোর্ডের সব সদস্য এবং স্থানীয় নেতাদের শো-কজ করতে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য নেতৃত্ব। কিন্তু তাঁর কথায়, “এখন আমরা যাতে বোর্ডটা ধরে রাখতে পারি, যাতে দলের মান রক্ষা হয় তার চেষ্টা চলছে।”
সূত্রের খবর, শাসক দল চার নির্দল কাউন্সিলরের মধ্যে যে কোনও একজনকে পেতে মরিয়া। প্রায় সব স্তরের নেতাই যে যার মতো করে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরদের কাছে গিয়ে তৃণমূলকে সমর্থন করার আর্জি জানাচ্ছেন। বিনিময়ে পুরবোর্ডে গুরুত্বপূর্ণ পদ তো বটেই, এমনকী যা আবদার করবেন তা-ই রাখার আশ্বাস দিচ্ছে তৃণমূল।
তৃণমূল শিবিরের খবর অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত দু’জন নির্দল কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা রাজিও হয়েছেন। তৃণমূলের দাবি ওই কাউন্সিলরার অর্থের বিনিময়ে বা অন্য প্রলোভনে নয় এলাকার উন্নয়নের স্বার্থেই রাজি হয়েছেন। সুতরাং বোর্ড গঠন সময়ের অপেক্ষা।
তৃণমূলের এই দাবি যে সত্যি তার প্রমাণ মিলল এক নির্দল কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ ব্যাক্তির সঙ্গে কথা বলে। তাঁর সতর্ক বক্তব্য, “আমরা চাই এলাকার উন্নয়ন। যদি সমর্থন করে শহরের উন্নয়ন করা যায় তবে দোষ কোথায়? রাজ্যে তো এখনও রাজ্যে তৃণমূলই ক্ষমতায়। মহাজোট বোর্ড গঠন করলে এই পুরসভায় উন্নয়নের জন্য টাকা বরাদ্দ যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাই ভাবছি-কী করা যায়।”
এ দিকে মহাজোটের বিপদের দিনে প্রমাদ গুণছে বিজেপি-সহ অন্যান্য দলগুলিও। মহাজোটের পক্ষে গোপাল কোলে খানিকটা হতাশা নিয়েই বলেন, “আমরা এলাকার মানুষকে সঙ্গে নিয়েই এই জোট গড়েছিলাম। কেউ যদি চলে যায় তাঁকে তো আটকে রাখতে পারব না। মানুষ অবশ্য সবই জানতে পারবে।”
বিজেপির গোবিন্দ মুখোপাধ্যায় বলেন, “টাকা, গয়না থেকে চাকরি—সব রকম টোপ দিয়ে কাউন্সিলর ভাঙানোর খেলায় মেতেছে তৃণমূল। জন সমর্থন না পেয়ে শেষে এই ভাবে বোর্ড গঠনে মরিয়া তৃণমূল—এটা দেখেও আমাদের ভাল লাগছে।’’ গোবিন্দবাবু অবশ্য আত্মবিশ্বাসী, ‘‘কেউই ওই ফাঁদে পা দেবেন না। এটা আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।” সিপিএমও বেশ খানিকটা হতাশ। তাঁদের তরফে বিদ্যুৎ রায় বললেন, “কাউকেই কোনও ভাবে আটকানো যায় না। যদি কেউ চলে যেতে চান, তবে তাঁর বিচার মানুষই করবেন।”